ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ৯৮ ভরি স্বর্ণ লুটের ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।
গ্রেপ্তাররা হলেন- রাজধানীর লালবাগ থানার পুলিশ কনস্টেবল মো. কামরুজ্জামান লিখন (৪২), মো. জাকির হোসেন (৩৮), শফিকুল ইসলাম ওরফে সুমন (৩৮), শরীফ (৩৬), উত্তম মজুমদার (৩৬), মো. রায়হান (৩২), আনন্দ পাল (২৭) ও নাহিদা নাহার মেমী (৩২)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ২ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার গোবিন্দল জামটি বাজারের সোলাইমান জুয়েলার্সের মালিক মো. হাবু মিয়া তার দোকানের বিশ্বস্ত কর্মচারী বরুন ঘোষের মাধ্যমে ৮পিচ লম্বা (বিস্কুট আকৃতির) তেজাবি স্বর্ণ (গলানো স্বর্ণ) ওজন ৯৮ ভরি তাঁতীবাজারের স্বর্ণের দোকানে বিভিন্ন গহনা তৈরির উদ্দেশ্যে পাঠায়।
দোকানের কর্মচারী বরুন ওই স্বর্ণ কোমরে গুঁজে অনুমান বিকেল ৩টার দিকে মোটরসাইকেলে করে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে রওনা হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জনি টাওয়ার সংলগ্ন সাজেদা হাসপাতালের গলির রাস্তায় মোটরসাইকেল রেখে অটোরিকশা ও পরবর্তীতে নৌকায় করে বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে তাঁতিবাজার স্বর্ণের দোকানে যায়।
তাঁতিবাজারের স্বর্ণের দোকান বন্ধ থাকায় কর্মচারী বরুন ঘোষ ওই স্বর্ণগুলি নিয়ে পুনরায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জনি টাওয়ার সংলগ্ন সাজেদা হাসপাতালের গলির রাস্তায় মোটরসাইকেলের কাছে আসা মাত্র আগে থেকে উৎ পেতে থাকা ডাকাতচক্রের সদস্যরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের পোশাক পরে ও নিজেদেরকে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে বরুনের কাছে অবৈধ মালামাল আছে এই অভিযোগে তাকে জোরপূর্বক ডাকাতদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে।
ডাকাতরা তাকে গাড়িতে তুলেই তার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে এবং মারতে শুরু করে। একপর্যায়ে বরুনের কাছে থাকা উল্লেখিত ৮টি স্বর্ণের বার, স্বর্ণ চালানের কাগজপত্র ও নগদ তিন হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন ঝিলমিল এলাকার ফাঁকা স্থানে গিয়ে মাইক্রোবাস থেকে বরুনকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। বরুন বিষয়টি তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোনে দোকান মালিক হাবু মিয়াকে জানায়। অতঃপর হাবু মিয়া বাদী হয়ে ৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন যার নাম্বার-১০।
এর ধারাবাহিকতায় পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান তাৎক্ষণিকভাবে ডাকাত চক্রকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন। তদন্তের শুরুতে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটিকে শনাক্ত করে। পরে জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন কবীরের নেতৃত্বে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার একটি চৌকস দল ঢাকা জেলার আশুলিয়া, সাভার, ডিএমপি এবং খুলনা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে পুলিশকে জানান, তারা পুলিশ পরিচয়ে ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত স্বর্ণ ও নগদ টাকা ডাকাতি করে থাকে।
পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে লুণ্ঠিত স্বর্ণের মধ্যে ৫১ ভরি ৬ রতি স্বর্ণ ও স্বর্ণ বিক্রয়ের নগদ ১৫ লাখ টাকা এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ হীল কাফি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) মো. শাহাবুদ্দিন কবির ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মামুন অর রশিদ প্রমুখ।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.