আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার ঢাকার নবাবগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন মাঠ জুড়ে সোনালী ধানের সমারোহ। ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। উপজেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠে পাকা বোরো ধান কেটে ঘরে তুলছেন কৃষকরা। এবার এ উপজেলায় বোরো ধানের বাস্পার ফলন হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। প্রতিবছরের চেয়ে পোকার আক্রমণ কম থাকায় অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই এবার নতুন ধান তোলার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই মৌসুমে উপজেলায় ১০ হাজার ৯২৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ১০ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে বলে জানা যায়।
এর মধ্যে হাইব্রিড এস এল আর-৮, হাইব্রিড রূপালি ধানী গোল্ড, ব্রিধান-২৮, ২৯, ৫০, ৫৮, ৬৩, ৭৪, ৮৮, ৮৯, ৯২, বিনা -১০, বিনা-১৪ এই জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে।
কৃষকরা আশা করছেন, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে তাদের কাঙ্খিত সোনালী ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ যাবত ১ হাজার হেক্টর জমির ধান কেটে ঘরে তুলছে কৃষক। এই ধান ঘরে তুলতে কৃষি বিভাগ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। দলীয় আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়াও নিয়মিতভাবে রোগ ও পোকার আক্রমণ সংক্রান্ত পূর্বাভাস জরিপ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এসব কাজ ছাড়াও উপজেলায় ৪২ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সার্বক্ষণিকভাবে কৃষকের জমিতে ফসলের তদারকিসহ নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের ধানচাষি মোতালেব খাঁন জানান, এবার ৬ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। গত বোরো মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে ছিলাম। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানও খুব ভালই হয়েছে। বাজারে ভাল দাম পেলে লাভবান হতে পারবো।
মাদলা গ্রামের খামাত পাড়ার ধান চাষি মোস্তফা জানান, এবার ১২ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছি। এর মধ্যে ব্রি-২৮ জাতের ধান আছে ৫ বিঘা। বাকি ৭ ব্রি-২৯ জাতের। ভাল ফলনে এবার স্বপ্ন দেখছি ভাল দামের। আর কিছু দিন পরেই সোনালী ধানের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠবে কৃষকের বাড়ির উঠান।
উপজেলার জৈনতপুর গ্রামের বর্গাচাষি সমির মিয়া জানান, প্রতিবেশীর নিকট দেড় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে হাইব্রিড ধানের চাষ করছি। এই দোলায় (মাঠে) আমার মতো ধান কারো ফলেনি। বিঘায় ২৫ মন ধানের আশা করছি। প্রতিদিন আসি আর ধান কাটার স্বপ্ন দেখি। ধানের বাজার ভাল পেলে বাকি দিনগুলি মোটামুটি ভালই চলে যাবে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামান জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পোকা মাকড়ের উপদ্রপ ছাড়াই কৃষক ধান ঘরে তুলতে পারবে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকের মাঝে গিয়ে নানা পরামর্শ দিচ্ছে। এবার ধানের বাম্পার ফলনও হয়েছে। তুলনামূলকভাবে ব্রিধান-২৯, ব্রিধান-২৮ জাতের ধানের আবাদ এবার বেশি হয়েছে। বেশি ফলন পাওয়ায় কৃষক এখন হাইব্রিড ও উপসি জাতের ধানের আবাদ বেশি বেশি করছে। আশা করি, এসব ধানে এবারও বাম্পার ফলন হবে। বাজারে ধানের দাম ভাল পেলে কৃষকের স্বপ্ন পূরণ শতভাগ পূরণ হবে।
মন্তব্য করুন