চেক জালিয়াতির মামলায় ওয়ারেন্ট থাকায় রবিবার ভোরে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন (৫০) কে গ্রেপ্তার করতে তার বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে সকালে ধনচেক্ষেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত যুবদল নেতা আমজাদ হোসেন উপজেলার বান্দুরা ইউনিয়নের মৃধাকান্দা গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে। তাঁর নামে একটি অর্থ সংক্রান্ত মামলায় আদালত কর্তৃক এক বছরের কারাদ-ের রায়ের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াও তাঁর নামে বিভিন্ন থানায় রাজনৈতিক ও জমি-জমাসহ ২৫ এর অধিক মামলা ছিল বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার ভোর চারটার দিকে চেক জালিয়াতির মামলায় এক বছরের সাজাসংক্রান্ত পরোয়ানা নিয়ে আমজাদ হোসেনকে গ্রেপ্তারে তাঁর বাড়িতে যায় নবাবগঞ্জ থানা-পুলিশ। তাঁকে না পেয়ে পুলিশ ফিরে যায়। পুলিশের গাড়ি চলে গেছে জানতে পেরে আমজাদ ঘর থেকে বের হন। তবে ভোর পাঁচটার দিকে স্থানীয় কয়েকজন ধনচেক্ষেতের পাশে আমজাদকে পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যদের খবর দেন। পরে তাকে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার লাশ আনা হলে খবর পেয়ে নবাবগঞ্জ থানা-পুলিশ আমজাদের বাড়িতে গিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করে। লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য তা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহতের স্ত্রী মাহফুজা বেগম বলেন, আমি ধারণা করেছিলাম পুলিশ চলে যাওয়ায় তিনি ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। আমি জানি না আমার স্বামী কীভাবে মারা গেল। আল্লাহর কাছে বিচার চাই।’
আমজাদের ভাই জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই রাজনীতি করে। তার অনেক প্রতিপক্ষ আছে। পুলিশ তাকে ধরতে এলেও সে কেন ওখানে গিয়ে পড়ে মারা গেল? এটা আমরা বুঝতে পারছি না।’ নিহতের বড় মেয়ে আশা আক্তার বলেন, ‘বাবার মুখে ও চোখের কোণে জখমের চিহ্ন আছে। স্টোক করে মারা গেলে এ চিহ্ন কোথা থেকে এলো। তবে আমরা লাশ ময়নাতদন্তের পক্ষে ছিলাম না।
অভিযানে অংশ নেওয়া নবাবগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজিবুল ইসলাম ও দেলোয়ার হোসেন জানান, ওয়ারেন্ট থাকায় তারা আমজাদকে ধরতে গিয়েছিল। তবে তাঁরা আমজাদের বাড়িতে ঢোকেননি।
নবাবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমজাদ হোসেনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত করাটা জরুরি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
ভোররাতে গ্রেপ্তার অভিযানের বিষয়ে ওসি বলেন, তার নামে সাজার পরোয়ানা ছিল। পুলিশ ভোর চারটায় তাঁকে ধরতে যায়। বাসার দরজা না খোলায় পুলিশ ফিরে আসে। পরে স্থানীয় লোকজন মুঠোফোনে আমজাদের মৃত্যুর খবর জানান।
এদিকে আমজাদের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিএনপি নেত্রী মেহনাজ মান্নান তাঁর বাড়িতে যান। তিনি নিহতের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আমজাদ দলের একজন ত্যাগী নেতা ছিলেন। অনেক মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। তাঁর এভাবে রহস্যজনক মৃত্যুর কারণ আমরা খুঁজে বের করতে চাই।’
মন্তব্য করুন