1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন

কী সুখি তারা!

ইমরান আলী:
  • আপডেট : শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৪ বার দেখা হয়েছে

রাত ১টা বেজে ৩০ মিনিট। সাইকেলের বেলের আওয়াজ শুনতে পাই । পর পর তিনবার। দু মিনিট পর ঘটাং করে দরজা খোলার শব্দ আসে। এই ব্যাপারটা হয় আমার বাসার পাশে এক বস্তিতে। এই বেলের আওয়াজ শুনছি বছর দেড়েক ধরে। মিনিট পাঁচেক পর হাসির শব্দ শুনতে পাই। অত রাতে নারী হাসি পরিবেশটাকে রহস্যময় করে দেয়। প্রথম প্রথম বিরক্ত হতাম। এখন হই না। এই হাসি আর সাইকেলের বেলের শব্দ দৈনন্দিন জীবনে যেন মিশে গেছে। ঘড়িতে যখন দেড়টা বাজতে যায় নিজেই অনুমান করি এখনই সাইকেলের বেল বাজবে। ঠিক বাজেও তাই। মিস হয় না। কিন্তু এত রাতে কেন বাজে। কেনই বা এমন সময় নারী কণ্ঠের হাসি শুনতে পাই। ঘটনার সাথে আমি পরিচিত হলেও রহস্য আমার কাটে না।

রোজ রাতে আমি জানালা খুলে নিচে তাকাই। দৃশ্যপট বুঝতে চাই। দেখি এক মাঝ বয়সী লোক সাইকেলে বসেই থাকে। সামনে ঝুলানো সিলভারের টিফিন বক্স। তিন বাটির। বেল বাজিয়ে সে অপেক্ষা করে। এক নারী আসে।দরজা খুলেই সে আগে টিফিন বাটি নেয়। তারপর গেট লাগিয়ে দেয়।
আমি উচু বাসায় থাকি। তাদের আঙ্গিনায় কী হয় সব দেখতে পাই। নারীটা দেখতে বেশ। ধবধবে ফর্সা, লম্বা। এনার্জি বাল্বের আলোতে আরো সাদা লাগে দেখতে।

অত গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন এই নারী আঙ্গিনায় পায়চারী করে। জগে করে পানি এনে দেয় লোকটাকে। বুঝতেই পারি তারা স্বামী স্ত্রী। স্বামী হাত পা ধোয়। সুন্দরী স্ত্রী তোয়ালে হাতে দাঁড়িয়ে থাকে। যেন গ্রামের দৃশ্য। অবাক হই। এই অল্প বয়সী মেয়ের কি ঘুম ধরে না !
তার মুখায়ব দেখে মনে হয় সে যেন এই মুহূর্তের জন্যই অপেক্ষায় থাকে রোজ। স্বামী হাত মুখ ধুয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ায়। কী যেন বলে। স্পষ্ট শুনতে পাই না। অন্যদিকে তার স্ত্রী হেসেই অস্থির। খুব তাজ্জব লাগে কি এমন কথা বলে লোকটা যে এই মাঝ রাতে মেয়েটা ঘুম কাতর না হয়ে হাসিতে ফেটে পড়ে রোজ?

এই দেড়টা বছরে আমি এর বাইরে অনেক কিছুই দেখেছি। সাইকেল থেকে নেমেই লোকটা স্ত্রীর গালে আদর করে চুমু দিচ্ছে। স্ত্রী ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। ইতস্তত করলেও সে যেন এমনটাই চায়। অন্যদিকে আমি দর্শক নিজেও লজ্জা পাই। জানালা আটকিয়ে দেই। অপরাধ বোধ হয় অন্যের রোমাঞ্চকর দৃশ্য দেখে। জানালা আটকিয়ে দেই। ঘুমাতে যাই । চোখে ওদের চেহারা ভাসে।

আহ কী পবিত্র সম্পর্ক! কী সুখি তারা! এই শহরে এত এত কিছুর মাঝেও সামান্য কিছু না থেকেও তারা কত সুখি।
স্বামী বেচারা আর কয় টাকা ইনকাম করে। বউ বেচারা কতই বা শিক্ষিত। কিন্তু যে সুখ আমি দেখি এই সুখ অনেক আচ্ছা আচ্ছা দম্পত্তিদের মধ্যে থাকে না। কী অভাগা তারা!

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ