1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ অপরাহ্ন

যা করতে না পারলে বিলুপ্ত হবে নৌকা বাইচ

রাশিম মোল্লাঃ
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১১৬৩ বার দেখা হয়েছে

নৌকা বাইচ এ অঞ্চলে প্রায় শত বছরের ঐতিহ্য। বাংলা ভাদ্র মাস আসার আগে থেকেই শুরু হয়ে নৌকা বাইচ উৎসবের আমেজ। আর ১লা ভাদ্র খানেপুর ইছামতি নদীতে বাইচ উদযাপনের মধ্যে দিয়ে পর্দা ওঠে নৌকা বাইচের। পুরো মাস জুরে ইছামতী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে আয়োজন করা হয় নৌকা বাইচ। যে এলাকায় নৌকা বাইচ আয়োজন করা হয়, সেই এলাকার প্রায় সবার বাড়িতে পিঠাপুলি বানানোর ধুম পড়ে যায়। বাড়ির ছোট বড় সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দুপুরে খাবার খেয়ে বাড়ির বড়দের সঙ্গে ছোটরাও নৌকা বেয়ে বাইচ দেখতে যেত। ছেলে মেয়েরা বাজে কর্মকাণ্ডে জড়ানোর সুযোগ পেতো না। বাহারি রং তুলিতে আকা বিশাল বিশাল নৌকার জোরায় জোরায় টান দেখে পুরো দিন পার করতো। কিন্তু গত এক দশক ধরে এ অঞ্চলে নৌকা বাইচ আয়োজনে ভাটা পড়েছে। যদিও এখনো প্রতিবছর কমবেশি উপজেলার কোথাও না কোথাও নৌকা বাইচ আয়োজন করছে এলাকাবাসী।

তবে এখন লোকজন নৌকাবাইচ আয়োজন করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আর এর অন্যতম কারণ নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে কখনো এক নৌকার মাঝি মাল্লা আরেক নৌকার মাঝি মাল্লাদের সঙ্গে মারামারিতে লিপ্ত হয়। আবার কখনো ট্রলার নিয়ে বাইচ দেখতে আসা দর্শকে দর্শকে মারামারিতে লিপ্ত হয়। কখনো কখনো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এসব নানা কারণে কমতে শুরু করেছে নৌকা বাইচ আয়োজন। গত শনিবার ইছামতি নদীর ধাপারীতে নৌকা বাইচ আয়োজন করা হয়। লাখ মানুষের সমাগম হয়। দেশে নৌকা বাইচের মত অন্য কোনো বিনোদন নেই যেখানে এতো এতো মানুষের সমাগম হয়। কিন্তু প্রথম দিনেই হয়ে গেল মারামারি। ডুবে যার দুটি নৌকা। ফাইনাল টান না দিয়েই শেষ করতে হয় বাইচ।

বিশিষ্ট ক্রিড়া ব্যক্তিত্ব মিজানুর রহমান বলেন, নবাবগঞ্জের মাটি ও মানুষের প্রধান বিনোদন নৌকা বাইচ। প্রতি বছর রাধাকান্তপুর চকখানেপুর এলাকাবাসীর উদ্যোগে মঠের ঘাটে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হতো। কিন্তু এখন অনিয়মিত। এর প্রধান কারণ নৌকা বাইচে মারামারি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যে কারণে এখন মানুষ বাইচ আয়োজন করতে চায় না। তবে নৌকার মালিক ও মাঝি( চালক) যদি মারামারি না করার নিশ্চয়তা দেয় তাহলে কম পানিতেও আগের মতো ইছামতীর বিভিন্ন পয়েন্ট নৌকা বাইচ আয়োজন করবে বলে আমার বিশ্বাস।

কথা হয় নৌকা বাইচ পরিচালনায় দক্ষ রাধাকান্তপুরের আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাইচ আয়োজন করতে হলে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। বাইচের শুরুর পয়েন্টে একটি ট্রলার নদীর মাঝখানে বাঁধা থাকবে। সেখানে ২/৩ জন দক্ষ বাইচ পরিচালক থাকবেন।নৌকার অগ্রভাগ সমান করে না হয় পিছনের গোলই সমান করে বাইচ ছাড়ার বাশি দিবে। তাদের কথা যে নৌকা শুনবে না, তাদেরকে ডিসকোয়ালিফাই করার ক্ষমতা দিতে হবে। এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফিনিশিং পয়েন্ট। এখানেও নদীর মাঝখানে একটি ট্রলার থাকবে। এই ট্রলারেও ২/৩ জন ফুটবল খেলার রেফারির মতো দক্ষ বিচারক। একটু বড় করে টানানো হবে রঙ্গিন ফিতা কিংবা রিং। ফিনিশিং পয়েন্টের সামনের কমপক্ষে আধা কিলো মিটার বাশ কিংবা বল দিয়ে রো করে দিতে হবে। বিচারকগণ যে নৌকা বিজয়ী হবে সেই নৌকার নাম লিখে একটি চিরকুট বানাবেন। এরপর বাইচ কমিটির একজন বিজয়ী নৌকায় করে বিচারকের ওই চিরকুট নিয়ে স্টেজে দায়িত্ব প্রাপ্তে বিচারক মন্ডলীদের কাছে জমা দিবেন।
নদীতে যাতে কৌনো ট্রলার চলতে না পারে সেজন্য কমিটির ২/৩টি ভলান্টিয়ার ট্রলার থাকবে। এরপর নদীর পারে লটারী পরিচালনা ও ফলাফল নির্ধারণে কয়েকজনের সমন্বয়ে বিচারক মন্ডলী থাকবে।

তিনি আরো বলেন, ফুটবল খেলা পরিচালনা করতে রেফারী আমরা হায়ার করে আনি। কিন্তু বাইচ পরিচালনার জন্য কাউকে হায়ার করেন না। আয়োজকরা বাইচ পরিচালক প্রয়োজন নাই বলে মনে করেন। অনেক বাইচে আয়োকদের কারণেও বাইচে মারামারি লাগে।

ঢাকা থেকে গোবিন্দপুর ধাপারী বাইচে দেখতে আসা এক দর্শক বলেন, বাইচে মারামারি ও নৌকা দুটি ডুবে যাওয়ার জন্য মূল কারণ দুই নৌকার মাঝি মাল্লাদের খামখেয়ালীপনা।কমিটির ব্যর্থতা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। মালিকরাও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেননি।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ