PRIYOBANGLANEWS24
৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ৮:৫৩ পূর্বাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

অনুপ্রেরণার গল্প: বাঁধা পেরিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সিবিসি’তে কর্মরত আব্দুল্লাহ আল ইমরান

আব্দুল্লাহ আল ইমরান। চানেল ২৪ এর ‘সার্চলাইট’ এ একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে দেশ জুড়ে পেয়েছেন খ্যাতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবেদনগুলো করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন তরুন এ সাংবাদিক।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ব্যুরোতে ইন্টার্নশীপ শেষে এ বছরের এপ্রিলে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে যোগ দিয়েছেন বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যম কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন সিবিসি’তে। টেলিভিশনটির প্রাইম ইনভেস্টিগেটিভ শো দ্য ফিফথ এস্টেট’ এ অ্যাসোসিয়েট প্রডিউসার হিসেবে যোগ দিয়েছেন। যোগ দিয়েই বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে নিয়ে তার করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি সর্বক্ষেত্রে প্রশংসিত হয়েছে।

গত ২৬ নভেম্বর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়ায় অনেকে আতœহত্যার পথ বেছে নেন। যা দেখে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল ইমরান। খাদের কিনারা থেকেও কিভাবে ফিরে আসা যায় সেই গল্পই লিখেছেন সেই পোস্টে। নিজের পথচলাও সহজ ছিলেন না বলে জানান ইমরান। শত বাঁধা উপেক্ষা করে কর্মের মাধ্যমে আজ তিনি দেশের সীমানা পেড়িয়ে উজ্জলতা ছড়াচ্ছেন প্রবাসেও।

গত ২৬ নভেম্বর আবদুল্লাহ ইমরান তার ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:

এইচএসসির ফল বের হতে না হতে অন্তত ৫টি সম্ভাবনাময় প্রাণ ঝরে গেছে। স্বাভাবিকভাবে নয়, এদের প্রত্যেকেই আত্মহত্যা করেছে! প্রশ্নফাঁসের যুগে সমান্য এক পরীক্ষার ফলের কাছে হেরে গেল পরিবারের ভালোবাসা, জিতে গেল তথাকথিত জিপিএ-৫, যা কিনা টাকায়ও কিনতে পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়!

পিরোজপুরের অশ্রুতী ঘরামী, ফরিদপুরের সাদিয়া আক্তার, গাজীপুরের ফারজানা আক্তার, নেত্রকোনার শ্রাবণী দেবনাথ, যশোরের তামান্না আক্তার তমা- মৃতের এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

তের হাজার কিলোমিটার দূরে বসেও অনলাইন পত্রিকাগুলোয় এসব ঘটনা পড়ে নিজের জীবনের ভয়ানক এক দূর্ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। খাদের কিনার থেকেও কিভাবে ফিরে আসা যায়, মনে হলো এই গল্পটা আজ আরও একবার বলা দরকার।

আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল একটা দূর্ঘটনা। হ্যা, কোনো উজ্জ্বল সফলতা নয়, একটা ব্যর্থতায় মোড়া দূর্ঘটনাই সফলতার পথে আমাকে জাগিয়ে রেখেছিল ভোর থেকে ভোর।

এই ছোট্ট জীবনে যা কিছু অর্জন, যতটুকু এগোতে পেরেছি- তার পুরোটাই যে ঐ ঘটনায় পাওয়া জীবনবোধের কারণেই, তা আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। ঐ ঘটনার সুতীব্র ধাক্কা শুরুতে আমার সবকিছু থামিয়ে দিলেও পরবর্তীতে এগিয়ে যেতে এমন আরেক জোরালো ধাক্কা দিয়েছিল যে, সে গতি আর থামেনি কথনো। এখনো চলছে।
গতকালকের এইচএসসির ফলে চেনা-জানা বেশ কিছু সম্ভাবনাময় ছেলে-মেয়ের প্রত্যাশীত ফল হয়নি। খারাপ ফলকারীদের মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। আর বুঝতে পারছি বলেই, যে গল্প সহসাই বলা হয় না, সে গল্পের ঝাঁপি খুলে দিতে চাই। যদি খাদের কিনার থেকে আমার ফিরে আসার গল্পটা তাদের একটু হলেও অনুপ্রাণিত করে!
নিজের ছোট্ট জীবন থেকে বুঝেছি, যে কোন মুহুর্তে, যে কোন যায়গা থেকেই মানুষ ঘুরে দাড়াতে পারে। শুধু লাগে একটা দৃঢ় প্রত্যয়। আসলে শেষ বলে কিছু নেই, ব্যর্থতার মাঝেই লুকিয়ে থাকে বড় কোন বিজয়ের প্রেরণা।
আমার ঘটনাটা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল সে সময়ে। পরবর্তীতে আমার বয়ানে, পুরো ঘটনার ছোট্ট একটা বিবরণ ছাপা হয়েছিল প্রথম আলোর ছুটির দিনে। চলুন, সেটি আগে পড়ে আসা যাক-

‘আমার এইচ.এস.সি পরীক্ষা চলছিল। অর্থনীতি ২য় পত্রের পরীক্ষা দিতে ঘর থেকে বেরোনোর আগে অসুস্থ মাকে সালাম করলাম। আমার স্নেহময়ী মা মলিন কন্ঠে বললেন, ভাল করে পরীক্ষা দিস বাবা, এ প্লাস পেতেই হবে।
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। রিক্সায় চড়ে পরীক্ষা কেন্দ্র খুলনা নৌ-বাহিনী কলেজে যেতে যেতে হিসাব কষি পূর্বেকার পরীক্ষাগুলোর। বুঝতে পারি কেবল আজকের পরীক্ষাটা ভাল হলেই সব মিলিয়ে আমার মায়ের স্বপ্নটা পূরণ হতে পারে। এরপর আমি ঢাকায় যাবো কোচিং করতে, ভর্তি হবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং রাশি রাশি আনন্দের উপকরণ নিয়ে হাজির হবো আমার অভিমানি মায়ের সামনে- এ রকম নানা রঙের স্বপ্নগুলো রিক্সার চাকার ঘূর্ণণের সাথে সাথে আমার মনের মধ্যে উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে যেতে লাগল। আসলে মানুষ তো স্বপ্নে বাঁচে- না কি স্বপ্ন মানুষকে বাঁচায়!

কিন্তু অপ্রত্যাশিত কোন আঘাতে মানুষের সারা জীবনের স্বপ্ন কাঁচের মত ঝুরঝুর করে ভেঙে যেতে পারে তা কেবল গল্প উপন্যাসে পড়েছি, বাস্তবে উপলদ্ধি করিনি কোনোদিন। সৃষ্টিকর্তা পরীক্ষার হলে তারই বাস্তবায়ন ঘটালেন আমাকে দিয়ে।

সকাল ৯টা ৫০ মিনিট। লেখার জন্য শিক্ষক আমাকে যে খাতাটি দিলেন তা বান্ডিলের উপরে থাকায় ভাঁজপড়া ছিল। আমি খাতাটি পরিবর্তন করে দিতে বললে হল পরিদর্শক আমাকে না করে দেন। আমি পুনরায় অনুরোধ করলে শুরু করেন অকথ্য ভাষায় গালাগাল। প্রতিবাদ করতে গেলে আমাকে ‘বেয়াদব’ বলে আখ্যায়িত করেন। পরীক্ষার হলে একজন শিক্ষকের এমন আচরণে বিস্মিত আমি চুপচাপ সজল চোখে ভাঁজপড়া খাতাতেই পরীক্ষা দেওয়া শুরু করি।
প্রশ্ন পাবার পর ঘটে যাওয়া ঘটনা ভুলে আমি লিখতে শুরু করি। দুই ঘন্টা লেখার পর হঠাৎ নৌ-বাহিনী কলেজের অধ্যক্ষ আমাদের রুমে প্রবেশ করেন। প্রচন্ড চিৎকার করে বলেন- হোয়ার দ্যা বাসটার্ড? সমস্ত রুম স্তব্ধ। সেই শিক্ষক আমাকে দেখিয়ে দিলে রুদ্রমূর্তির অধ্যক্ষ ছো মেরে আমার খাতাটি নিয়ে যান।

এরপরের ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে।

শিক্ষকের সাথে অসাদাচরণের অভিযোগে আমাকে বহি:স্কারের প্রস্তুতি চলছিল। আমি শুধু অসহায় চোখে দেখছিলাম কিছু ক্ষমতাবান মানুষ কত নিপুঁন ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন।

শেষবারের মত আমি যখন অধ্যক্ষের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলাম- ‘স্যার, আমার কোন অপরাধ নেই, আমার জীবনটা নষ্ট করবেন না।’ তখন আমি তার চোখে মমতার পরিবর্তে হায়নার ক্রোধ দেখেছিলাম। যখন কিছুতেই আমি তার পা ছাড়ছিলাম না তিনি তার বুট জুতার তীব্র লাথি আমার বুকে বসিয়ে দিলেন। মেঝেতে লুটিয়ে অজ্ঞান হবার আগে বছর বছর ধরে গড়ে তোলা মায়ের স্বপ্ন, বিশ্বাস আর ভবিষ্যৎকে একজন সৈনিকের বুটজুতার তলে পিষ্ট হতে দেখলাম।

এরপর কতকিছু হল। মানব বন্ধন, তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে স্বারক লিপি প্রদান, উপদেষ্টার নির্দেশে তদন্ত কমিটি, বোর্ডের চেযারম্যানের দু:খ প্রকাশ, ছবিসহ পত্রিকার পাতায় বিশাল বিশাল নিউজ… আরও কত কি!
আমি তখন হাসপাতালর বিছানায় শুয়ে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন এক স্বপ্ন ভাঙা তরুন। কিন্তু কিছুতেই অপরাধীদের কোন কিছু হল না। আমার অভিমানী মা আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদেন। আমার স্বপ্ন ভাঙার কষ্টের চাইতে তার স্বপ্ন ভাঙার কষ্ট যে অনেক বেশী !

আমার বন্ধু তমাল, শাওন, তানায, রবি, ওয়ালিদ, পলাশ, মহিউদ্দিন, মোহাইমিন, শিমুল, ইয়াহিয়া, কিনুরাম স্যার, সাংবাদিক শাওন ভাইরা আমাকে স্বাভাবিক কারার জন্যে অনেক করেছেন।

আমার ঘুম ঘুম দিন যেত, ঘুম ঘুম রাত। মায়ের অনুপ্রেরনায়, বন্ধু, প্রিয়জনদের প্রচেষ্টায় অসংখ্য নাম না জানা মানুষের প্রার্থনায় আমি আবার মানসিক ভাবে ঘুরে দাড়াই। যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, যা হবার হয়েছে বাবা। মনে করো এটা একটা দূর্ঘটনা।

সব ভুলে আমাকে আবার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বলেন। আমি ফের পরীক্ষা দিলাম। ভাল ফলাফল করলাম। এ প্লাস না পেলেও মানবিক বিভাগ থেকে ৪.৮০ পেলাম। এরপর পরিশ্রম আর প্রচেষ্টায় ভর্তি হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আমার মায়ের মলিন মুখে ঠিকই হাসি ফুটল তবে অনেক বৃষ্টি ঝরার পর। আমার জীবন থেকে যারা একটি বছর কেড়ে নিয়েছিল তাদের কোন বিচার হয়নি। দুটি তদন্তের একটিরও রিপোর্ট কেউ জমা দেননি। এডিসি (শিক্ষা) আমাকে একদিন ডেকে নিয়ে বললেন, ‘ইমরান আমি দু:খিত। এ রিপোর্ট জমা না দিতে উপরের চাপ আছে!’
অসহায় আমার কারও উপর কোন অভিযোগ নেই। আমি যে হারিয়ে যাইনি এটাই জরুরী খবর। সব সম্ভবের এ দেশে আমার স্বপ্ন গুলো যে ‘বুটের আঘাত’ নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারেনি এটাই বা কম কিসে !”

উপরের লেখায় বছরজুড়ে আমার স্বপ্ন ভাঙার কষ্টের কোন বিবরণ দেয়া হয়নি। ইচ্ছে করেই দেইনি। কষ্টের কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। আজ বলছি, যদি তা কারো অনুপ্রেরণা হয়!

একটা প্রেক্ষাপট বলা জরুরি। যে সময়ে আমার সঙ্গে অন্যায়টা ঘটে, আমি তখোন খুলনার সেরা বিতার্কিক। প্রথম-আলো বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেন্ট যোসেফস স্কুলের হয়ে স্কুল পর্যায়ে, পরেরবার পাবলিক কলেজের হয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পর পর দুই বছর সেরা বক্তা হয়েছিলাম আমি। ছিলাম ছোটকাগজ জলজের সম্পাদক, আমার কলেজের কালচারাল প্রিফেক্ট এবং বিতর্ক দলের দলনেতাও।

বন্ধুসভার এ প্লাস সংবর্ধনা, ম্যাথ অলিম্পিয়াডসহ নানা অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করে নাম কুড়িয়েছিলাম ততোদিনে। বিতর্ক কর্মশালাগুলোতে আমার অর্জনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ডাক পড়তো ডিবেটিং সোসাইটি থেকে। স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকাগুলোতে ঐ সময় নিয়মিত ছাপা হতো আমার ছোট গল্প, ফিচার। এমনকি যশোর শিক্ষাবোর্ডের তৎকালিন চেয়ারম্যান আমীরুল আলম খানের সঙ্গেও একই পত্রিকায় নিয়মিত লেখা ছাপা হতো আমার!

এতকিছু করা আমি হুট করে অমন পরাজয় মেনে নিতে পারছিলাম না কিছুতেই। চোখের সামনে সব বন্ধুকে ভালো ফল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে দেখা আর নিজের পরিণতির দিকে তাকালে রাতভর ঘুম হতো না। মনে হতো মরে যাই!

সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম। চলে গেলাম নানাবাড়ি। চেনা জগতে আর ফিরবোই না- এই ছিল পণ! গ্রামের একটা স্কুলে বাচ্চাদের পড়ানো শুরু করেছিলাম। প্রতিরাতে স্বপ্ন ভাঙার কষ্টে মুষড়ে যেতাম। ফের পরীক্ষা দিতে পারব- এমন কোনো মনের জোরই অবশিষ্ট ছিল না। কিন্তু আমি ফিরলাম। মনের জোরেই ফিরলাম।
তারপর?

এইচএসসিতে ভালো ফল করলাম।
স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলাম।
বিটিভির ২১তম জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেরা বক্তা হলাম (সংসদীয় ধারা)।
ঢাকা বিশ্ববদিল্যায় আইটি সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করলাম। যেটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় ক্যাম্পাসভিত্তিক আইটি সংগঠন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষেই স্বপ্নের পেশায় প্রবেশ। একটি জাতীয় দৈনিকে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে শুরু। এরপর প্রথমসারির একটি টেলিভিশনে অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে ঢাবি, মেডিকেল, ৫ ব্যাংকের প্রশ্নফাঁস, শাহেদ, অর্থপাচারসহ দেশজুড়ে আলাচিত অসংখ্য অনুসন্ধানের খবর তো আপনাদের অনেকেরই জানা। পেয়েছি পুলিশের ‘আউটস্টান্ডিং জার্নালিজম এওয়ার্ড’ এবং টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার (টিআইবির বাইরে কোথাও পুরস্কারের জন্য রিপোর্ট জমা দেইনি আমি কখনও)। এছাড়াও গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের বিচারে টানা ৩ বছর আমার রিপোর্ট বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নির্বাচিত হয়।

দেশে এক যুগের সাংবাদিকতা শেষে প্রথম বাংলাদেশি সাংবাদিক হিসেবে যোগ দিয়েছি কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিবিসির অনুসন্ধানী দল ‘দ্য ফিফথ এস্টেট’ এ । যোগ দিয়েই বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে নিয়ে আমার অনুসন্ধানী রিপোর্টের খবর তো এখন সকলেই জানেন।

এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে ৭টি বই। যার মধ্যে ‘কালচক্র’ উপন্যাসকে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস দাবি করেছেন। অন্যান্য উপন্যাসগুলোও পেয়েছে কম-বেশি পাঠকপ্রিয়তা।

নারী হয়রানি ও নাগরিক ভোগান্তি লাঘবে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদের একটা ব্যক্তিগত ক্যাম্পেইন করেছি, যা মার্কেট এলাকায় একটা নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে, এ জন্য পেয়েছি যমুনা টিভির দুরন্ত বাংলাদেশ সম্মাননা।

এছাড়াও বন্ধুদের মধ্যে সবার আগে নতুন জীবন শুরু করেছি। আমার বউও নিজ গুণে গুনান্বিত। ছবি আঁকেন, পেশায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। আমাদের একটা ছোট্ট রাজপুত্রও আছে।

হয়তো খুব আহামরি কোনো অর্জন নয়, কিন্তু এইচএসসির ওই ঘটনার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে এগুলো আমার জন্যে অনেক কিছু। কেননা, ১৬-১৭ বছর আগেও আমার জীবন ছিল অনিশ্চিতায় ভরা। অন্ধকারে ডুবে ছিল সব। কোথাও কোন আলো ছিল না। তবু মনেপ্রাণে শুধু একটা জিনিসই বিশ্বাস করেছি, উদ্দেশ্য সৎ থাকলে, নিজের স্বপ্নের উপর বিশ্বাস রাখলে এবং ধারাবাহিক চেষ্টা করে গেলে- সাফল্য আসবেই।

আমার মনে হয়েছে, যে কোনো ব্যর্থতাই আসলে আরো বড় কোনো সফলতার উপলক্ষ্য মাত্র! আর তাই, এইচএসসিতে সফলদের পাশাপাশি শুভেচ্ছা সেইসব ব্যর্থদেরও, যারা আগামীতে আরো বড়ো কোনো সফলতার প্রতীক হয়ে উঠবে, উজ্জ্বল করবে নিজের পরিবার ও দেশের মুখ। নিজেকে ধ্বংস করে নয়, গড়তে হবে নতুন করে। তুমি পারবে- এই বিশ্বাস রাখতে হবে প্রাণে। কেননা, ”If You Believe, You Can Achieve.’
বলি, সহজেই হাল ছেড়ো না। নিজের মেধা ও যোগ্যতার উপর ভরসা রেখো। ভরসা রেখো সৃষ্টিকর্তার উপর। তোমার জন্য কী অপেক্ষা করছে তুমি জানোনা। কেননা, জীবন ক্ষণে ক্ষণে বাঁক বদলায়। খাদের কিনারে দাঁড়িয়েও শেষ মুহুর্তে ফেরার পথ খুঁজে পায় মানুষ, জীবন নেয় নতুন আরেক বাঁক। এইতো জীবন, মায়াবী অদ্ভূত রহস্যে ঘেরা!

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে: আমানউল্লাহ আমান

নবাবগঞ্জে বিএনপির একাংশের ত্যাগী নেতাদের মতবিনিময় সভা

৫ শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

ফেসবুকে অপপ্রচারের প্রতিবাদে নুরনগর মীরেরডাঙ্গী এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন

নবাবগঞ্জে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব ব্যবসায়ী হাবিবুর

নবাবগঞ্জে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন

নবাবগঞ্জে কাবাডি প্রতিযোগিতায় বারুয়াখালীকে হারিয়ে চূড়াইন তারিনীবামা চ্যাম্পিয়ন

আ.লীগ নেতার সাথে ছবি ভাইরাল করার অভিযোগে নবাবগঞ্জে প্রবাসীকে কুপিয়ে জখম

দোহার ব্যারিস্টার নজরুল ইসলামের নির্বাচনী উঠান বৈঠক

নবাবগঞ্জে ইয়ুথ ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১০

দোহারে চালু হলো সরকারি অনুমোদিত ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র

১১

নবাবগঞ্জে শরৎকালীন নাড়ু উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

১২

নবাবগঞ্জ উপজেলা এসএসসি ৮৭ কমিটি গঠন: সভাপতি খন্দকার সবুজ, সম্পাদক মিলন

১৩

নবাবগঞ্জে কোরআন অবমাননাকারীর ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

১৪

নবাবগঞ্জে বন্ধুর স্মরণে বন্ধুদের স্মরণ সভা

১৫

নবাবগঞ্জে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা

১৬

নবাবগঞ্জে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত

১৭

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা নুরুল ইসলামের গণসংযোগ

১৮

নবাবগঞ্জে ৪ দফা দাবীতে ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকদের মানববন্ধন

১৯

নবাবগঞ্জে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা

২০