1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৫ অপরাহ্ন

‘রেমালের হানা’ ‘জব্বারের কান্না’

ইমরান হোসেন সুজন ও শামীম হোসেন সামন
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪
  • ১০৬ বার দেখা হয়েছে

প্রায় ১৫ বছর ধরে কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মধ্য সোনাবাজু এলাকার আব্দুল জব্বার। প্রকৃতির প্রতি প্রেম ও জীবিকার তাগিদের কৃষি কাজকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন স্বপ্নের সবজি বাগান। জমানো অর্থ ও ঋণ করে প্রায় ৫৫ বিঘা জমিতে এবারও চাষ করেছিলেন বেগুন, লাউ, করলা ও শসা সহ বিভিন্ন সবজি। বিগত ১০/১২ দিন ধরে বাগানের সবজি বিক্রি করেছেন গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই সবজি বিক্রি করে ধারদেনা ও ঋণের বোঝা মিটিয়ে হাসবেন স্বস্তির হাসি। কিন্ত ঘুর্ণিঝড় রেমাল এর কারনে মাত্র একদিনের টানা বৃষ্টিতে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে তার। নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ২৪ বিঘা জমির ফসল। এখনই চিন্তার ভাজ পড়েছে কপালে। এবছর লাভ তো দূরের কথা কিভাবে কর্মচারীদের বেতন ও ঋণ পরিশোধ করবেন এমন দুঃচিন্তায় দিন কাটছে তার।

সরজমিনে বুধবার সকালে আব্দুল জব্বারের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, নস্ট হয়ে যাওয়া সবজি বাগান পরিস্কার করতে ব্যস্ত তিনি। চোখে মুখে তার দুঃশ্চিন্তার ছাপ। কাজের ফাঁকে ফাঁকে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তার। আ. জব্বার জানান, নিজের কিছু মূলধনের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ৫৫ বিঘা জমিতে বেগুন, লাউ, করলা ও শসা সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করে বিক্রি শুরু করেন তিনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও বেশ ভালো হয়েছিল। কিন্তু একদিনের টানা বৃষ্টিতে ২৪ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, সবজি বাগানের পরিচর্যার জন্য ৪জন শ্রমিক রয়েছে। তাদেরকে গড়ে মাসে ২৭ হাজার টাকা করে বেতন দিতে হয়। সব মিলিয়ে লাখ টাকার উপরে বেতন দিতে হয় মাসে। পাশাপাশি লোনের টাকা। কিভাবে এত খরচ বহন করবো সেই চিন্তায় ঘুম আসে না।

আব্দুল জব্বার আরো বলেন, বৃষ্টির কয়েকদিন আগেও প্রতিদিন গড়ে ১০/১৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। কিন্ত বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। গতকাল থেকে আমি ১ টাকাও বিক্রি করতে পারি নাই। জমিতে কোন সবজিই নেই, সব নস্ট হয়ে গেছে। চিন্তায় আছি কিভাবে এনজিওর ঋণ পরিশোধ করবো। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী দুই মাসের আগে আর সবজি বিক্রি করতে পারব না। এমন দুঃসময়ে যদি সরকার থেকে সহযোগিতা এবং এনজিও যে লোন রয়েছে তা পরিশোধের ২/১ মাস বেশি সময় পেতাম তাহলে হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম।

স্থানীয় রাবিয়া বেগম বলেন, বৃষ্টির মধ্যেই জব্বার তার জমিতে এসে দেখে সব সবজি নস্ট হয়ে গেছে। সাথে সাথে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। বৃষ্টিতে তার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।

প্রতিবেশি রেখা আক্তার বলেন, ওনি খুবই ভাল মানুষ। অসহায়দের কাছে সবজির দামও রাখতেন না। যখন জমিতে এসে দেখলেন তার সব শেষ হয়ে গেছে তখন হার্টফেল করার অবস্থা। অনেক কস্ট করে সবজি বাগান করেছিল। বৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেল। লোকটা একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেল।

জব্বারের ছেলে বলেন, আমার পুরো নিঃস্ব হয়ে গেলাম। কিভাবে এত ক্ষতি পূরণ করবো একমাত্র আল্লাহ জানে। এখন যদি সরকার একটু আমাদের দিকে সুদৃষ্টি দেন তবে আমার ঘুরে দাঁড়াতে পারব।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ