মাশরুম মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী, ঔষধিগুণে ভরপুর, পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও সবজি জাতীয় ফসল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর সে কারণেই এটি দিন দিন সারাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাশরুম চাষ আমাদের দেশের পুষ্টি সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আর এই মাশরুম চাষ করে ঢাকার দোহার উপজেলার রাইপাড়া ইউনিয়নের ইকরাশী এলাকায় প্রথমবারের মতো বানিজ্যিক ভাবে এ.এস অগ্রানিক মাশরুম ফার্ম নামে একটি খামার করে মাশরুম চাষে সফল হয়েছেন দুই বন্ধু মোঃ আবু বকর ছিদ্দিক ও মোঃ সাব্বির হোসেন। বর্তমানে এ খামারে রয়েছে প্রায় ৩৫০টি খড়ের স্পন প্যাকেট। আর এ প্যাকেট থেকে প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদিত মাশরুম বিক্রি করে মাসে আয়ও করছেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তাদের এই সাফল্যে সাড়া ফেলেছে গোটা এলাকাজুড়ে।
জানাযায়, দোহার উপজেরার পালামগঞ্জ এলাকার মোঃ দেলায়োর হোসেনের ছেলে মোঃ আবু বকর ছিদ্দিক দোহার-নবাবগঞ্জ সরকারী ডিগ্রী কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স এর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আর অপর বন্ধু ইকরাশী গ্রামের মোঃ সেলিমের ছেলে মোঃ সাব্বির হোসেন। তিনিও দোহার-নবাবগঞ্জ সরকারী ডিগ্রী কলেজের মানবিক বিভাগের এইচ.এস.সি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
এই দুই বন্ধু ঢাকার সাভারের মাশরুম উন্নয়ন ইন্সটিটিউট থেকে ২০২০ সালে ৩ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এই বন্ধু। প্রশিক্ষণ শেষের পরপরই মাশরুম চাষ শুরু করেন এই দুই বন্ধু।
বর্তমানে এ খামারে রয়েছে প্রায় ৩৫০টি খড়ের স্পন প্যাকেট যা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪/৫ কেজি করে মাশরুম পাচ্ছেন এই দুই বন্ধু। তাতেও মেটাতে পারছেন না ক্রেতাদের চাহিদা। তবে সরকারী সহায়তা ও স্বল্প সুদে ঋন সহায়তা পেলে এ খামার বৃদ্ধির মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন বলে দাবি করেন মাশরুম চাষী এই দুই বন্ধু।
মাশরুম চাষী দুই বন্ধু জানান, খড়, কাঠের গুড়া, গমের ভূষি, তুষ ও চুন দিয়ে আমরা নিজেরাই মাশুরুমের বীজ তৈরী করি। পরে বীজের সঙ্গে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন সেন্টার থেকে আনা টিস্যু কালচার যুক্ত করে সঠিক পরিচর্যা ও দিনে তিনবার পানি স্প্রে করার ২০ দিনের মাথায় শুরু হয় ফলন। এ কাজে তেমন একটা পরিশ্রম নেই বলে জানান তারা।
দুই বন্ধু বলেন, প্রতিদিনই উৎপাদনের থেকেও অনেক বেশি অর্ডার পেয়ে থাকি। তবে বেশির ভাগ অর্ডার অনলাইনের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন বাজার ও রেস্টুরেন্ট থেকে আসে। খামার আরো বড় করতে পারলে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রী করা সম্ভব বলে আশবাদী অদম্য এই দুই বন্ধুর।
অল্প সময়ে লাভের মুখ দেখছেন তারা। মাশরুম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের পাশাপাশি এখন চারা উৎপাদন করছেন। অনলাইনে অর্ডার পেয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া অনেকেই বাড়িতে এসে মাশরুম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
একটি মাশরুমের পলিথিনে মোড়ানো একটি বিজ তৈরি থেকে উৎপাদন খরচ পরে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর সেখান থেকে মাশরুম পেয়ে থাকেন ৬ থেকে ৭ শত গ্রাম।
বর্তমানে এই খামারে ওয়েস্টার প্রজাতির তিন প্রকার- পিংক, ধুসোর ও সাদা রংয়ের মাশরুম রয়েছে।
দুই বন্ধু জানান, মিল্কি মাশরুম বা বাংলা বাটুন নামে এক প্রকার মাশরুম রয়েছে। যা আমাদের এই অঞ্চলের রেস্টুরেন্ট গুলোতে খাবার তৈরিতে অনেক ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে ভবিষৎতে এই প্রজাতিটি চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
দুই বন্ধু আরো বলেন, আমাদের সফলতা দেখে অনেকেই মাশরুম চাষে আগ্রহ হচ্ছেন। আমরাও তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি। যেকোন স্থানে মাশরুম চাষ করা যায়। ইচ্ছা করলে সবাই মাশরুম চাষ করতে পারে। আর মাশরুম চাষ করে কেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং অল্প পুঁজিতে ভাল লাভবান হবে বলেও জানান তারা।
দোহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রশিদ জানান, মাশরুম চাষ একটি লাভজনক পেশা। এর পুষ্টিগুনও অনেক বেশি। মাশরুমকে আমরা মানুষের কাছে ঠিক মত পৌঁছাতে পারিনি। এখনো অনেকেই এ সবজির সঙ্গে পরিচিত না। মানুষের মনের এমন ধারণা বদলাতে হবে, তাদের বোঝাতে হবে, এটিও একটি সবজি, যা পুষ্টিতে ভরপুর।
তিনি বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির জোগানের জন্য এমন একটি ফসল দরকার, যা পুষ্টিকর এবং যা আবাদের জন্য কোনো উর্ব্বর জমির প্রয়োজন হয় না। সেক্ষেত্রে মাশরুম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এছাড়া এই এলাকার কোন যুবক মাশরুম চাষে আগ্রহী হলে তাকে সকল ধরনের সহযোহিতা করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.