1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ পূর্বাহ্ন

নবাবগঞ্জের ইছামতি নদীতে নৌ-র‌্যালি

নিজস্ব প্রতিবেদক.
  • আপডেট : শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২
  • ১১৩৬ বার দেখা হয়েছে

প্রতি বছরই ইছামতী নদীতে বাইচ হয়। এবার নদীতে পানি কম। তবু বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বিশাল বিশাল বাইচের নৌকার মাঝি-মাল্লার বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আর ছন্দ মাতিয়ে তোলে ইছামতির দুই তীর। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার নারী পুরুষ এ দৃশ্য দেখতে ভিড় করে। বৃহস্পতিবার ঢাকার নবাবগঞ্জে ইছামতী নদীতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এ নৌ-র‌্যালি
অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলার বান্দুরা ও নয়নশ্রী ইউনিয়নের দেওতলা ইছামতী নদীতে এ নৌ-র‌্যালি দুপুর থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীরা ভিড় করে। আশেপাশ ও দূর -দূরান্ত থেকে নারী পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ নৌকা বাইচ দেখতে নদীর তীরে জড়ো হন। বাইচে বিভিন্ন এলাকা থেকে সুসজ্জিত ৪টি নৌকা নিয়ে অংশ নেয় র‌্যালিতে। এদের মধ্যে চক খানেপুর হাসনাবাদের কালা চান রকেট, দেওতলার শিকদার বাড়ি, কান্দা খানেপুরের শেখ বাড়ি ও কৃষ্ম নগরের দাদা নাতী মোহন মন্ডল নৌকা। দর্শকদের সঙ্গ তারা একে জোড়ায় জোড়ায় টান দেয়।

রুপগঞ্জ থেকে নৌকা বাইচ দেখতে আসা মফিজুল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলের নৌকা বাইচের আকর্ষণ হলো বিশাল বিশাল ঘাসী নৌকার। নৌ-র‌্যালি হলেও একে অপরে বেশ কয়েকটি টান দিয়েছে। তবে তিনি দাউদপুর, দেওতলা, গুল্লা গোবিন্দপুর নৌকা বাইচের এখনো তারিখ নির্ধারণ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। কচুরিপানার দোহাই দিয়ে নৌকা বাইচের আয়োজন বন্ধ না রাখার দাবি জানান।

নানা প্রতিকূলতা স্বত্বেও নৌ-র‌্যালি আয়োজনের উদ্যোগ নেন নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা। আর তাকে সহযোগীতা করেন শিকদার বাড়ি, কালা চান রকেট, শেখ বাড়ি, দাদা নাতী মোহন মন্ডল, মোহাম্মদ আলী নৌকার মালিক এবং শাহ আলম মৃর্ধাসহ স্থানীয় লোকজন। এই অঞ্চলে বাইচ টিকিয়ে রাখতে মাসুদ রানা অসামান্য অবদান রাখছেন বলে জানান উপস্থিত দর্শকরা। তার এই ভূমিকাকে’নৌকা বাইচ রক্ষক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন নৌকার মালিক ও বিভিন্ন স্থানে নৌকা বাইচ আয়োজক সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ।

স্থানীয় প্রবীন ব্যাক্তি শাহ আলম মৃর্ধা বলেন, মাসুদ রানা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এই অঞ্চলে নৌকা বাইচ টিকিয়ে রেখেছেন। তিনি গত ২৫/ ৩০ বছর ধরে নৌকা বাইচ করছেন। তিনি জানান, ২০০১ সালে ইছামতী নদীর উৎপত্তিস্থল ঢাকার কাশিয়াখালী ইছামতী নদীর মুখে বেড়িবাঁধ দেয়া হয়। এর ফলে ভাটা পড়ে নৌকা বাইচের। বিলীন হওয়ার উপক্রম।

এলাকার সেরা নৌকা নাজ, দাদা নাতি, সোনার তীর, তুফান মেল,পানির রাজ, চার ভাই নৌকার বিলুপ্তি ঘটে। এ সময় তিনি একটি নৌকা কিনেন। নৌকার নাম দেন মাসুদ রানা। তার এই নৌকা ঢাকার বেরাইদ, সাভার, আশুলিয়া, নবাবগঞ্জ ও দোহারে বিভিন্ন বাইচে অংশ গ্রহণ করে সুনাম অর্জন করে। শুধু ঢাকা জেলাতেই নয় মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলাতেও তার বাইচের নৌকার সুনাম রয়েছে। এসব অঞ্চলে এক নামে চিনে মাসুদ রানা। অনেকে আবার তাকে না চিনলেও মাসুদ রানার ঘাসী নৌকাকে সবাই চিনে।

নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা, সংগঠনের সভাপতি মাসুদ রানা, নৌকা মালিক ও আয়োজক সংশ্লিষ্টদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, নৌকার মালিকগণ নানা প্রতিকূলতা স্বত্বেও এলাকাবাসীকে বিনোদন দিতে কোনো ধরণের পুরস্কার ছাড়াই নৌ-র‌্যালি অংশ গ্রহণ করেছেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, ২০১০ সালে এই বাধে পর্যাপ্ত সুইচগেট, ইছামতী নদীর ৭২ কিলোমিটার খনন করার দাবি জানিয়ে স্বারক লিপি দিয়েছি। শুনেছি বেশ কিছু দূর এগিয়েছে। কবে তা আলোর মুখ দেখবে তা কেউ জানেনা। আমরা মাননীয় এমপি সালমান এফ রহমানের হস্তক্ষেপ কমানা করছি। তিনিই পারেন আমাদের এই সমম্যা সমাধান দিতে।
নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক দুলাল দেওয়ান আক্ষেপ করে বলেন, নবাবাগঞ্জে নৌকা বাইচের ঐতিহ্য প্রায় শত বছরের। এক দশক আগেও ইছামতী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পুরো ভাদ্র্র্র্র মাস জুরে নৌকা বাইচ হতো। কিন্তু এখন নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকা ও কচুরিপানার কারণে বাইচে ভাটা পড়েছে। আজকের নৌকা বাইচটি তুইতাল-শৈল্যা- খানেপুর ইছামতী নদীতে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে কচুরী পানা থাকায় এ বছর এই আয়োজন করা গেলো না। আর এজন্য দায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০০১ সালে ইছামতী নদীর উৎপত্তি স্থল কাশিয়াখীতে বেড়িবাঁধ দেয়া হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন র্বোডরে অদক্ষতা ও অপরকিল্পতায় বাঁধরে ইছামতী-পদ্মা নদীর সংযোগ স্থলে জলকপাট (সুইস গটে) স্থাপন না করে অন্যত্র স্লুইসগটে স্থাপন করা হয়। যে কারণে নদীটি আজ বিলুপ্তির পথে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ