দক্ষিন কেরানীগঞ্জে র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত দুই যুবকের পরিচয় পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহতদের স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করে পরিচয় নিশ্চিত করেছে। নিহতরা হচ্ছে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানার করের গাও এলাকার মৃত সলু মিয়ার দুই ছেলে সজীব ওরফে হুট চোরা (৩৬) ও তাজেল মিয়া ওরফে তাজুল (২৮)। তারা দু’জন সৎ ভাই এলাকায় পরিচিত বুলু চোরার নাতি হিসাবে।
র্যাবের পক্ষ থেকে ডাকাতদলের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তাদের হত্যা করা হয়েছে। এদিকে বন্দুকযুদ্ধে দুই ভাইয়ের নিহত হওয়ার এলাকাবসীর মাঝে ফিরে এসেছে স্বস্তি, খুশিতে বিতরন করা হয়েছে মিষ্টি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানায়, সলু মিয়ার পুরো পরিবারই বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তার পাঁচ ছেলের মধ্যে একজন মারা গেছে কয়েক বছর আগে। এক ছেলে এলাকা ছাড়া, আর বাকি তিন জন সজিব, তাজুল ও রাজিব এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও খুন করে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছে। একরকম বলতে গেলে ওদের অপরাধ কর্মকান্ড এতটাই নির্মম যে ভয়ে কেউ মুখ খুলতো না। তবে সজিব ও তাজুল বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ায় এলাকায় ফিরে এসেছে স্বস্তি। তাদের অন্যায় ও অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ায় বুধবার মিষ্টি বিতরন করা হয়েছে মিষ্টি। পুরো এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে আনন্দ মিছিল ও উল্লাস।
র্যাব সূত্রমতে জানাগেছে, নিহত সজিব ও তাজুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধীক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে সজিবের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি ২টি, ডাকাতি মামলা ১টি, অস্ত্র মামলা ১টি ও ১টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর ছোট ভাই তাজুলের বিরুদ্ধে রয়েছে ৭ টি মামলা এর মধ্যে হত্যা ২টি, অস্ত্র মামলা ১টি, ডাকাতির প্রস্তুতি ২টি ও ২টি মাদক রয়েছে। এরা দক্ষিন কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল আবাসিক এলাকা ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে নিয়মিত ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত।
তবে নিহত তাজুলের মা তাসলিমা বেগম বলেন, তাজুল আমার আপন ছেলে আর সজিব আমার সতিনের ছেলে। গত ২৩ জুলাই সতিনের ছেলে সজিবকে কদমতলী থেকে র্যাব আটক করেছে এবং ২ দিন পর আমার ছেলে তাজুলকে আব্দুল্লাহপুর থেকে আটক করে র্যাব। তবে ছেলেদের খোঁজে আমরা র্যাব অফিসে গেলেও তাদের হদিস পাইনি। ছেলেরা মাদক সেবন করতো এটা সত্যি কথা তবে এমন কোন অপরাধ করেনি যে ক্রসফয়ার দিয়ে মেরে ফেলতে হবে। এলাকায় ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে কয়েক জনের সাথে দ্বন্দের জেরে প্রভাবশালী মহল পরিকল্পিতভাবে র্যাবকে ভুল তথ্য দিয়ে তাদের হত্যা করিয়েছে। আমি এর সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
এব্যাপারে র্যাব-১০ এর সিপিসি-২ কেরানীগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর ওবায়দুর রহমান জানান, ডাতাতির প্রস্তুতির সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদল র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে, গোলাগুলির এক পর্যায়ে ডাকাতদলের অন্যান্য সদস্যরা পিছু হঠলেও সজিব ও তাজুল গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। এরপর আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষনা করে। ঘটনাস্থল থেকে ২ টি ৭.৬৫ বিদেশী পিস্তল, ২ টি ম্যাগজিন, ২ রাউন্ড গুলি, ১২ বোরের শর্টগানের ১৩ টি কার্তজেুর খোসা, ৭.৬৫ পিস্তলের কয়েক রাউন্ড গুলির খোসা, ১ টি রামদা, ১ টি চাইনিজ কুড়াল, ছোড়া ও লোহার রড় উদ্ধার করা হয়েছে। ডাকাতদের ছোড়া গুলিতে র্যাবের তিন সদস্য এএসআই শফিকুল ইসলাম, নায়েক জাকিরুল ইসলাম ও কনস্টেবল মশিউর রহমান আহত হয়। আহত র্যাব সদস্যদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এঘটনায় র্যাবের পক্ষ থেকে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডাকাতদলের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে অভিযান চলমান রয়েছে।
নিহত আসামীদের আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিেেলা কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো এবং পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে এমন তথ্য ভিত্তিহীন। ভুক্তভোগীদের কাছে খোঁজ নিলে তাদের সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, ডাকাতি ও মাদকসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানতে পারি এরা পারিবারিকভাবে নানা অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.