1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন

বন্যার পানিতে ধুলিসাৎ দোহার ও নবাবগঞ্জের ১৪ কোটি টাকার ফসল

সুজন খান । প্রিয়বাংলা নিউজ২৪
  • আপডেট : সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০২০
  • ৮১২ বার দেখা হয়েছে

বন্যার ক্ষতচিহ্ন বুকে নিয়ে এখন খাঁ খাঁ করছে ঢাকা জেলার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ ফসল এবং সবজির ক্ষেত। কৃষকের শ্রমে-ঘামে আর ঋণের টাকায় একটু একটু করে বোনা কষ্টের ফসল একামাসেই ধুলিসাৎ করে দিয়েছে বন্যার পানি। বন্যার কারনে এবার চরম ক্ষতির সম্মূখিন হয়েছে এই দুই উপজেলার কৃষকরা। অপ্রত্যাশিত এমন বন্যার কারণে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে কৃষকদের। কিভাবে ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনযাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দোহার উপজেলার রাইপাড়া, কুসুমহাটি, নয়াবাড়ি, মাহমুদপুর, বিলাসপুর, সুতারপাড়া, ও নারিশা ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা এবং নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা, কৈলাইল, জয়কৃষ্ণপুর, ঘোষাইল, বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া ও যন্ত্রাইলসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে ধান ও বিভিন্ন ধরনের সবজি। কৃষকরা জানান, চলতি বছরের বন্যায় দুই উপজেলার আউশ, রোপা ও আমন ধানের পাশাপাশি মরিচ, বেগুন, ঝিঙ্গে, ধুন্দল, শসা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া ও পাটসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির ক্ষতি হয়েছে ব্যাপকভাবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের চোখে মুখে এখন শুধুই হতাশা। বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে চড়া সুদে লাখ লাখ টাকা ঋণ এনে এবং ধারদেনা করে আবাদ করা ফসল নষ্ট হওয়ায় ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দুই উপজেলার কৃষকরা।

দোহারের জামালচর গ্রামের কৃষক লিপন খান জানান, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে বিভিন্ন প্রকারের শাক-সবজি এবং মাছ চাষের ব্যবসা শুরু করেন। সবই বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যায় কারনে সবজি ও মাছ প্রজেক্টে তার অন্তত ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানান।

নবাবগঞ্জের কৃষক মাসুদ মৃধা বলেন, অনেক কষ্ট করে ধার-দেনা করে ও ব্রাক এনজিওর কাছ থেকে ঋণ গ্রহন করে সবজির আবাদ করেছিলাম। এবার ঝিঙ্গে, ধুন্দলসহ বেগুনের অনেক ভাল ফলন হয়েছিল। কিন্তু সব স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দিল বন্যার পানি। বন্যায় আমার অন্তত ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

দোহারের চরকুশাই এলাকার কৃষক রশিদ মোল্লা ও জলিল মোল্লা বলেন, আমরা দুই ভাই এনজিওর কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা লোন এনে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন সবজি রোপন করেছিলাম লাভের আশায়। ফলনও ভাল হয়েছিল। কিন্তু বন্যার পানি আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে দিল। এ বন্যায় আমাদের অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন সারাবছর কি খাব আর কিভাবেই বা আমাদের দেনা পরিশোধ করব।

কৃষক শেখ ওয়াহেদ আলী বলেন, ‘সর্বনাশা বন্যায় অমার সব স্বপ্ন আশা ভাইঙ্গা দিল। আমি লোন কইরা সবজি বাগান করছিলাম। এখন লোন আমি কেমনে দিমু।’

আরেক কৃষক শেখ আফছার জানান, শাক-সবজি বিক্রি করে চলে আমার সংসার। এবার আমার সব আশা কেড়ে নিল সর্বনাশা বন্যা। আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হল। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া আমি ঘুরে দাড়াতে পারব না।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দোহার উপজেলায় অন্তত ২২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে এর মধ্যে ১৫ থেকে ১৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। এতে কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা।
অপরদিকে, নবাবগঞ্জ উপজেলায় এবার ২ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল আমন ধানের। এরমধ্যে ১ হাজার ৫শ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ৩৩৮ হেক্টর জমিতে রোপা ধান চাষ করা হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৭০ হেক্টর জমির ধান। একই সাথে ৪৪০ হেক্টর জমিতে সবিজ চাষ করা হয়েছিল যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৩৬০ হেক্টর জমির সবজি। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমান প্রায় ১০ কোটি টাকা বলে জানায় কৃষি অফিস।

দোহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুন ইয়াকুব বলেন, এ উপজেলায় প্রায় ১৫ থেকে ১৮ হেক্টর কৃষিজমি ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ৩ কোটি থেকে ৪ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছি। তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের নাম ও ক্ষতির পরিমানের তালিকা কাজ শুরু করছি। খুব শীঘ্রই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের তালিকা প্রেরণ করব। আশা করছি অচিরেই বীজ, সার ও আর্থিক ঋণদান কর্মসূচি নিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হবো।

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাহিদুজ্জামান বলেন, উপজেলায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা প্রণোদনাসহ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সহযোগিতার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

https://www.facebook.com/priyobanglanews/videos/302672571019708/

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ