করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে এটা বাধ্যতামূলক হলেও সরকারের এমন নির্দেশনা মানছেন না বিদেশ ফেরত দোহার ও নবাবগঞ্জে ফেরা অনেকেই। ঘুরছেন-ফিরছেন, আত্মীয় বাড়িতে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এমন অভিযোগও উঠেছে অনেকের বিরুদ্ধে।
প্রবাসী অধ্যুষিত দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় এমনিতেই করোনা ভাইরাস নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে শঙ্কা অনেকটা বেশি রয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইন মানার বিষয়ে দোহার উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং প্রচারণা থাকলেও অনেকই তা মানছেন না।
বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন ১৪ দিন হয়নি কিন্তু তারা হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এমন তথ্য রয়েছে প্রিয়বাংলা নিউজ২৪ এর হাতে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোনে ও ম্যাসেঞ্জারে বিষয়টি নিয়ে অবগত করছেন সচেতন এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার রাতে নবাবগঞ্জে দুই প্রবাসীকে অর্থদন্ড দিয়েছে প্রশাসন।
অভিযোগ রয়েছে, নবাবগঞ্জ উপজেলার নতুন বান্দুরা গ্রামে এক যুবক ইতালি থেকে দেশে ফিরেছেন কিন্তু হোম কোয়ারেন্টাই মানছেন না। একই কাজ করছেন, দোহার উপজেলার ইকরাশি গ্রামে বারমুডা থেকে আসা খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি, ইমামনগর গ্রামের সুইজারল্যান্ড থেকে আসা দুইজন, সুতারপাড়া ইউনিয়নের ঘারমোরা গ্রামে সিঙ্গাপুর থেকে আসা একজন, দক্ষিণ জয়পাড়া ব্রিজের পাশে কাতার থেকে আসা এক যুবক, ঝনকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকে সিঙ্গারপুর থেকে আসা একজন, মধ্য লটাখোলা গ্রামে ইউরোপ থেকে আসা একজন এবং ইউসুফপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি। এছাড়া নবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বিদেশ থেকে দেশে ফিরে হোম কোরান্টাইনে না থাকা আরও তিন ব্যক্তির নামে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরা সবাই দিব্যি হাটে বাজারে ঘুরছেন, হাত মেলাচ্ছেন পরিচিত সবার সাথে, আত্মীয় বাড়িতে যাচ্ছেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মার্কেট করে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদের কার্যক্রমে স্ব স্ব এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তারা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে, হোম কোয়ারেন্টাইন অমান্য করায় নবাবগঞ্জে দুই প্রবাসীকে অর্থদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত।
সৌদি থেকে আসা দুই প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টাইন অমান্য করার দায়ে ৫ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয় তাদের।
বৃহস্পতিবার রাতে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এইচ. এম সালাউদ্দীন মনজু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ অর্থদন্ডাদেশ দেন।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, কলাকোপা ইউনিয়নের রাজারামপুর এলাকার বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন এবং শোল্লা ইউনিয়নের খতিয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিম। তারা দুজনেই গত ৫ দিন আগে সৌদি থেকে বাংলাদেশে আসেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ.এম সালাউদ্দীন মনজু বলেন, চলতি সপ্তাহে তারা সৌদি থেকে বাংলাদেশে আসেন। করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কায় তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন রাখা হয়েছে। তারা দুজনে সংক্রামক সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অর্থদ- প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তারা দুজনসহ অন্যান্যদেরও বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শহিদুল ইসলাম ও দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন জানান, দোহার উপজেলার মোট ৫৬ জনকে হোম কোয়ারাইন্টনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪ জনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে। এখন আছেন ৪২ জন। এছাড়া নবাবগঞ্জে ১৮৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
দোহার থানার অফিসার ইনচার্জ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিরা নির্দেশনা পালন করছেন কিনা তা দেখতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আফরোজা আক্তার রিবা বলেন, এ মূহুর্তে বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে হোম কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক। আমরা বিষয়টি নিয়ে শক্ত হাতে কাজ করছি। কেউ নির্দেশনা না মানলে প্রশাসনকে অবহিত করুন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.