1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১১ অপরাহ্ন

হত্যার পর ননদের বাড়ির উঠানে মাটি চাপা দেয়া হয় অষ্ট্রেলিয়ান নাগরিক রেহানাকে

শাহিনুর রহমান ও শামীম হোসেন সামন
  • আপডেট : শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৬০৮ বার দেখা হয়েছে

রেহেনা পারভীন (৩৭)। ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের পাতিলঝাঁপ গ্রামের লেহাজ উদ্দিনের মেয়ে। ২০ বছর আগে একই উপজেলার ছোট রাজপাড়া গ্রামের আওলাদ হোসেনের সাথে বিয়ে হয় রেহেনার। বিয়ের পর আওলাদ-রেহেনা দম্পতি স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন অষ্ট্রেলিয়ায়। তিন মেয়ে ও দুই ছেলের জননী রেহানা পারভীন। মাস তিনেক আগে বড় মেয়ে আহাদ নুর কে সঙ্গী করে দেশে আসেন রেহেনা। এর পরপরই নিখোঁজ হন তিনি।

গত একত্রিশ আগষ্ট এ ঘটনায় নবাবগঞ্জ থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন রেহেনার মা আইরিন আক্তার। একইসময় অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ ও অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশন ইন্টারপোলের মাধ্যমে নিখোঁজ রেহানা পারভিনের অবস্থান সনাক্ত ও উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সহায়তা চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে বার্তা প্রেরণ করেন। সংস্থাটির দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহমেদ মুঈদ এর নির্দেশে ঘটনাটির তদন্তে নামে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ। দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে টানা মাঠে কাজ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নুর খান সহ পুলিশের একটি দল। টানা অভিযানের সফলতা মিলে গত ১২ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার সন্ধায়। ওই রাতেই আশুলিয়া থানার নয়ারহাট মৌনদিয়া চৌরাপাড়া এলাকায় ননদ পাপিয়া আক্তারের বাড়ির সেফটি ট্যাংকির মাটি খুঁড়ে রেহেনার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

শুক্রবার দুপুরে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ড নিয়ে নবাবগঞ্জ থানায় সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহমেদ মুঈদ ও তদন্তে নেতৃত্বে থাকা দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলম।

সংবাদ সম্মেলনে আশরাফুল আলম জানান, অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালীন সময়ে স্বামীর সাথে প্রায়ই দাম্পত্য কলহ লেগে থাকত রেহেনা পারভীনের। এরই মধ্যে রেহেনা বাংলাদেশে তার নিজ নামে জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করলে তাদের পারিবারিক বিরোধ চরমে ওঠে। গত ৬ জুন রেহেনা পারভীন তার বড় মেয়ে আহাদ নূর (১৩) কে সাথে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং তার মেয়েকে ময়মনসিংহ শহরের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করায়। এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জুন তার স্বামী আওলাদ হোসেন বাংলাদেশে এসে স্ত্রীর সাথে পুনরায় বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। বিরোধের একপর্যায়ে গত ৩ জুলাই পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যদের সহযোগিতায় কৌশলে রেহেনাকে নবাবগঞ্জ থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, রেহেনাকে অপহরনের পর আওলাদ এর বোন পাপিয়া আক্তারের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে হত্যার পর লাশ গুমের উদ্দেশ্যে পাপিয়ার বাড়ির আঙিনায় সেপটি ট্যাংকির পাশে মাটি চাপা দেয়া হয়। হত্যার পর গত ১৩ জুলাই আওলাদ হোসেন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যায়।

আশরাফুল আলম জানান, এ ঘটনায় রেহেনার ননদ পাপিয়া আক্তার (৩৬) ও হত্যায় সহযোগী নবাবগঞ্জের পাতিলঝাপ গ্রামের আমজাদ হোসেন নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একইসাথে হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আওলাদ হোসেন ও রেহনা পারভীন দম্পতি অষ্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক ছিলেন।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহমেদ মুঈদ বলেন, দ্রæততম সময়ের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেপ্তারে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও ভাবমূর্তি উজ্জল হয়েছে এবং অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশন, অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ ও ইন্টারপোল কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ