নার্সারি করে সফলতা পেয়েছেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার দীর্ঘগ্রামের খলিল মোল্লা। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল নার্সারি করার। ২০০১ সালে ৩০ শতাংশ জমিতে মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন নার্সারি। প্রথমে মেহগনি, আকাশি ও আমগাছ রোপণ করেন। বাড়ির আঙিনায় নিয়মিত বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছ রোপণ করে স্বল্প সময়ে বিক্রি করেন।
এভাবে স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও কয়েক বছরের মধ্যে গাছের গুনগতমান ভালো হওয়ায় অনেকেই আসেন তার বাগান দেখতে। নার্সারিতে ফলগাছের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ফুল গাছ ও ঔষধি গাছ। ধীরে ধীরে চারা বিক্রি বাড়তে থাকে। মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই লাভের মুখ দেখতে পান তিনি। সফলতার হাতছানিতেই নার্সারির প্রতি আগ্রহ বাড়ে। বর্তমানে ৭৫ শতাংশ জমিতেই বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা নিয়ে উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের মাদলা গ্রামে গড়ে তুলেছেন নার্সারি।
ছোটবেলা থেকেই নার্সারি করার স্বপ্ন এক সময় পূরণ হয়েও যেন বন্যায় সব স্বপ্নই ভেসে যায়। ২০০৭ সালে কয়েক দফায় বন্যায় ব্যাপক পানিতে নার্সারির প্রায় বেশির ভাগ গাছই তালিয়ে যায়। সব গাছ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এক সময় সব কিছু শূন্য হয়ে যায়। তখন এক টুকরো জমিই যেন ছিল তার ভরসা। তবুও স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়নি খলিল মোল্লার। আবারও শুরু করেন চারাগাছ রোপণ। স্বপ্ন দেখেন নতুন করে নার্সারি করার। এবার বাণ্যিজ্যিকভাবে শুরু করেন। পরিবারের অভাব অনটন থাকা সত্ত্বেও গাছের প্রতি ভালবাসা থেকেই আবার ঘুরে দাড়ান। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানেই আবার সফল তার মুখ দেখতে পান। এবার স্বপ্ন যেন সত্যি সত্যি পূরণ হয়েছে।
খলিল মোল্লা জানান, বর্তমানে ৭৫ শতাংশ জমিতে নার্সারি রয়েছে। এবছর এই জায়গায় বিভিন œবনজ, ফলদ, ঔষধি ও ফুলের চারা রোপন করেছেন। এর মধ্যে এবছর তিনি তার নার্সারিতে নারিকেল ও সুপারি চারা বিক্রি করেছেন। তার এখানে ভিয়েতনাম ও বার্মার নারিকেল ও সুপারি চারা রয়েছে। এছাড়াও নার্সারিতে প্রায় দেড় শতাধিক প্রজাতির বনজ ও ফলজ গাছ রয়েছে। এছাড়া আমের জাতের মধ্যে সূর্যডিম, হাড়িভাঙ্গা, ল্যাংড়া, আম রুপালী, হিমসাগর, গুটিফজলসহ প্রায় ৩০টি জাতের চারা রয়েছে। ফুলের মধ্যে থাই গোলাপ, রজনীগন্ধা, চায়নাটগর, হাছনাহেনা, বকুল, কৃষ্ণচূড়াসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির চারা রয়েছে। এছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছও।
তিনি আরও জানান, জীবিকার তাগিদে এই নার্সারিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। পরিবারের অভাব অনটনেও কখনোই নার্সারির স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়নি। কয়েকবার বন্যার পানিতে গাছের চারা ভেসে গেলেও তার স্বপ্ন কখনোই তাকে পিছনে ফিরতে দেয়নি। স্বপ্নবাজ হওয়ায় বারবার লোকসানের মুখে পড়েও আবারও নতুন করে শুরু করেছেন নার্সারি।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আসমা জাহান বলেন, বিভিন্ন এলাকায় যারা নার্সারি করেছেন তাদের নার্সারি নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। তবে লকডাউনের কারনে বর্তমানে পরিদর্শনে যাওয়া হয়না। এছাড়াও নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। বৃক্ষমেলায় তাদের চারা গাছ বিক্রি করারও সুযোগ রয়েছে। পোঁকামাকড় আক্রমণ থেকে মুক্তির জন্য পরমার্শ দিচ্ছি।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.