ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গাপাড়ার ভাঙা সেতুটির কারনে দুর্ভোগে পড়েছে পথচারীরা। সেতুতে নেই রেলিং। বেরিয়ে এসেছে রড। ফাটল ধরেছে পিলার ও মূল সেতুতে। নির্মাণের ৬ মাসের মধ্যেই এই দশা হলেও দীর্ঘ প্রায় ২০ বছরেও সংস্কার বা পুনর্নিমাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
গত ছয় মাসে প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন। বন্ধ হয়েছে এই রাস্তা দিয়ে চলা হালকা যানবাহনও। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
এলাকাবাসী জানায়, তৎকালে মূলত নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর আসন্ন নির্বাচনে ভোট টানার কৌশল হিসেবে ২০০২ সালের মধ্যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের সময় নিম্নমানের ইট, বালু, সিমেন্ট ও রড ব্যবহারের ফলে নির্মাণের মাত্র ৬ বছরের মাথায়ই সেতুটির রেলিং খসে পরে। যখনই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয় এর কাজের মান নিয়ে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু তখনকার প্রভাবশালীদের ভয়ে কিছুই করা যায়নি। তারপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এর সংস্কার করা হয়নি। নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা শত আশ্বাস দিলেও নির্বাচনের পর তা কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
এছাড়া সেতুটি পাড় হয়ে বারুয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়, প্রথম আলো কিন্ডার গার্টেন, বারুয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিকারীপাড়া কলেজ, দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজের শিক্ষার্থী, বারুয়াখালী বাজার, মসজিদ, ব্যাংক ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রতিনিয়ত চলাচল করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নির্বাচনের আগে একাধিক জনপ্রতিনিধিরা এ এলাকার জনসাধারণের চলাচলের জন্য সেতুটি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ এর বাস্তবায়ন করেনি।
এলাকাবাসী জানান, ভাঙ্গাপাড়ার সেতুটি দিয়ে বারুয়াখালী ইউনিয়নের ছত্রপুর, করপাড়া, ভাঙ্গাপাড়া, জৈনতপুর, দীর্ঘগ্রাম ও জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ঘোষাইল সহ ১০টি গ্রামের লোকজনের যাতায়াত করতে হয়। খুব বেশি জনসমাগম না হলেও দিনে ১০-১২ হাজার লোক ঝুঁকির মধ্য দিয়ে চলাচল করে। বিকল্প পথ অনেক দূরে হওয়ায় অনন্যোপায় হয়ে ইজিবাইক, ভ্যান ও রিকশা বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে এই সেতু দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের তোতা মিয়া জানান, কিছু দিন আগে মুন্নাফ নামের এক বৃদ্ধ সেতু থেকে পড়ে আহত হয়। তার কিছুদিন আগে একটি মোটর সাইকেলসহ এক যুবক পড়ে গিয়েও গুরুত্বর আহত হয়। প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট ছোট দুর্ঘটনা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আসলে সেতুটি খুব সুরু। এ কারনে একটা ইজিবাইক গেলে আর কোনো মানুষও হাঁটতে পারে না। অতি দ্রুত সেতুটি সংস্কার না করলে যদি সম্পূর্ণ ভেঙে যায় তাহলে স্থানীয়রা অনেক বড় সমস্যায় পড়ে যাবে।
জানা যায়, কয়েক বছর আগে বারুয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের রানা নামের এক স্কুল ছাত্র সেতু থেকে পড়ে গিয়ে ডান হাত একেবারে ভেঙে গেছে। আহত হয়। এই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মুরাদ হোসেন রনি বলেন, সেতুটি পাড় হওয়ার সময় আমাদের খুব আতঙ্কে থাকতে হয়।
এব্যাপারে বারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ বারী বাবুল মোল্লা বলেন, সেতুটি সরেজমিন পরিদর্শন করে কিভাবে এর সংস্কার বা নতুন সেতুটি নির্মাণ করা যায় তার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. জুলফিকার হক চৌধুরী বলেন, সেতুটির বিষয়ে জানা নেই।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.