দেশে বজ্রপাতে মারা যাওয়া বেশিরভাগই কৃষক। গত ৩রা মে একদিনেই মারা গেছে ১১ জন। আহত হয়েছে ৯ জন। এ বছরও এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া বেশির ভাগই কৃষক। এ লক্ষ্যে কৃষকের জীবন রক্ষায় মাঠে কাজ করা কৃষকদের তিন দফা নির্দেশনা পালন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোরর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম (এসএসটিএফ)।
নির্দেশনা গুলো হলো, ১. খোলা আকাশের নিচে থাকলে আকাশে কালো মেঘ দেখার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ। ২. বৃষ্টি হলে গাছের নিচে অবস্থান না করা। ৩. খোলা আকাশে কাজ করার সময় পায়ে জুতা পায়ে , মাঠে থাকা অবস্থায় হঠাৎ বজ্রপাত হলে নিচু হয়ে শুয়ে পড়া।
শনিবার ও রবিবার দুই দিনে দুই শতাধিক কৃষকের মাঝে সংগঠনের এই তিন দফা নির্দেশনা সহ বজ্রপাত সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এসএসটিএফ। দুই দিনে এসএসটিএফ’র বেশ কয়েকটি প্রতিনিধি দল মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান ও ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ধান কাটায় ব্যাস্ত কৃষকদের গ্রুপ করে বজ্রপাত থেকে নিজেদের জীবন রক্ষার কৌশল জানানো হয়। সেশনটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা, গবেষণা সেলের প্রধান আব্দুল আলিম, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ ও স্বেচ্ছাসেবী মোঃ শরিফুল ইসলাম । এ সময় কৃষকদের মাঝে কোমল পানি, শরবত ও স্যালাইন বিতরণ করা হয়।
কৃষকদেরকে বলা হয় খোলা আকাশে কাজ করার সময় জুতা পায়ে রাখা, বজ্রপাত হলে নিচু হয়ে শুয়ে পড়া। তবে আকাশে কালো মেঘ দেখা গেলে মাঠে না থেকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেয়ার কথা বলা হয়। বৃষ্টি হলে গাছের নিচে অবস্থান করা বিপদজনক। তাই যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ক দ্রুত মাঠে মাঠে আশ্রয় কেন্দ নির্মানের জোর দাবি জানান। বছরের মার্চ থেকে জুন মাস এই চার মাস কৃষকদের মাঝে বজ্রপাত সচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার কথাও বলেন।
ফোরামের গবেষণা সেলের প্রধান আবদুল আলীম জানান, ‘বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ দুইটি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে গাছ বিশেষ করে মাঠের উঁচু গাছ কেটে ফেলা। হাওর অঞ্চলের মাঠে আগেও তেমন গাছ ছিল না। এখন অন্যান্য এলাকার গাছও কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে মাঠে বা খোলা জায়গায় যে সব মানুষ থাকেন বজ্রপাতের এক কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিবাহী উঁচু জিনিস হিসেবে সেই মানুষকেই পায়। মানুষ না থাকলে মাঠের গবাদি পশু। ফলে মানুষ মারা যায়, গবাদি পশুও মারা যায়।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করেন ওই সময় গাছের তলায় আশ্রয় নেয়া নিরাপদ। আসলে এটা ঠিক নয়। আশ্রয় নিতে হবে বাড়িঘরে বা পাকা স্থাপনার নিচে।’
তার মতে, ‘সনাতন পদ্ধতিতে লাইটেনিং অ্যারেস্টার লাগালে বজ্রপাতে হতহতের হাত থেকে বাচা যায়। এতে খরচ কম। একটি বাড়িতে ১০ হাজার টাকা খরচ করেই লাগানো যায়। আর সরকার হাওড় এবং খোলা জায়গায় এগুলো লাগানোর উদ্যোগ নিতে পারে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.