নীরব হোসেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি ডিপার্টমেন্টের সুশাসন ও উন্নতি গবেষণা বিষয়ে মাস্টার্স পাশ করা যুবক। ঔষুধ গুণসমৃদ্ধ ব্ল্যাক রাইস চাষ করে সফল তিনি। প্রতিবছর নিজেদের জমিতে বোরো ও ইরি ধান চাষ করেন। ফলনও ভালো পান।
ইউটিউব দেখে নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের সিংজোড় গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে নীরব হোসেনের মনে শখ ও আগ্রহ জাগে সাধারণ ধানের পাশাপাশি ব্ল্যাক রাইস বা কালো ধান চাষ এবং বিভিন্ন প্রজাতির বাসমতী ধান চাষের ।
শখের বসে এবং ইরি ও বোরো ধানের ফলনের পার্থক্য বুঝার জন্য গত ৮ই ডিসেম্বর বীজতলা থেকে শুরু করে ২৫শে মে ঘরে তুলার আগমুহূর্ত পর্যন্ত ব্ল্যাক রাইস ও বাসমতী ১৬৩৭, ১৫০৯ ও ১১২১ জাতের ধান চাষ করেন। তিনি সম্মিলিতভাবে ২৬ শতাংশ জমির উপর এই ধান চাষ করেন।
অবশেষে সাধারণ ধানের তুলনায় ব্ল্যাক রাইসে তিনি সফলতা বেশী পান। ব্ল্যাক রাইস ২৬ শতাংশে ২০ মণ ধান হবে বলে আশা করেন। তিনি এবার ৪ শতাংশে ৩ মণ ধান পেয়েছেন। তবে বাসমতি তিন জাতের ধানে আশানুরূপভাবে ফলন কম হয়েছে। ২৬ শতাংশে ১০ থেকে ১২ মণ ধান হবে বলে আশা করেন। তিনি এবার ২২ শতাংশে ৮ মণ ধান পেয়েছেন।
নীরব জানান, সাধারণ ধান চাষের পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে ২৬ শতাংশ জমিতে সম্মিলিতভাবে ব্ল্যাক রাইস ও বাসমতী ১৬৩৭,১৫০৯ ও ১১২১ জাতের ধান চাষ করেছি।ইউটিউব দেখে এই জাতের ধানগুলো চাষ করতে আমার আগ্রহ জাগে এবং আমি আমার চাচার কাছে আগ্রহর কথা জানাই। আমার চাচা মফিজুর রহমান মফিজ তিনি ভারতের গুজরাট থেকে তার বন্ধুর মাধ্যমে বাসমতী ধান সংগ্রহ করে দেন। আর ব্ল্যাক রাইস মুন্সিগঞ্জের আব্দুর রহমান নামে এক শিক্ষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করি।
তিনি আরো বলেন, ব্ল্যাক রাইসে আমি আশানুরূপ থেকেও ভালো ফলন পেয়েছি। সাধারণ ধানের তুলনায় দাম বেশী থাকায় এবং ফলনও ভালো হওয়ায় এই ধান চাষে লাভজনক হওয়া সম্ভব। অন্যদিকে বাসমতি ধানে আশানুরূপ ফলন না পেলেও মোটামুটি ভালোই হয়েছে।
এ ধান চাষাবাদ পদ্ধতি সাধারণ ধানের মতোই। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে ফলন যদি তুলনামূলক কম হলেও দামের ক্ষেত্রে এ ধান চাষে দ্বিগুণের চেয়ে খরচ বাদে অধিক লাভ হয়। খেতে সুস্বাদু, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
একটি উঁচু জমিতে এ ধান চাষে ভাল ফলন হয়। সাধারণ অন্যান্য ধানের মতো চাষ পদ্ধতি। এই কালো ধান গাছের উচ্চতা প্রায় সাড়ে ৪ ফুট। এর পাতা, শীষ, ধান ও চাল সবকিছুই কালো। কৃষকরা মাঠের সাধারণ ধান যেভাবে চাষ, পরির্চযা, সার-কীটনাশক প্রয়োগ করেন কালো ধানের ক্ষেত্রেও একইভাবে চাষ করছেন। ইরি ধানের চেয়ে সার, কীটনাশক ও পানি খরচ কম হয়।
ব্ল্যাক রাইস ধানগাছের পাতা ও কান্ডের রঙ সবুজ হলেও ধান ও চালের রঙ কালো। তাই এ ধানের জাতটি কালো চালের ধান নামে পরিচিত। বীজ বপনের পর কোনোটির পাতা সবুজ আবার কোনটির পাতা বেগুনি হলে চালের রঙ কালোই হয়। এ কারণে কোথাও সবুজ আবার কোথাও বেগুনি রঙের ধানপাতায় চমৎকার দর্শনীয় হয়ে ওঠে ধানক্ষেতগুলো। আর এগুলো দেখতে অনেক দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসে।
তার বন্ধু মো. মামুন জানান, ইন্দোনেশিয়ায় ব্ল্যাক রাইস ধানের উপত্তি হলেও অধিক ঔষধি গুণাগুনের কারণে চীনের রাজা-বাদশাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য গোপনে এই ব্ল্যাক রাইস চাষ করা হতো। যা প্রজাদের জন্য চাষ করা বা খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। এ কারণে এই ধানকে নিষিদ্ধ ধানও বলা হতো। পরবর্তীতে জাপান, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়া এই ধান চাষ শুরু হয়। সেখান থেকে এই ধান আসে বাংলাদেশে। চীনের সপ্তদশ শতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মূল্যবান ব্ল্যাক রাইস বা কালো ধান।
উপজেলা উপ কৃষি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই ধান চাষের ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হয় না। তবে পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। আর আমাদের কাছে এই ধানের কোনো বীজ নেই। এগুলো ভারত ও চায়না থেকে আনা হয়। মূলত আমরা কৃষকদের উচ্চফলনশীল ধান চাষের ব্যাপারে উৎসাহ দেই।’
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.