লাঠি খেলা, ঘোড়দৌড়, গরু দৌড় বা গরুর রশি ছেঁড়া আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী কিছু খেলার নাম। গরুর রশি ছেঁড়া প্রতিযোগিতা গ্রামবাংলার একেক অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। কোথাও গরু দৌড়, গরুর রশি ছেঁড়া, আড়ং নামেও এ প্রতিযোগিতা বাঙালির ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেয়। পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে গ্রামবাংলার বিভিন্ন মেলায় এ খেলা দেখা যায়। এ খেলা এখন তেমন চোখে পড়ে না। হারিয়ে যাওয়া এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল নবাবগঞ্জের যন্ত্রাইল ইউনিয়নের চন্দ্রখোলা কালি মন্দিরের মাঠে। একই দিনে বিলপল্লী মাঠেও এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।
বাঙালির সংস্কৃতিতে বারো মাসে তের পার্বণের একটি পার্বণ হলো পৌষ সংক্রান্তি। পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি বাঙালির সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিন বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। তার মধ্যে পিঠা খাওয়া, ঘুড়ি উড়ানো, গ্রাম্য মেলা, গরুর রশি ছেঁড়া প্রতিযোগিতা অন্যতম।
চন্দ্রখোলা গ্রামে এই দিনটিকে ঘিরে ঐতিহ্যবাহী গরু দৌড় ও ৪ দিনব্যাপী গ্রাম্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার বিকালে চন্দ্রখোলা ও বিলপল্লী মাঠে এ প্রতিযোগিতা দেখতে প্রায় ৫০ হাজার দর্শনার্থী সেখানে সমবেত হয়। নানা বয়সী মানুষ দলে দলে রশি ছেড়া প্রতিযোগিতা দেখতে আসে। মুহুর্তের মধ্যে মাঠের চারপাশ ভরে ওঠে। অনুষ্ঠানস্থলকে ঘিরে বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গ্রাম্যমেলা বসে। সেখানেও উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা কমল মন্ডল জানান, প্রায় ৪০০ বছর আগে থেকে এ প্রথা পালন করে আসছে এলাকার মানুষ। প্রতি বছর এ উৎসব পালন করা হয়।
সুকদেব মন্ডল বলেন, মেলা উপলক্ষে কয়েকদিন আগে থেকে আশপাশের বাড়িগুলোতে বাড়তে থাকে অতিথির সংখ্যা। আপ্যায়নের জন্য রকমারি পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়। গ্রাম বাংলার মানুষের চিরচেনা এ গরুর রশি ছেঁড়া প্রতিযোগিতার ইতিহাস পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ টেলিভিশন গীতা পাঠক হরিদাস মজুমদার বলেন, এ মেলা হল মানুষের মিলন মেলা। এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের উৎসব। অনেক দুর দুরান্ত থেকে মানুষ এসে এই প্রতিযোগিতা সমবেত হয় ও উল্লাস করে। নগরায়নের ফলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেলাগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য পৌষ মাসের শেষের দিনে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.