1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৭ অপরাহ্ন

মাটি কাটার মচ্ছব নবাবগঞ্জে

শামীম আরমান ও ইমরান হোসেন সুজন
  • আপডেট : রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
  • ২২৪৫ বার দেখা হয়েছে

ভূমি আইনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমির মাটি বিক্রির মহোৎসবে মেতেছে মাটিখোকোরা। আর এ মাটি নিয়ে রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সরকার নিষিদ্ধ মাহেন্দ্রা। প্রশাসন কয়েকটি স্থানে অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ মাটি কাটা। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সারাবছর বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত মাটিখেকোরাই অবৈধভাবে মাটি কেটি তা বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের উৎপাতে দিশেহারা হয়ে উঠেছে ফসলি জমির মালিকরা। অপরিকল্পিতভাবে বালু ও মাটি কাটার ব্যাপারে ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না মাটিখেকোরা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি নবাবগঞ্জের কৈলাইল ইউনিয়নের দক্ষিণ মেলেং গ্রামে মাটিভর্তি মাহেন্দ্র গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে সিনহাত নামে চার বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এঘটনায় স্থানীয়রা মাহেন্দ্রা চালকসহ তিনজনকে আটক করে থানায় সোর্পদ করেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের বড় ভাই। স্থানীয়রা কয়েকটি ভেকু পুড়িয়ে দেয়।
গত ২৬ জানুয়ারি উপজেলার বারুয়াখালী এলাকায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিবুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে রানা ইসলাম নামের এক মাটি ব্যবসায়ীকে আটক করেন। পরে অবৈধভাবে কৃষি জমির মাটি কাটার দায়ে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া উপজেলার কৈলাইলের মালিকান্দা চক এলাকা থেকে আব্দুর রশিদ নামে এক মাটি ব্যবসায়ীকে আটক করে ৫০ হাজার জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর, সোনাবাজু, বারুয়াখালী, কোঠাবাড়ি চকে, নয়নশ্রী, শোল্লার সিংজোড়, চন্দ্রখোলা, কৈলাইল, মেলেং, শাইলক চকে, কলাকোপা ইউনিয়নের বড় রাজপাড়া, বাড়ৈখালী, শিকারীপাড়া, বাহ্রা ইউনিয়নসহ নবাবগঞ্জের সীমানাবর্তী দোহারের ইসলামপুরে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। স্পটগুলোতে গিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে ফসলি জমির মাটি কাটার অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা দম্ভোক্তির সাথে বলেন প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটা হচ্ছে। নবাবগঞ্জ থানা পুলিশের কথা বলেন তারা। তবে অনুমোদনের কাগজ দেখতে চাইলে দেখাতে পারেননি।

এছাড়া নবাবগঞ্জ মেলেং উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ ও প্রধান শিক্ষক যৌথভাবে বিদ্যালয়ের জমি থেকে মাটি বিক্রি করেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। মাটি কাটার দায়িত্ব দেওয়া হয় মাটি ব্যবসায়ী হারেজকে। মাটি পরিবহণের সময় গত ৮ই ফেব্রুয়ারী মাটি ভর্তি মাহেন্দ্রার চাপায় সিনহাত মারা গেলে উত্তেজিত জনতা তিনজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেন এবং ভেকুতে আগুন ধরিয়ে দেন। এঘটনা এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, কৈলাইলে শাইলক চকে ক্ষুদু মেম্বার, শোল্লার হারেজ, সোনাবাজু আবুল কালাম আজাদ, জয়কৃষ্ণপুরে সাঈদ মোল্লা, মিঠুন, বারুয়াখালী যুবলীগ নেতা তৌহিদ ভূইয়া, রানা, কোঠাবাড়ি চকে কবির, নয়নশ্রীতে শেখর, বড় জাফরপুর ও বাড়ৈখোলায় নাঈম মাটি কাটার ব্যবসার সাথে জড়িত।
স্থানীয়রা জানান, মাছ চাষের কথা বলে পুকুর খনন করে শত শত বিঘা আবাদি কৃষি জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে বিভিন্ন ইটভাটা ও স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করছে মাটি বিক্রেতা সিন্ডিকেট। অন্যদিকে মাহেন্দ্র দিয়ে মাটি আনা-নেয়ার ফলে সড়কের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে।
আলালপুরের আল-আমিন বলেন, বান্দুরা থেকে বেঁড়িবাধের রাস্তাটি এমনেই খারাপ। তার মধ্যে মাহেন্দ্র চলে রাস্তাগুলো আরো নষ্ট করে ফেললো।
ভুক্তভোগী সোনাবাজু গ্রামের কয়েকজন কৃষক বলেন, ফসলি জমির মাটি বিক্রির ব্যবসা চালাতে প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করতে সদা তৎপর থাকেন একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতি বছর লাখো কোটি টাকা।
শাইলকা গ্রামের একাধিক বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাটিখেকো খুদু মেম্বারের কারণে কৈলাইল ও বাহ্রা ইউনিয়নের শত শত বিঘা কৃষিজমি নষ্ট হলেও ক্ষুদু মেম্বারের কিছু হয় না। উল্টো ওনার সাথে প্রশাসনের সখ্যতা বেশি। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে খুদু মেম্বার অবৈধভাবে মাটি কাটলেও সব সময়ই থেকেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
কৃষক আবুল হোসেন বলেন, আবাদযোগ্য কৃষিজমি বিভিন্ন কৌশলে খরিদ করে বছরের পর বছর মাটি বিক্রির ব্যবসা চালাচ্ছেন। মাটি ব্যবসায়ীরা একটা জমি কিনে এমন ভাবে মাটি কাটে যাতে পাশ্ববর্তী জমির মালিক তার জমিটিও কমদামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়ে।
কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, এমপি সালমান এফ রহমান অবৈধভাবে মাটি ও বালু কাটার ব্যাপারে নিষেধ করেছে। তবে দেখা যায় আওয়ামী লীগের কতিপয় কিছু নেতাদের সেল্টারেই প্রশাসনের সাথে যোগসাজশে প্রকাশেই মাটি কাটা হচ্ছে। সালমান এফ রহমান এমপি’র কথাতেও তারা কর্ণপাত করছে না। তাঁরা বলেন, আমরাও চাই অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটা একবারে বন্ধ হোক।
এব্যাপারে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম সালাউদ্দিন মনজু ও থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তফা কামালের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেনি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজিবুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে মাটি কাটার অপরাধে একাধিক মাটি ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের অভিযান চলমান আছে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ