ঢাকা জেলা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধার করেছে। র্যাব পরিচয়ে তারা বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করতেন। পরে ডাকাতদের স্বীকারোক্তিমতে তাদের হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশী রিভলবার, ঘটনায় ব্যবহৃত হাইএস মাইক্রো, হ্যান্ডকাফ, পিস্তল সদৃশ খেলনা পিস্তল, ফোল্ডিং ব্যাটন, ডাকাতদের ব্যবহৃত র্যাব লেখা জ্যাকেট, একটি ওয়াকিটকি, লুন্ঠিত নগদ দশ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, বেশ কিছুদিন যাবত একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাতচক্র নিজেদেরকে র্যাবের সদস্য পরিচয়ে ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোড এবং ঢাকা-মাওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে-তে বিভিন্ন পরিবহনে যাতায়াতকারী ব্যবসায়ীদেরকে বাস থেকে জোরপূর্বক নামিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে তাদের নিকটে থাকা অর্থ লুট করে আসছিলো। ডাকাতরা মূলত ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার তাতীবাজারে আসা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদেরকে টার্গেট করতো। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের স্বর্ণ ও নগদ টাকা ডাকাতি করার জন্য সংঘবদ্ধ এই ডাকাতচক্র তাতিবাজার কেন্দ্রিক এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে।
গত ৩১ জানুয়ারী দুপুরে দোহারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাহিদ ও খোকন স্বর্ণ বিক্রি করার জন্য ঢাকার তাতীঁবাজারে যায়। স্বর্ণ বিক্রি শেষে নাহিদ ৪০ লক্ষ টাকা ও খোকন ৩১ লক্ষ টাকা সাথে নিয়ে সন্ধ্যা অনুমান পৌনে ৬টায় দোহারের উদ্দেশ্যে নবকলি বাসে উঠে। অতঃপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাদের বহনকারী বাসটি ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোডের কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন কোনাখোলা নামক স্থানে পৌঁছালে একটি সাদা মাইক্রোবাস চলন্ত নবকলি বাসটিকে জোরপূর্বক থামিয়ে মাইক্রো হতে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ডাকাত (র্যাবের জ্যাকেট পরিহিত) বাসে উঠে যাত্রীদেরকে র্যাবের লোক পরিচয় দিয়ে ২ জন আসামীকে ধরতে আসছে বলে জানায়। তারপর ডাকাত সদস্যরা বাসে বসে থাকা স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাহিদ ও খোকনকে টাকার ব্যাগসহ জোরপূর্বক বাস থেকে নামিয়ে ডাকাতদের মাইক্রোতে তোলে। এরপর ডাকাতদল স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাহিদ ও খোকনের চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করে এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ ৭১ লাখ টাকা ডাকাতি করে দুই স্বর্ণকারকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের নিমতলা নামক স্থানে হাইওয়ের পাশে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।পরবর্তীতে দূর্র্ধষ এই ডাকাতির ঘটনায় কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ডাকাতদের আসামী করে একটি ডাকাতি মামলা রুজু হয়।
ঢাকা জেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দূর্র্ধষ এই ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য ডিবির একটি চৌকস তদন্তদল ঘটনাস্থলের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ এই ডাকাতচক্রকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তদন্তকালে কেরাণীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ এবং ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে ঘটনায় জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত সদস্যরা গত ১৭ জানুয়ারী কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোডে একইভাবে আরও একটি ডাকাতির ঘটনা স্বীকার করেছে। এর ফলে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় রুজুকৃত র্যাব পরিচয়ে অপর আরেকটি ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। সংঘবদ্ধ এই ডাকাতচক্র ইতিপূর্বে র্যাবের পরিচয় ব্যবহার করে ঢাকা ও এর আশেপাশে মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ এলাকায় একাধিক ডাকাতি করেছে মর্মে তদন্তে জানা যায়। গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা আছে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.