1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ অপরাহ্ন

পুলিশের জালে ভূয়া পুলিশ আলকাম

রিপোর্টার:
  • আপডেট : শুক্রবার, ৩১ মে, ২০২৪
  • ২০৬ বার দেখা হয়েছে

প্রকৃত নাম আলকাম হলেও তিনি নিজেকে কখনো কামরুল, কখনো আরিফ আবার কখনো ডলার বলে পরিচয় দিতেন। নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে সখ্যতা গড়ে তুলতেন নারীদের সাথে। সেই সখ্যতা এক সময় পরিণত হতো অবৈধ মেলামেলায়। পরে ঘনিষ্ঠ মহুর্তের ছবি ও ভিডিও করে নারীদের কাছে দাবি করতেন টাকা। তার চাহিদা মত টাকা না দিলেই গোপনে ধারনকৃত ভিডিও ও ছবি যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এভাবে চলছিল আলকামের প্রতারণা। তবে অবশেষে ঢাকার নবাবগঞ্জে এক ছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন বহুরূপী আলকাম ওরফে কামরুল ওরফে ডলার ওরফে আরিফ। গ্রেপ্তারের পর ফাঁস হয়েছে ‘আলকামের আকামের’ কাহিনী।

জানা যায়, প্রতারক আলকামের গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জের আগলা ইউনিয়নে হলেও সে বহুদিন আগে থেকেই রাজধানী ঢাকায় বসবাস করেন। তার মা ও বাবার মধ্যে সম্পর্ক নেই। বাবা ও মায়ের একাধিক বিবাহের কারনে সে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। এজন্য এলাকার লোকজনও তাঁকে চেনেন না। তবে আলকাম খুবই চতুর। এক প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে তার এমন প্রতারণায় পথ চলা শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পোশাক পড়ে ছবি তুলে তা ছাড়তেন যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এছাড়া বিলাসী জীবনযাপনের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও আপলোড দিতেন তার ফেসবুকে। এসব দেখে যাতে মেয়েরা দ্রæত আকৃষ্ট হন তার প্রতি। প্রতারক আলকামের ব্যবহৃত সুজকি মোটরসাইকেলের সামনে লাগানো থাকতো কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম স্টিকার। নিজেকে কখনো পরিচয় দিতে পুলিশ, কখনো সিআইডি অফিসার আবার কখনো কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সদস্য। সবশেষ নবাবগঞ্জের ঐ স্কুল ছাত্রীর দিকে তার দৃষ্টি পড়ে। পরিবার থেকে বিয়ে না দেওয়ায় মেয়েটিকে অপহরণ করে ধর্ষণ, মোবাইলে ধর্ষণের দৃশ্য ধারন, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে টাকা দাবি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ছড়ানোর সহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে ঐ ছাত্রীর পরিবার। সে মামলাই এখন পুলিশের জালে আলকাম।

শুক্রবার সকালে দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান, কয়েক মাস আগে আলকাম নিজেকে সিআইডি পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে ভিকটিম ছাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল নম্বর নেন। পরে ভিকটিমের মাকে কল দিয়ে বিয়ের প্রস্তার দেয়। তবে মেয়ের নাবালিকা হওয়ায় এ মহুর্তে বিয়ে সম্ভব নয় জানালে আলকাম তাদের আশ্বস্ত করেন ভিকটিমের বয়স ১৮ বছর হলে বিয়ে করবেন। গত ৩১ মার্চ দুপুরে ছাত্রী গালিমপুর বাজারে ঔষধ কিনতে গেলে তাকে অপহরণ করে ঢাকার একটি হোটেলে নিয়ে যায় আলকাম। সেখানে মেয়েটিকে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারিরীক সম্পর্ক করে এবং ঘনিষ্ঠ মহুর্তের ছবি ও ভিডিও করে রাখেন। এরপর ভিকটিমকে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় নিয়ে সেখানেও একাধিকবার শারিরীক সম্পর্ক করে ভিডিও করে রেখে ১ মাস পর মেয়েটিকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন আকলাম। কিছুদিন পর বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে ধারনকৃত অশ্লীল ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে। বিষয়টি জানতে পেরে আকলামের সাথে যোগাযোগ করেন ভিকটিমের পরিবার। এসময় আকলাম তাদের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তবে টাকা দিতে অস্বীকার করায় আলকাম পুনরায় যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতে থাকেন।

এঘটনায় ঐ ছাত্রীর মা বাদি হয়ে আকলামকে প্রধান আসামী করে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করলে তদন্তে নামে পুলিশ। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানের নির্দেশে দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলমের তত্বাবধানে নবাবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহজালালের নেতৃত্বে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযান চালিয়ে মামলা হওয়ার মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি মাধ্যমে বৃহস্পতিবার মিরপুর মডেল থানা এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তার নিকট হতে একটি সুজকি মোটরসাইকেল, একটি স্যামসাং স্মার্ট মোবাইল ফোন, পুলিশের পোশাক, একটি বেল্ট ও এক জোড়া পুলিশের বোট উদ্ধার করা হয়।

এএসপি আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিমকে অপহরণ করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে পর্ণ ভিডিও তৈরী করার কথা স্বীকার করেছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

গ্রেপ্তারকৃত মো. আলকাম নবাবগঞ্জের আগলা ইউনিয়নের ছাতিয়ার আব্দুল ওহাবে ছেলে। সে ধামরাই উপজেলার সোয়াপুরের আনন্দনগর গ্রামে থাকতেন।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ