1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন

প্রাথমিক শিক্ষায় খেলাধুলার গুরুত্ব

মোঃ কামরুল হাসান সোহেল, ইউএনও, নবাবগঞ্জ
  • আপডেট : সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৪৩ বার দেখা হয়েছে

আজকের শিশু আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর ও ভবিষ্যৎ কর্ণধার। ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের টেকসই ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক সুস্থতা ও বুদ্ধিমত্তা বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো খেলাধুলা। শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ তথা উভয়ের সমন্বয়ের সাথে শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠন, জ্ঞান, বুদ্ধি, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, আবেগ, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে ওঠে। খেলাধুলাই পারে শিশুর পরিপূর্ণ জীবন তৈরি করতে।

প্রাথমিক শিক্ষা হলো একটি দেশের শিক্ষার ভিত্তি। শিশু বয়সেই সবচেয়ে বেশি শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ সম্পন্ন হয়। তাই প্রাথমিক শিক্ষায় খেলাধুলার গুরুত্ব ব্যাপক। বর্তমান সময়ের যারা বিভিন্ন খেলার সেরা খেলোয়াড় শিশু বয়সেই কোনো না কোনোভাবে তাদেরও খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। দার্শনিক এরিস্টটলের ভাষায়, ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হলো শিক্ষা’। প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য শুধু পড়ালেখার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন নয়, পড়ালেখার পাশাপাশি শিশু শিক্ষার্থীর সুস্থ দেহ ও সুস্থ মন গঠনও প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য। শিশুরা খেলবে, খেলতে খেলতে তারা শিখবে। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে প্রাথমিক স্তরে শিশুর খেলাধুলায় সর্বাধিক জোর দেওয়া হয়েছে। হাতে-কলমে কিংবা খেলাধুলার মাধ্যমে শিখন-শেখানো কার্যাবলি পরিচালিত হলে সে শিক্ষা সবচেয়ে বেশি স্থায়ী হয়।

শিশু জন্মগ্রহণ করার পর থেকেই তার শারীরিক বৃদ্ধি শুরু হয়। তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকার-আকৃতি বৃদ্ধি পায়। চারপাশের পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ায় তার মনের বিকাশ ত্বারান্বিত হয়। শ্রেণিকক্ষের ভেতরের শিক্ষার মতো বাইরের শিক্ষাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তোলে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একে অপরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব তৈরি হয়। যে মনোভাব তাদের পড়ালেখায় একে অপরের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে এবং এগিয়ে যেতে ভূমিকা রাখে। শিশুদের জন্য মায়ের দুধ যেমন বাধ্যতামূলক তেমনি খেলাধুলাও বাধ্যতামূলক। খেলাধুলা শুধু মজার বা আনন্দের বিষয় না, এটা শেখারও বিষয়। এটি শিশুর জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃতির সুযোগ সৃষ্টি করে। শিশুর আবেগ প্রকাশের মাধ্যম খেলাধুলা। এটি কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

শিক্ষার্থীদের শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলে চলে না, পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের শরীর ও মনের সার্বিক বিকাশ জরুরি। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে খেলাধুলা যেন ডিজিটাল খেলাধুলা না হয়। মোবাইল, কমপিউটার কিংবা ট্যাবে গেমস খেলা থেকে শিশুদের বিরত রাখতে হবে। ডিজিটাল খেলাধুলা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। যেসব শিশুরা খেলাধুলা বা ছোটাছুটি করে তাদের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ ঠিক থাকে। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুরা নানা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শিখে।

কীভাবে পরাজয় হাসিমুখে মেনে নিতে হয়- এটা শিশুরা খেলাধুলার মাধ্যমে অর্জন করতে শিখে। নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন ও সহমর্মিতা তৈরি করতে খেলাধুলার ভূমিকা অনেক। বিভিন্ন খেলাধুলার সময় খোলা প্রান্তর, সবুজ মাঠ, উন্মুক্ত আকাশ ও চারপাশের পরিবেশের সাথে এক মিথস্ক্রিয়া তৈরি হয়। একঘেয়েমি, বিষণ্ণতা ও মানসিক চাপ কমাতে খেলাধুলার ভূমিকা রয়েছে। খেলাধুলা শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা, উপস্থিত বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। এটি শরীরের অবসাদ কমায় এবং মন ফুরফুরে রাখে। শিশুর সামাজিকীকরণে খেলাধুলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুর শারীরিক ফিটনেস ধরে রাখতে এটি ব্যাপক সহায়ক। পরিকল্পনা তৈরি ও দূরদর্শী হতে খেলাধুলার ভূমিকা রয়েছে। যেসব শিশু নিয়মিত খেলাধুলা আর পড়ালেখা করে সেসব শিশু অন্য শিশুর থেকে এগিয়ে থাকে। খেলাধুলায় মনোযোগী হলে শিশুরা মাদক থেকে দূরে থাকে, নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হয়। মাদকগ্রহণসহ যেকোনো নেতিবাচক কর্মকাÐ থেকে শিশুদের দূরে রাখতে খেলাধুলায় সময় বিনিয়োগ ভালো ফল বয়ে আনে। খেলাধুলা কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীর ও মনকে প্রফুল্ল করে। পড়ালেখার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী করে তোলে। এটি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও তা মোকাবিলা করতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। পরমতসহিষ্ণুতা বাড়াতে, শৃঙ্খলিত হতে ও দেশপ্রেম জাগ্রত করতে খেলাধুলার ভূমিকা রয়েছে। খেলাধুলার মাধ্যমে নিজের পরিচিতি তুলে ধরার যেমন সুযোগ রয়েছে তেমনি পরিবার, সমাজ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধিরও সুযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, খেলাধুলার মাধ্যমে ক্যারিয়ার গঠনেরও সুযোগ রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা শুধু পড়ালেখায় ভালো না, খেলাধুলায় বেশ আগ্রহী। দরকার শুধু সুযোগটা তৈরি করার। আগামী দিনের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়, সেরা ক্রিকেট খেলোয়াড় বাছাই করার ক্ষেত্র হতে পারে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো।

বিশ্বের বুকে একটি দেশকে তুলে ধরতে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও ব্যাপক বিনিয়োগ দরকার। সুস্থ, মেধাবী ও মূল্যবোধ সম্পন্ন জাতি গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই। শিশুর মানসিক বিকাশ যত বেশি ত্বরান্বিত হবে শিশু তত বেশি মেধাবী হবে। উন্নত বাংলাদেশ গঠনের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো শিশুদের সার্বিক উন্নতি সাধন। খেলাধুলাই পারে সকল প্রকার নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে রেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে।

লেখক: মোঃ কামরুল হাসান সোহেল
উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নবাবগঞ্জ, ঢাকা

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ