আর মাত্র কয়েক দিন বাকি ঈদুল আজহা। তবে ঈদকে সামনে রেখে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জের কামারশালায় নেই কোনো ব্যস্ততা। ক্রেতাদেরও তেমন কোন ভিড় দেখা যায়নি। কোরবানির ঈদে কামারদের দম ফেলানোর সময় থাকতো না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কামারশালাগুলোতে টুংটাং শব্দ লেগেই থাকতো। তবে করোনা কারনে বর্তমান চিত্র পুরো ভিন্ন। দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে অলস। দোকান খোলা রাখলেও ক্রেতা নেই।
দুই উপজেলার বিভিন্ন কামারশালা ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো ব্যস্ততা নেই কামারদের। লকডাউন শিথিল করায় কয়েকটি কামারশালা খোলা থাকলেও, কাজ নেই । তবে স্বাভাবিক পরিবেশে এক মাস আগে থেকেই কামারশালায় হাতিয়ার বানানোর কাজ শুরু হতো। কামারশালার পাশ দিয়ে গেলেই শোনা যেত টুংটাং আর লোহা গরম করা ভাতির শব্দ।
নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া, জয়কৃষ্ণপুর, বান্দুরা এবং দোহার উপজেলার জয়পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগের মতো কামারদের ব্যস্ততা নেই। কয়েকটি কামারশালা খোলা থাকলেও তাদের হাতে তেমন কোনো কাজ নেই। ঈদকে ঘিরে আগের মতো তাদের বাড়তি প্রস্তুতিও নেই। সহযোগিদের নিয়ে দিনভর দোকানে বসে আছেন অথচ কাঙ্খিত বিক্রি নেই। একসময় কোরবানির ঈদের আগে ৪/৫ জন লোক নিয়ে কাজ করতে হতো কামার পল্লী জুড়ে।
বারুয়াখালী বাজারের বিশ্বনাথ কর্মকার নামের এক দোকানী জানান, আগে কোরবানী ঈদ আসলেই কাজের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যেত। কিন্তু এ বছর ব্যবসার সময়টায় লকডাউন। তাই এবার সে পরিমানে হাতে কাজ নেই। বিক্রির আশায় অনেক মালামাল বানিয়ে রেখেছি। এগুলো বিক্রি করতে না পারলে ঋণগ্রস্থ হয়ে পরবো।
একই বাজারের যতিন্দ্র কর্মকার নামে আরেক দোকানী বলেন, কোরবানি ঈদের একমাস আগে থেকেই দা, ছুরি, বটি, চাপাতিসহ নানা ধরনের হাতিয়ার তৈরির কাজ শুরু হতো। পাশাপাশি থাকতো পুরাতন হাতিয়ারের মেরামতের কাজ। সব মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকার বেচাবিক্রি হতো কিন্তু লকডাউনের কারণে সব শেষ। এইবার তো কাজে কোনো ব্যস্ততা নেই। ঈদের কয়দিন বাকি থাকলেও এখনো কাজের চাপ বাড়েনি। আগে প্রায় ১ মাস জুড়ে কাজ করতাম দিন রাত। খাওয়ার সময়টুকুও পাইতাম না।
তাপস কর্মকার বলেন, আগে এই সময়ে কামারশালার সামনে বিক্রি করার জন্য সাজানো থাকতো কোরবানি করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। বিক্রি শুরু হতো কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই। এবার ঈদ ঘনিয়ে এলেও বেচাবিক্রি নেই। দুই সপ্তাহ গেল লকডাউন। লকডাউনের পর দুইদিন ধরে দোকান খুলছি। বলতে গেলে ক্রেতাও নেই।
ব্রাহ্মণখালী এলাকার অমূল্য কর্মকার জানান, ঈদের মাসখানেক আগ থেকেই কাজের ব্যস্ততা বাড়তো। প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দুই হাজার টাকার কাজ করতে পারতাম। এবার লকডাউনের কারণে কাজ নেই বললেই চলে। তিনি আরো বলেন, নতুন হাতিয়ার বিক্রি নেই বললেই চলে। পুরাতন হাতিয়ারে শান দেয়াও কমে গেছে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.