মাছ শিকারিদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান পিঁপড়ার ডিম। আর এই ডিম সংগ্রহের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার প্রায় শতাধিক মানুষ। এসব ডিম সংগ্রহের পর তা বিক্রি করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই চলে তাদের সংসার।
জানা যায়, সুবজে ঘেরা ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় প্রচুর গাছ থাকায় পিঁপড়ার বাসা খুব সহজে হয়। বিশেষ করে বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া, জয়কৃষ্ণপুর, বান্দুরা , নয়নশ্রী, যন্ত্রাইল, শোল্লা ও কৈলাইল ইউনিয়নের গ্রামগুলোর প্রায় শতাধিক মানুষ উপার্জনের পথ হিসেবে বেঁছে নিয়েছে পিঁপড়ার ডিম খোঁজাকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নবাবগঞ্জ উপজেলার বাগমারা এলাকায় গড়ে উঠেছে মাছের খাদ্যের দোকান। সেখানে মাছ শিকারের জন্যই পিঁপড়ার ডিম বিক্রি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম হওয়ার এর চাহিদাও বেশ। প্রতিদিন সকাল থেকেই পিঁপড়ার ডিম কেনার জন্য দোকানগুলোতে ভীড় করছেন ক্রেতা।
ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, তারা প্রতিদিন সকালে ৩-৪ জন করে একটি দল গ্রাম গঞ্জে পিঁপড়ার বাসা এবং ডিম খোঁজার কাজে বেরিয়ে পড়েন। যা চলে বিকেল পর্যন্ত। সংগ্রহ শেষে সন্ধ্যায় তা বিক্রি করেন। সেই টাকা দিয়ে চলছে তাদের সংসার।
তারা আরো জানান, সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমের পর ১-২ কেজি ডিম সংগ্রহ করা যায়। ভাগ্য ভালো ও আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ২-৪ কেজি পর্যন্ত পিঁপড়ার ডিম পাওয়া যায়। ঋতু অনুযায়ী সেই ডিম প্রতি কেজি ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি করেন তারা।
ডিম সংগ্রহকারী কলাকোপা ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের রফিকুল বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে বের হয়ে একটানা বিকেল পর্যন্ত কাজ করি। এ সময়ে কোনোদিন এক কেজি, কোনোদিন দুই কেজি আবার এমন সময় আছে আধা কেজিরও কম পিঁপড়ার ডিম পাই। এসব ডিম বিক্রি করে যে টাকা পাই তা দিয়েই সংসারটা চলছে। আমার ইনকামের আর কোনো রাস্তা নেই। তাই এটাই করি। আগে মানুষ কম ছিল, তবে এখন ডিম সংগ্রহেও মানুষ বাড়ছে অনেক।’
মাইনউদ্দিন নামের এক ডিম সংগ্রহকারী বলেন, ‘বর্তমানে আমার কোনো কর্ম নাই। আগে মিস্ত্রি কাজ করতাম। এখন সেখানেও কাজ কম। তারপরও কষ্ট করে ছিলাম। কিন্তু এখন কাজই নেই আমি বেকার হয়ে পড়ি। তাই বাধ্য হয়েই পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহের কাজ করি, আর তা বিক্রি করেই আমার পরিবারে সংসার চলছে।’
আবুল কালাম নামে এক ডিম সংগ্রহকারী বলেন, ‘ডিম সংগ্রহ করি ঠিক আছে, তবে বেচার সময় দাম কম দেয়। যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলানো একটু কষ্ট হয়।’
ডিমের পাইকাররা জানান, সংগ্রহ করা ডিম কিনে দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, শ্রীনগর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন তারা।
ডিমের পাইকার রুবেল আহমেদ বলেন, ‘সারাদিন ডিম সংগ্রহ শেষে আমার কাছে বিক্রি করতে আনে, আমি সেই ডিম কেজি প্রতি ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা দরে কিনে নেয়। আবার সেই ডিম আমি বিভিন্ন দোকানে ৮শ’ টাকা থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করি।’
ডিম ব্যবসায়ী আবু সিদ্দিক বলেন, ‘আমি বাগমারা, বান্দুরা ও মাঝিরকান্দার কয়েকজনের কাছে থেকে পিঁপড়ার ডিম পাইকারি মূল্যে কিনে রাখি। পরে মাছ শিকারি ও নবাবগঞ্জের মাছের খাদ্য বিক্রির বিভিন্ন দোকানে পাইকারি বিক্রি করি। অন্য ব্যবসার পাশাপাশি এ ব্যবসা থেকেও ভালো আয় হয়। আমি প্রতিদিন প্রায় ৫-১০ কেজি ডিম বিক্রি করি।’
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.