1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন

সেতুটি একদিনও ব্যবহার করা যায়নি!

ইমরান হোসেন সুজন.
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪
  • ২৭৬ বার দেখা হয়েছে

ঢাকার নবাবগঞ্জের নয়নশ্রী ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকায় খালের ওপর প্রায় এক যুগ আগে নির্মাণ করা হয় একটি সেতু। কিন্ত আজ পর্যন্ত সেই সেতুর দুই পাশে নির্মাণ হয়নি সংযোগ সড়ক। এক যুগ ধরে একাই দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। আর সড়ক না থাকায় সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না গ্রামবাসিদের। উপরন্তু তাদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সেতুটি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার এক পাশে একা দাঁড়িয়ে আছে সড়কবিহীন সেতুটি। নেই কোনো সংযোগ সড়ক, অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ করায় একদিনের জন্যও ব্যবহার করতে পারেনি পথচারীরা। দুর্নীতি ঢাকতে সেতু নামফলকটিও উঠিয়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। সেতু না থাকায় এবং সামান্য বৃষ্টিতে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়ায় স্কুল শিক্ষার্থী ও পথচারিদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিতেও বেগ পেতে হয় স্থানীয়দের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অব্যবহৃত সেতুটি বখাটেদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বখাটের আড্ডা। উৎশৃঙ্খল যুবকদের অশ্লীল কথাবার্তায় বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয় বলে জানান সেতুর পাশ্ববর্তী বাসিন্দাদের।

স্থানীয় জানান, ২০১৩ সালে নয়নশ্রী ইউনিয়নের শান্তিনগর থেকে নলগোড়া হয়ে যন্ত্রাইল ও শোল্লা যাওয়ার জন্য খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা সেতুটির দু’পাশে মাটি ভরাট না করায় একদিনও ব্যবহার করতে পারেনি পথচারিরা। পাশাপাশি সেতুটি না হওয়ায় কাঁচা সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। সেই সাথে কাঁচা সড়কটি দিয়ে কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে বিক্রিকৃত মাটি মাহেন্দ্র দিয়ে সরবরাহ করায় রাস্তাটি চলাচলের আরো অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে যোগাযোগের সুবিধাবঞ্চিত রয়ে যাচ্ছে এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. সুমন জানান, সেতুটি আমাদের কোন উপকারেই আসে নাই কারন সেতুর দু’পাশে কোন মাটি নেই। শান্তিনগর প্রাইমারি স্কুল, মাদ্রাসা রয়েছে সেখানে শিক্ষার্থীদের যেতে খুব কস্ট হয়। মানুষের বাড়ির উপর দিয়ে চলাচল করলে অনেক মানুষ কটু কথা বলে। আমরা খুব সমস্যায় আছি। চলাচলের জন্য সেতুর দু’পাশে মাটি বা আলাদা কালভার্ট করা উচিত।

ববিতা আক্তার বলেন, আমাদের এলাকায় রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলতে পারে না। কেউ অসুস্থ হলে মরে যাওয়ার অবস্থা। হাসপাতালে নিতে নিতেই শেষ। নির্বাচনের আগে চেয়ারম্যান আশা দেন রাস্তা ঠিক করে দিবেন, কিন্ত ভোট হলেই শেষ।

শান্তিনগরের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। প্রতি সপ্তাহ ঢাকা ও নবাবগঞ্জ সদরে যেতে হয় ডাক্তার দেখাতে। সেতুটির কারনে বাসার সামনে গাড়ি আসতে পারে না। খুব কস্ট হয় বাজার পর্যন্ত হেঁটে যেতে। তিনি আরো বলেন, এমন সেতু বানাইছে মানুষ তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত মনে হয় একটা কুত্তাও উঠতে পারে নাই। কারন সেতুর দুইপাশে কোন মাটি নেই।

স্থানীয় বসিন্দা মিদুল বলেন, আমরা স্বাধারণত সেতু নিচ দিয়ে হেঁটে চলাচল করি। কিন্ত বর্ষার সময় আমাদের কস্ট আরো বেঁড়ে যায়। তখন সেতুর দুইপাশ পানিতে ডুবে যায়। সেতুটি কোন কাজেই আসে না। এখন এটাকে ভেঙে এখানে কালভার্ট করা উচিত। তাহলে আমরা চলাচল করতে পারতাম। রাস্তাটাও সংস্কার হতো।

গৃহবধূ আনোয়ারা বেগম বলেন, ওই সেতু কাজে তো একদিনও লাগেনি বরং ক্ষতি হয়েছে। সেতু এখন মাদকসেবী ও বখাটেদের আড্ডা। বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে পুলাপানের আনাগোনা থাকে। রাতে ঘুমাতেও পারি না ওদের চিল্লাচিল্লিতে। বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করে, আমরা প্রতিবাদও করতে পারি না। বাড়ির বৌ ঝি’দের নিয়ে খুব বিপদে আছি। তবে মাঝে মাঝে পুলিশ আসে, তখন সবাই পালিয়ে যায়।

আ. জলিল নামে এক বৃদ্ধ বলেন, এটা তো সেতু করে নাই, পুলাপানের গাঁজা খাওয়ার আড্ডার জায়গা বানিয়ে দিছে। সন্ধ্যার পর এলেই গাঁজার গন্ধে থাকা যায় না। গাঁজা খাওয়া, তাঁস খেলায় মগ্ন থাকে পুলাপান। আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের উপর জুলুম করে। তাই প্রতিবাদও করি না।

নয়নশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পলাশ চৌধুরী বলেন, সেতুটির কারনে মানুষের চলাচলের খুব কস্ট হচ্ছে। আমি একাধিকবার মাসিক সমন্বয় মিটিং এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি কিন্ত উপজেলা পরিষদ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ১৯৯৮ বন্যার কথা চিন্তা করে ২০১৩ সালে সেতুটি হয়েছিল। যেন বর্ষায় সেখানে গরু ছাগল আশ্রয় নিতে পারেন। তবে আশেপাশের লোকজন জমি না দেওয়ায় এ্যাপোজের কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

উপজেলা প্রকৌশলী জুলফিকার হক চৌধুরী বলেন, এটা আমাদের প্রকল্প না। এলজিইডি’র কোন ব্রিজ এ্যাপ্রোস ছাড়া নাই। আপনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) অফিসে যোগাযোগ করেন।

এব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হাসান আহমেদ বলেন, আমি ব্যাপারটা অবগত ছিলাম না। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। দ্রæত সরজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। তবে যেহেতু ১০ বছরের উপরে হয়ে গেছে তাই নথি পাওয়াটা দুস্কর।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ