ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িকে ইসলাম সমর্থন করে না। পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে ভিন্নধর্মী মানুষের প্রতি সম্মান, সহনশীলতা এবং ন্যায়-বিচারের কথা বলা হয়েছে।
ইসলামের মূল উৎস কোরআনে কারিম এবং হাদিস পরধর্মের মানুষকে আপনের চেয়েও বেশি শ্রদ্ধা ও সম্মান করার কথা বলেছে। এছাড়াও সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
কোরআনে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আয়াত নিম্নে দলিল/প্রমাণসহ তুলে ধরা হলো:
সূরা বাকারা, আয়াত ২৫৬: “ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথকে সঠিক মত ও পথ থেকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।’ এতে নিশ্চয়ই সঠিক পথ ভ্রান্তি থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে”, যা ধর্মীয় স্বাধীনতায় জোর দেয়। অর্থাৎ কাউকে জোর করে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না এবং প্রত্যেকের ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে।
সূরা কাফিরুন, আয়াত ৬: “তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আমাদের ধর্ম আমাদের জন্য”, যা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করে। অর্থাৎ এই আয়াতটি ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা দেয় এবং অন্য ধর্মকে সম্মান জানানোর শিক্ষা দেয়।
সূরা মুমতাহিনা, আয়াত ৮: “আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের ব্যাপারে মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে নিষেধ করেন না, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেয়নি। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন”। এটি অমুসলিমদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায়বিচার করার আদেশ দেয়, যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করে না।
এছাড়াও ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক যুদ্ধ না করে অমুসলিমদের প্রতি মহানুভবতা ও ন্যায় বিচার করতেও কোরআন নির্দেশ দেয়। একে অন্যের ধর্ম পালন করতে গিয়ে কেউ কোনোরূপ সীমা লঙ্ঘন কিংবা বাড়াবাড়ি করবে না। অন্য কেউ যদি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেও ফেলে তবে ভুলেও যেন কোনো ইমানদার এ ধরনের হীন ও জঘন্য কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত না করে।
এ বিষয়টিই নসিহতস্বরূপ মুমিনদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা-উপাসনা করে, তোমরা তাদের গালি দিও না। যাতে করে তারা শিরক থেকে আরো অগ্রসর হয়ে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে। (সূরা আনআম, আয়াত:১০৮)
এছাড়াও সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যারা মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ডাকে, সাম্প্রদায়িকতার জন্য যুদ্ধ করে, সংগ্রাম করে এবং জীবন উৎসর্গ করে তারা আমাদের দলভুক্ত নয়। ’ -সুনানে আবু দাউদ : ৫১২৩
হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ক্ষুন্ন করে কিংবা তাদের ওপর জুলুম করে, তবে কেয়ামতের দিন আমি মুহাম্মদ ওই মুসলমানের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে লড়াই করব। ’ –সুনানে আবু দাউদ : ৩০৫২
তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকে হত্যাকারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেই ওই ঘ্রাণ পাওয়া যাবে। ’ –সহিহ বোখারি : ৩১৬৬
অন্য আরও একটি হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। ’ -সুনানে নাসাঈ : ৪৭৪৭
রাসূলুল্লাহ (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদিনের চিরাচরিত নিয়ম ছিল, যখন কোনো সেনাবাহিনী প্রেরণ করার প্রয়োজন হতো, তখন যুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন নসিহত, দিকনির্দেশনার পাশাপাশি একথা অবশ্যই বলে দিতেন যে, ‘যুদ্ধকালীন সময়ে বা যুদ্ধের পর কোনো মন্দির- গীর্জা-উপাসনালয় ভেঙে ফেলবে না।’ -মুসান্নাফ আবি শায়বা : ৩৩৮০৪
ইসলামে অন্য ধর্মের দেবতাকে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ সেখানে মন্দির ভাঙচুর ও মানুষ হত্যা কীভাবে বৈধ হতে পারে? একজন প্রকৃত মুসলমান কখনোই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত আসে এমন কোনো কাজ করতে পারে না।
ইতিহাস সাক্ষী, শেষ নবী হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আপনজনের অনেকেই ছিল ইসলামের কট্টর দুশমন। তথাপি নবী করিম (সা.) তাদের প্রতি নির্যাতন তো দূরের কথা, তাদের প্রতি মৌখিক অভিযোগও উত্থাপন করেননি। বরং কোনো বিরোধী যখন অসুস্থ হতো, তখন হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে দেখতে যেতেন।
হযরত রাসূলে কারিম (সা.)-এর এমন আন্তরিকতায় ওই বিরোধীদের অনেকেই ধীরে ধীরে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই যখন মুসলমানের নবীর চরিত্র, তাহলে তারা কীভাবে মন্দির-গীর্জা-উপসনালয়ে হামলা করতে পারে?
সুতরাং একজন প্রকৃত মুসলমানের পক্ষে মন্দির ভাঙ্গা তো দূরের কথা মন্দির ভাঙ্গার চিন্তা করাও সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন