1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২১ অপরাহ্ন

বিদেশেও দেশীয় নৌকা বাইচের প্রসার ঘটাতে চায় বাইচ রক্ষা জাতীয় কমিটি

ইমরান হোসেন সুজন:
  • আপডেট : শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৪৭০ বার দেখা হয়েছে

বাংলার লোকসংস্কৃতির একটি অন্যতম অংশ নৌকা বাইচ। এক সময় এ দেশের মানুষের প্রধান বিনোদন ছিল নৌকাবাইচ। বর্ষা মৌসুম আসলেই একেক দিন একেক যায়গায় আয়োজন করা হতো নৌকা বাইচের। মাঝে এই ঐতিহ্যে ভাটা পড়ে। তবে ২০১০ সাল থেকে আবার নৌকা বাইচ উৎসবে প্রাণ ফিরতে শুরু করে। ২০১৯ সালে বুড়িগঙ্গা নদীর কামরাঙ্গীরচরে অনুষ্ঠিত হয় নৌকা বাইচ। এক বছর পর ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে একই স্থানে আরো অনুষ্ঠিত হয় নৌকা বাইচ। ২০২২ সালে পদ্মাসেতু উদ্বোধনের দিন পদ্মা নদীতে অনুষ্ঠিত হয় নৌ র‌্যালি। ২০২৩ সালে ঢাকার কোট বাড়ি ও মোহাম্মদপুর তুরাগ নদীতে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। এসব আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা ও পরিচালনা করে নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটি।

শুধু তাই নয় এসব বাইচে এই সংগঠনের নেতৃত্বে অংশ নেয় ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের কয়েক ধরণের নৌকা। সংগঠনের নেতৃত্বে দিচ্ছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা। গত ১৩ বছর ধরে তার নেতৃত্বেই চলছে সংগঠনটি। শুরুতে সংগঠনটির সদস্য সচিব, এরপর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এখন স্বপ্ন তার গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য নৌকা বাইচ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও নৌকা বাইচের প্রসার ঘটানো।

কথা হয় সফল নৌকা বাইচ সংগঠক রাশিম মোল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, শুধু গ্রাম বাংলায় নয় শহরেও নৌকা বাইচ উৎসব ছড়িয়ে দিতে চাই। ক্রিকেট, ফুটবলের মতো দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নৌকা বাইচকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাই। আর এটা করা গেলে বাংলাদেশও একদিন আন্তর্জাতিক নৌকা বাইচে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবে। সুযোগ পাবে পদকও অর্জন করার।

তিনি বলেন, বাইচ উৎসবে ভাটা পরলে ২০০৮ সালে নৌকা বাইচ ক্রীড়া সংগঠন করতে বাইচ প্রেমি, নৌকার মালিক ও ক্রীড়া ব্যাক্তিত্বদের সঙ্গে কথা বলি। কেউ আগ্রহ দেখালেওঅনাগ্রহ দেখায় বেশিরভাগ মানুষ। একপর্যায়ে আমি নিজেও হতাশ হয়ে যাই। তবে হাল ছাড়িনি। ২০০৯ সালে মাসুদ রানার সঙ্গে আলাপ করি। শুরুতেই তিনি আগ্রহ দেখান। এক বছর তাকে নিয়ে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় মিটিং করি। বিভিন্ন যায়গায় গিয়ে অন্যদেরকে যুক্ত করার চেষ্টা করি। অবশেষে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করি নৌকা বাইচ সংগঠনটি। নাম দেয়া হয় নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটি। নব গঠিত সংগঠনের আহ্বায়ক করা হয় মাসুদ রানাকে। আর আমাকে করা হয় সদস্য সচিব। ২০১১ সালে করা হয় কার্যনির্বাহী কমিটি । ওই কমিটির সভাপতি হয় মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক করা হয় ডা. শাহীনকে। আর আমাকে সংগঠন গেছাতে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। দুলাল দেওয়ানকে ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে সংগঠনে যুক্ত করা হয়। এভাবে চলতে থাকে সংগঠনের কার্যক্রম। বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সবার সহযোগিতায় এগিয়ে চলছে নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটি।

ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে প্রায় একশ বছর আগে থেকেই ইছামতি, কালিগঙ্গা ও ধলেশ্বরীসহ বিভন্ন নদীতে নৌকা বাইচ হতো। কিন্তু ২০০১ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে কাশিয়াখালী ইছামতী নদীর মুখে বেড়িবাঁধ দেয়া হয়। ভাটা পড়ে নৌকা বাইচের। বিলীন হওয়ার উপক্রম। এলাকার সেরা নৌকা নাজ, দাদা নাতি, সোনার তীর, তুফান মেল,পানির রাজ, চার ভাই নৌকার বিলুপ্তি ঘটে। ২০১০ সালে বাইচ প্রেমি রাশিম মোল্লা নৌকাবাইচ টিকিয়ে রাখতে মাসুদ রানাসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে গঠন করেন নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটি নামে একটি সংগঠন। সেই থেকে নৌকাবাইচ নেশায় মত্ত হয়ে ওঠেন তিনি। বর্ষা মৌসুম আসলে বাইচ করতেই হবে। দিন রাত বিভিন্ন জেলা উপজেলার নৌকার মালিক ও আয়োজদের সঙ্গে মিটিং করে সময় কাটান তিনি। প্রতিষ্ঠা করেছেন নবাবগঞ্জ রোইং ক্লাব। তার এই ক্লাব জাতীয় ক্রীড়া সংগঠন বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশনের এফিলেটেড ক্লাব। ২০২১ সালে বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের ৩১শে মার্চ মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার রজত জয়ন্ত্রী উপলক্ষে বাংলাদেশ রোইং ফেডারেশন রাজধানীর হাতিরঝিলে আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক নৌকা বাইচ। ওই বাইচে আর্ন্তজাতিক ও জাতীয় দুটি ইভেন্ট ছিল। আন্তর্জাতিকে বাংলাদেশের হয়ে সাদা দলের কোচ হিসেবে নেতৃত্ব দেন রাশিম মোল্লা। এই ইভেন্টে তার সাদা দল তৃতীয় স্থান অর্জন করে। জাতীয় ইভেন্টেও তৃতীয় হয় তার প্রতিষ্ঠিত নবাবগঞ্জ রোইং ক্লাব।

কথা হয় সংগঠনের ক্রিড়া সম্পাদক দুলাল দেওয়ানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০০১ সালের দিকে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় এই অঞ্চলে নৌকা বাইচ প্রয় বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালে রাশিম মোল্লা নৌকা বাইচ ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে মাসুদ মোল্লাকে নিয়ে একটি কমিটি করে। এই কমিটি আয়েজকদের সহযোগিতায় এখন প্রতি বছরই ঢাকার নবাবগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নৌকা বাইচ হয়।

সংগঠনের সভাপতি মাসুদ মোল্লা বলেন, ২০১৫ সালে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কমিটি করা হয়। কমিটিতে যুক্ত হন ক্রীড়ামোদী দুলাল দেওয়ান ও তরুন প্রজন্মের ইমরান হোসেন সুজন, শাহীনূর তুতী ও বিপ্লব ঘোষ। রাশিম মোল্লাকে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়। কিন্তু তিনি সংগঠনের ভিত্তি মজবুত করতে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। গতি আসে নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সংগঠনিক কার্যক্রমে। এলাকায় কিছুটা হলেও আগের নৌকা বাইচে উৎসবের ইমেজ ফিরে আসতে শুরু করে। এখন নৌকা বাইচে পুরস্কার দেয়া হয় পালসার মোটর সাইকেল। বিশাল বিশাল ফ্রিজ আর এলইডি টেলিভিশন। তিনি জানান, রাজধানী বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকাবাইচ করার স্বপ্ন দেখেন রাশিম মোল্লা। কিভাবে আয়োজন করা যায়? বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন রাশিম মোল্লা। উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেন বহুজনকে। ২০১৯ সালে রাজধানী বুড়িগঙ্গার কামরাঙ্গীর চরে নৌকা বাইচ করতে ৫৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইদুল মাদবরের সঙ্গে কথা বলেন। তার সঙ্গে আমাদের একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রাশিম মোল্লা বুড়িগঙ্গায় হারানো নৌকা বাইচ ঐতিহ্য ফেরাতে নৌকা বাইচ আয়োজন করার আহ্বান জানান। কাউন্সিলর রাজি হন।

আয়োজন করা হয় বিশাল নৌকা বাইচ। বাইচে সংগঠনের ৮/১০টি নৌকা অংশগ্রহন করে। এরপর ২০২১ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের(বিআইডব্লিউটিএ) উদ্যেগে বুড়িগঙ্গা নদীর কামরাঙ্গীরচর অংশে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।

সূত্র জানায়, এই সংগঠনের কার্যক্রম এখন রাজধানী ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলায়। এসব জেলার বিভিন্ন নদীতে অনুষ্ঠিত বাইচে নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটি ও নবাবগঞ্জ রোইং ক্লাবের নেতৃবৃন্দের নৌকা অংশ গ্রহণ করে। সর্বশেষ পদ্মা সেতু উদ্ধোধনের দিন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কতৃপক্ষের উদ্যোগে আয়োজিত নৌকাবাইচে অংশ নেয় কার সংগঠনের ৬টি নৌকা। এ ব্যাপারে রাশিম মোল্লা বলেন, ২০২২ সালের ২৩ শে জুন পদ্মা সেতুর উদ্ধোধনের দুই দিন আগে বিআইডব্লিউটিএ নৌকা বাইচ করতে চান বলে আমাকে জানান। সময় স্বল্পতার কারণে প্রথমে বারণ করি। পরে বাইচের নৌকার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে ৬টি নৌকা রাজি করি। পরের দিন সকালে নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করি। ২৪ জুন রাতে মাওয়া ঘাটে আমাদের নৌকা পৌছায়। পরের দিন ভোর সকালে মাদারীপুর শিবচরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। সঙ্গে আছেন সংগঠনের সভাপতি মাসুদ মোল্লা ও ক্রিড়া সম্পাদক দুলাল দেওয়ান। পদ্মার মাঝ পথে যাওয়ার পর একটু ভয় পেয়ে যাই। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকি। এরপর দুই ঘন্টা পর ৬টি ঘাসী নৌকা নিয়ে পৌছি অনুষ্ঠানাস্থালে।

কালা চান রকেটের মালিক সুবল মিস্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীতে কখনো বাইচ করি নাই। ২০১৯ সালে ও ২০২১ সালে রাশিম মোল্লার কারণে অংশ নেই। বলধারার ঐতিহ্য নৌকার মালিক আনোয়র হোসেন বলেন, আমরা রাশিম ভাই এর নেতৃত্বে বুড়িগঙ্গা নদীতে ও পদ্মায় নৌর্যালিতে অংশ নেই। পদ্মার বাইচে অংশ নিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ