খানসামার কাজ করেও এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া মাসুদের পাশে থেকে তার স্বপ্ন পূরনে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছেন ঢাকার দোহার উপজেলার কাঠালীঘাটা গ্রামের জার্মান প্রবাসী রোমান মিয়া ও সুন্দরীপাড়া এলাকার আবাসন ব্যবসায়ী মো. আয়ূইব আলী।
গত ২ জুন প্রিয়বাংলা নিউজ২৪ অনলাইনে মাসুদকে নিয়ে প্রতিবেদক শামীম আরমান ও তানজিম ইসলামের করা একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি তাদের দৃষ্টিতে আসে। ওই নিউজের কমেন্টস বক্সে জার্মান প্রবাসী রোমান মিয়া হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া অদম্য মেধাবী মাসুদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। একইসাথে প্রতিবেদনটি দেখার পর পত্রিকাটির সম্পাদক অমিতাভ অপু’র সাথে স্বপ্রনোদিতভাবে ফোনে যোগাযোগ করেন ব্যবসায়ী মো. আইয়ূব আলী। তিনিও মাসুদের ভর্তি ও লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ভাল ফলাফলের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে মাসুদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরনে তারা পাশে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন।
উল্লেখ্য যে, হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া তিন ভাইয়ের মধ্যে মাসুদ ইসলাম দ্বিতীয়। বাবা খাদেমুল ইসলাম পেশায় একজন রিকশাচালক। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে রিকশার প্যাডেলে ঘুরিয়ে চলে তার সংসারের চাকা। বাবার মত মাসুদের জীবনও সংগ্রামে ঘেরা। সারাদিন রিকশা চালিয়ে বাবা যা আয় করতেন তা খুবই নগণ্য। অভাবের সংসারে একটু হলেও স্বচ্ছলতা আনতে পড়াশোনার পাশাপাশি সুযোগ পেলেই মাসুদ করতেন খানসামার কাজ। স্কুল বন্ধের দিনগুলোতে ছুটে যেতেন বিয়ে সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বাড়িতে। মাসুদের পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তি তাকে আজ সাফল্য এনে দিয়েছে। ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার কাটাখালী মিছের খান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাসুদ। মাসুদ এখন পড়তে চায় ঢাকার সেন্ট যোসেফ কলেজে। মাসুদ স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে সে ডাক্তার হবে।
তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে মাসুদের পিতা খাদেমুল ইসলামের কষ্টের সংসার। বিশ বছর আগে জীবিকার তাগিদে পঞ্চগড় সদর উপজেলার মালকাডাঙ্গা থেকে দোহারে আসেন তিনি। এরপর বাড়ি ভাড়া নিয়ে উঠেন কাটাখালী গ্রামের মেজর আলমাসের বাড়িতে। সেখানে ছিলেন দীর্ঘ ১২ বছর। তারপর ভাড়া আসেন মাহবুব খানের বাড়িতে। এখানে স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিয়ে একটি ঘরের দুটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকেন তিনি। অনেক কষ্টে ধার দেনা ও কিস্তি নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ক্রয় করেছেন খাদেমুল। যার কিস্তি এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে। দারিদ্রতার সাথে তীব্র লড়াই করে জীবিকা নির্বাহ করলেও তিন সন্তানকেই করাচ্ছেন পড়াশোনা। কাটাখালী মিছের খান উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তার মেঝ ছেলে মাসুদ এ প্লাস পেলেও বড় ছেলে নয়ন ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে পেয়েছেন এ গ্রেড। ছোট ছেলে সাগর হোসেনও পড়াশোনা করছেন একই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণিতে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.