জন্মের পর সবকিছু ঠিকই ছিল ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের জৈনতপুর গ্রামের হাসমত শিকদারের। কিন্তু এক বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরের আক্রমণে পাল্টে যায় জীবনের গল্প। দুটি পা অকেজো হয়ে যায়। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাচল করতে কস্ট হয় তার। হাঁটতে না পারলেও হাসমত শিকদার ভিক্ষা না করে বেছে নেন কৃষি কাজ। সংসার চালাতে কখনো কখনো পদ্মা নদীতে মাছও ধরেছেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে আজ তিনি কৃষি কাজ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন। শত কষ্টেও অন্যের কাছে সাহায্যের জন্য আশ্রয় তো নেনই না। বরং মানুষকে সাহায্য করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
অভাবের সংসারের খরচ যোগাড় করতে ছোট বেলা থেকেই জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েছেন। কৃষিতে সফলতার স্বপ্ন দেখে গতবছর শুরু করেছেন স্ট্রবেরি চাষ। শুরুটা কষ্টের থাকলেও স্ট্রবেরির ফল ভালো পাওয়ায় এখন চোঁখ মুখে নতুন স্বপ্ন তার। এছাড়া এলাকার মানুষের কাছে পরোপকারী মানুষ হিসেবেও পরিচিত লাভ করেছে তিনি।
অভাবী সংসারের দুঃখ-কষ্ট ঘোচানোর জন্য ছোটবেলা থেকেই যেকোনো কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। দু পা অকেজো হওয়ায় দুই হাতের তালুর উপর ভর করে সংসারের ঘানি টানতে থাকেন হাসমত শিকদার। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে নিজের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করেছেন প্রতিবন্ধী হাসমত শিকদার। সব বাধা পেরিয়ে এখন তিনি একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তার কর্মদক্ষতায় খুশি পরিবার।
চলতি বছরে স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করার পাশাপাশি শাম্মাম আবাদ শুরু করেছেন। একদিনে ২ থেকে ৩ কেজি স্ট্রবেরি ফল সংগ্রহ হচ্ছে, তিনি প্রতি কেজি ফল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দামে বিক্রি করছেন। নবাবগঞ্জের বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া ও বান্দুরা বাজারে তার বাগান থেকে নেওয়া স্ট্রবেরি বিক্রি করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে এগুলি চাষ করেছেন তাই লোকজন অনেক বেশি আগ্রহ নিয়ে ফল কিনছে বলে জানান তিনি। মার্চ মাস পর্যন্ত গাছগুলি থেকে নিয়মিত ভাবে ফল পাওয়া যাবে। এরপর যদি গাছে বাড়তি যত্ন এবং ওপরে ছায়া দেওয়ার জন্য শেড তৈরি করে দেওয়া হয় তবে আর কিছুদিন ফল ধরবে।
তার বন্ধু শেখ মোকসেদ জানান, ছোটবেলা সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। হঠাৎ করে অসুস্থতায় দুটি পা নষ্ট হয়ে যায়। হাঁটতে না পারলেও এখন স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন। প্রতিবন্ধী হয়েও এতো কাজ কেউ করে এরকম কোথাও দেখা যায় না।
এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, সমাজে প্রতিবন্ধীরা যে বোঝা নয় হাসমত শিকদার জলন্ত উদাহরণ। তিনি কঠোর পরিশ্রম করে সংসারের দুঃখ-কষ্ট দূর করে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। আমরা তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দেবো। তবে তিনি যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তবে তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় আরও সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করব।
নবাবগঞ্জ উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা আসমা জাহান বলেন, এ উপজেলার খুব কম কৃষক স্ট্রবেরি চাষ করে থাকেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। স্ট্রবেরি তিন থেকে চার বছর ধরে চাষ শুরু হয়েছে। তবে স্ট্রবেরি চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং আগামীতে আরো বেশি চাষ হবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.