কোপা আমেরিকার ফাইনাল। মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। উত্তেজনা স্বাভাবিক। ম্যাচে সেটা চোখেও পড়ল। তবে ডি মারিয়ার গোলে শেষ হাসি আজেন্টিনার। ১-০ গোলে ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছর পর আন্তজার্তিক শিরোপা জিতলেন আর্জেন্টিনা। সেই সাথে মেসির হাতে প্রথম কোন মেজর টুর্ণামেন্টের ট্রফি উঠলো।
খেলায় প্রথমার্ধ শেষে হতাশা নিয়েই ড্রেসিংরুমে ফিরতে হয়েছে নেইমারদের। আর ১-০ গোলের লিডে স্বস্তি নিয়ে ফিরেছেন মেসিরা।
ম্যাচের ২২ মিনিটে ডি পলের লং পাসে বুদ্ধিদীপ্ত ফিনিশিং করেন ডি মারিয়া। গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন জালে। উল্লাসে ফেটে পড়ে আর্জেন্টাইনরা। প্রথমার্ধের ওই গোল আর শোধ করতে পারেনি ব্রাজিল। ফলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় মেসির দল।
পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনেন সেলেসাও কোচ তিতে। ফ্রেডকে উঠিয়ে রবার্তো ফিরমিনোকে নামিয়ে আরও আক্রমণাত্মক খেলার আভাস দেয় স্বাগতিকরা। এই পরিবর্তনে আক্রমণে ধার বাড়ে তাদের। ৫২ মিনিটে জালে বল জড়ান রিচার্লিসন। কিন্তুরেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজালে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাতিল হয়ে যায় সে গোল। এর ২ মিনিট পর আবারও সুযোগ পেয়েছিলেন রিচার্লিসন। কিন্তু আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়নো মার্টিনেজের নৈপুণ্যে এ যাত্রায়ও গোল করতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। ৮৬ মিনিটে গেবির বুলেট গতির শট আটকে দেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
ম্যাচের শেষ পর্যন্ত দারুণ সব আক্রমণ শানালেও কোনো দলই গোল আদায় করতে পারেনি। ৮৮ মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ মিস করেন মেসি। অতিরিক্ত সময়েও লিড বাড়াতে আক্রমণ চালায় মেসিরা। কিন্তু আসেনি সফলতা। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলেই শিরোপা খরা কাটে আর্জেন্টিনার। জয়োল্লাস করে মাঠ ছাড়ে স্কালোনি শিষ্যরা।
একইসঙ্গে নিজের ক্যারিয়ারে প্রথম কোনো মেজর টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতলেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি।
এই একটা শিরোপার জন্য অপেক্ষাটা ২৮ বছরের। হ্যাঁ, ১৯৯৩ সালে কোপা আমেরিকার শিরোপা ঘরে তোলার পর আর্জেন্টিনার নেই কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা। বিশ্বকাপ আসত, আসত কোপা, চলেও যেত। কিন্তু আর্জেন্টিনার অপেক্ষাটা যেন ফুরাতো না। অবশেষে ২৮ বছর পর সেই অপেক্ষার অবসান হলো। লিওনেল মেসি অবশেষে হাত দিয়ে ছুঁতে পারলেন একটি আন্তর্জাতিক শিরোপা। ফুটবলের অপার এক রহস্যেরই যেন সমাধান হলো।
মেসি ২০১৪ বিশ্বকাপে দলকে ফাইনালে তুলেও পারেননি শিরোপা স্পর্শ করতে। এরপর দুটি কোপা– শিরোপার স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়েছে তাঁর। আর্জেন্টিনার জার্সিতে হাসতেই ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। আজ কোপা আমেরিকার আরেকটি আসরের শিরোপা জিতে সেই হাসিই ফিরে এল তাঁর মুখে। সমর্থকেরা অপার আনন্দ নিয়ে উপভোগ করল দৃশ্যটা।
লিওনেল মেসির কোপা আমেরিকা শিরোপা জয়ের স্বপ্নের শুরু ২০০৭ সালে। সেবার দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে মর্যাদাকর এ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল ব্রাজিল। কিন্তু তরুণ মেসির ট্রফি জয়ের স্বপ্ন গুড়িয়ে দিয়েছিল সেলেসাও শিবির।
পরে ২০১৫ ও ২০১৬ টানা দুবার হতাশ হতে হয় আর্জেন্টাইন এ ফুটবল জাদুকরকে। মেসির দল দু’বারই ফাইনালে এসে শিরোপা হাতছাড়া করে চিলির কাছে।
মেসির জীবনে সবচেয়ে বড় কষ্ট সম্ভবত ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ। ওই বিশ্বকাপে আন্তর্জাতিক ট্রফি হাতছানি দিয়েছিল আর্জেন্টাইনদের। কিন্তু মারাকানার ফাইনালে আকাশী নীল শিবিরের হৃদয় ভেঙ্গে দেয় জার্মানি।
এই শিরোপা জয়ে কোপা আমিরেকার সর্বোচ্চ ট্রফি ঘরে তোলার রেকর্ডে উরুগুয়ের পাসে বসলো আর্জেন্টিনা। এবার ১৫তম শিরোপা জিতল ম্যারাডোনার দেশ।
আর্জেন্টিনা সর্বশেষ ২৮ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৯৩ সালে কোপার শিরোপা জিতেছিল। এছাড়া ১৯২১, ১৯২৫, ১৯২৭, ১৯২৯, ১৯৩৭, ১৯৪১, ১৯৪৫, ১৯৪৬, ১৯৪৭. ১৯৫৫, ১৯৫৭, ১৯৫৯ ও ১৯৯১ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনার পর ৯টি শিরোপা নিয়ে কোপা তৃতীয় সেরা দল ব্রাজিল। এছাড়া ২টি করে শিরোপা জিতেছে প্যারাগুয়ে, চিলি ও পেরু। কলম্বিয়া ও পেরু জিতেছে একটি করে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.