রাত দশটার পর উচ্চ শব্দে গান বাজানো নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে দোহার উপজেলা প্রশাসন। গেল সপ্তাহে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেণ প্রিয়বাংলা নিউজ২৪ এর সম্পাদক অমিতাভ অপু। একই সাথে এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেণ দোহার উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান আকন্দ। বিষয়টি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ হলে জনগুরুত্বপূর্ণ বিধায় এ বিষয়টি গত ১৩ জানুয়ারি সোমবার মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় উত্থাপিত হয়। ওই সভা থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, দোহারের কোথাও রাত দশটার পর উচ্চ শব্দে গান বাজালে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সাথে এ বিষয়ে তথ্য জানাতে ভুক্তভোগীদের অনুরোধ করা হয়। এ বিষয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৪ জানুয়ারি, মঙ্গলবার দোহার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চলমান শীত মৌসুমে দোহার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় আলোচনা, ওয়াজ মাহফিল, বিয়েসাদিসহ অন্যান্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সারারাত ধরে উচ্চ শব্দে সাউন্ড সিস্টেম ও মাইক ব্যবহার করায় কোমলমতি শিক্ষার্থী, অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিগণ সৃষ্ট শব্ধ দূষণে অধিকতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অনেকে ক্ষেত্রে প্রশাসন ও থানা পুলিশের অনুমতি ব্যতিরেকে সাউন্ড সিস্টেম ও মাইক ব্যবহার করায় প্রায়শই অনাকাঙ্খিত ঘটনারও উদ্ভব হচ্ছে।
এমতাবস্থায় দোহার উপজেলা আইনশৃংঙ্খলা কমিটির জানুয়ারী/২০২০ মাসের স্বীদ্ধান্তের আলোকে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানোর জন্য উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশকে অবহিতকরণ ব্যতীত এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। বিশেষ ক্ষেত্রে সাউন্ড সিেেস্টম ও মাইক ব্যবহারের প্রয়োজন হলে শব্দ নিয়ন্ত্রণ করে শুধুমাত্র অনুষ্ঠানস্থলে রাত ১০টা পর্যন্ত এ ধরনের শব্দ যন্ত্র ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো। অন্যথায় বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জনস্বার্থে এ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলো এবং সকলকে তা প্রতিপালনের জন্য অনুরোধ করা হলো।
জানা যায়, দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে শুরু করে গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় রাতের বেলায় উচ্চ শব্দে মাইক এবং গান বাজানো নিয়ে মানুষের বিরক্তি ও যন্ত্রণা চরমে পৌঁছেছে। পরিবেশ দূষণ, বায়ু দূষণ, নদী দূষণসহ বহুমাত্রিক দূষণের পাশাপাশি শব্দ দূষণও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা জনস্বাস্ব্যের জন্য ভয়াবহ এবং ভয়ংকর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিয়ে, জন্মদিন, গায়ে হলুদসহ নানা অনুষ্ঠানে রাতে উচ্চ শব্দে এলাকা কাঁপিয়ে গান বাজানো নতুন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। উচ্চ শব্দে গান বাজানোর ফলে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ বিশেষ করে হৃদরোগে যারা আক্রান্ত তাঁদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে গান বাজানো রীতিমতো একটা অত্যাচারে পরিনত হয়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলে ঘটে মারধরের ঘটনা। প্রতিবাদকারীকে পড়তে হয় হামলার মুখে। অথচ শব্দ দূষণ প্রতিরোধে আইন রয়েছে, আছে কর্তৃপক্ষও। তবে নেই নজরদারিতা ও আইনের প্রয়োগ।
জানা যায়, শব্দ দূষণ প্রতিরোধে ২০০৬ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় থেকে শব্দ দূষণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও সেটা রয়েছে শুধু কাগজ কলমে। বিধি মোতাবেক হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়ের সামনে হর্ণ বাজানো নিষেধের বিধান থাকলে তার প্রয়োগ নেই। শব্দ দূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার পেছনে একেই প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়।
বিধিমালায় স্পষ্ট লেখা আছে, বিবাহ বা অন্য কোন সামাজিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কনসার্ট বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক বা অন্য কোন ধরনের সভা, বিভিন্ন ধরনের মেলা, যাত্রাগান ও হাট-বাজারের বিশেষ কোন অনুষ্ঠানে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হলে সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি লাগবে। এসব কার্যক্রম সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টার বেশি হবে না। পাশাপাশি রাত ১০টার পর কোনভাবেই শব্দ দূষণকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও বা তৎকর্তৃক ক্ষমতা প্রদত্ত কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হলে।
তবে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা বা অন্য কোন ধর্মীয় উপাসনালয়, ঈদের জামাত, ওয়াজ মাহফিল, নাম-কীর্ত্তন, শবযাত্রা, জানাজাসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, সরকারি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচারকালে, প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনকালে, বিভিন্ন সরকারি দিবসে এবং মৃত্যু সংবাদ বা কোন ব্যক্তি নিখোঁজ থাকিলে তা প্রচারকালে এই বিধিমালা প্রযোগ্য হবে না।
বিধিমালায় এলাকা ভিত্তিক শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবল ও রাতে ৪০ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ডেসিবল ও রাতে ৪৫ ডেসিবল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ডেসিবল ও রাতে ৫০ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ডেসিবল ও রাতে ৬০ ডেসিবল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ডেসিবল ও রাতে ৭০ ডেসিবল নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। এখানে দিন বলতে ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা এবং রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সময়কে রাত বুঝানো হয়েছে।
এছাড়া সাজার বিধান রাখা হয়েছে বিধিমালায়। অনুমতি ছাড়া শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করিলে প্রথম অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদ- বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ৬ মাসের কারাদ- বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-নীয় হবে।
এত আইন থাকলে এর কার্যকারিতা না থাকায় দোহার ও নবাবগঞ্জে বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রতি রাতেই বিভিন্ন এলাকায় উচ্চ শব্দে বাজানো হচ্ছে লাউড স্পিকার, অ্যামপ্লিফায়ারসহ বিভিন্ন যন্ত্র। অনেক সময় এসব যন্ত্রের উচ্চ শব্দে কারনে মানুষ বিরক্ত হলেও কিছুই বলতে পারে না। প্রতিবাদ করার কারনে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.