‘সরকার তো ভালোর লিগা লকডাউন দিছে। আমাগো তো খাইবার নাই। কাম কাইজ কম। পোলাপান নিয়া ক্যামনে চলুম। কেউ তো আমাগো একটু সাহায্য করে না। এক সময় তো দিনে ৪০০/৫০০ ট্যাহা কামাইতাম। এহন তো ১০০ ট্যাহার কামও অয় না। পুলিশ আইলে দইরাইয়া পালান লাগে’। আক্ষেপের সুরে নিজের অসহায়ত্বের কথাগুলো বলছিলেন জুতা সেলাইয়ের (মুচি বা চর্মকার) কাজ করা বাদল দাস।
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার যন্ত্রাইল ইউনিয়নের হরিষকুল গ্রামের বাদল দাস ৩২ বছর ধরে জুতা সেলাই কাজ করেন। স্কুলে পড়াশোনা করেন নাই। বাপ দাদার পেশা ছিল জুতা সেলাই করা। দুই যুগেরও বেশি সময় আগে এ পেশার সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি। একসময় কোনরকমে জীবনযাপন করলেও করোনার কারনে আর আগের মতো রোজগার নেই। এতে বিপাকে পড়েছেন তিনিসহ মুচি সম্প্রদায়ের প্রায় সবাই। আয় কমে যাওয়ায় দুর্দিনে থাকলেও নেই তেমন কোন সরকারি বেসরকারি সহায়তা পাননি তারা।
একই পেশার কর্মরত পরিমল দাস বলেন, বাপ দাদার পেশা হিসেবে নিজেও জুতা সেলাই কাজ শুরু করেন এক যুগ আগে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ রেখে ছিলেন। কয়েকদিন যাবৎ দোকানে খুলেছেন। তবে পুলিশের টহল দেওয়ার কারনে দুপুরেই দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার জন। অভাব অনটনে এখন দিন কাটাচ্ছেন। লকডাউনের কারনে এখন ২০০ টাকা আয় করাও সম্ভব হয় না। তবুও জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হতে হয় তাকে।
উপজেলার যন্ত্রাইল ইউনিয়নের হরিষকুল মণিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রতন দাস। ১৫ বছর ধরে জুতা সেলাই করে চলে তার সংসার। করোনার কারনে কঠোর লকডাউনে মানবেতর জীবপন যাপন করেছেন পরিবার নিয়ে। তেমন কোনো সহায়তাও মেলেনি। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন।
বাদল, পরিমল ও পরিমলের মতো মুচি সম্প্রদায়ের অন্যান্যও পড়েছে চরম বিপাকে। করোনায় ভয়কে উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হলে আয় রোজগার নেই চললেই চলে। কঠোর লকডাউনে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে নবাবগঞ্জের মুচি সম্প্রদায়ের জন্য।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.