‘কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি’- বিখ্যাত কবিতাটি পড়লে মনে পড়ে মহাকালের মহাকবি কায়কোবাদের কথা। আজ মহাকবি কায়কোবাদের মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই খ্যাতিমান এই কবি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলা সাহিত্যে ব্যাপক অবদানের জন্য মহাকবি কায়কোবাদ সারা দেশের মানুষের কাছে সমাদৃত। তবে জন্মস্থান ঢাকার নবাবগঞ্জ এখনো অবহেলিত। নিজ গ্রামে কবির স্মৃতিচিহ্ন বলতে তেমন কিছউই আর অবশিষ্ট নেই। দুই একটি সংগঠনই শুধু স্মরণে রেখেছেন মহাকবিকে। এরমধ্যে মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি সংসদ, মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি পরিষদ ও মহাকবি কায়কোবাদ মুক্ত স্কাউট অন্যতম। মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি সংসদ এর উদ্যোগে বিভিন্ন মসজিদে দোয়ার আয়োজন ও তার সমাধিস্থল ঢাকার আজিমপুর পুরানো কবরস্থানে কবর জিয়ারত ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে নোয়াদ্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়া, কবিতা আবৃতি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে জেলা পরিষদের উদ্যোগে কবির বাড়ির সামনের রাস্তাটির নামকরণ করা হয় কবির নামে। তখন একটি নামফলকও নির্মাণ করা হয়। তবে রাতের আঁধারে ফলকটি কে বা কারা ভেঙে ফেলে। ফলে সড়কটি যে কায়কোবাদের নামে, তা অনেকেই জানেন না। ১৯৭২ সালে সাবেক সাংসদ সুবিদ আলী খান কায়কোবাদের সম্মানে তাঁর কর্মস্থল আগলা ডাকঘর-সংলগ্ন জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন কায়কোবাদ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। কিন্তু এই বিদ্যালয়ে কবির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না বলে জানা যায়। এছাড়া নবাবগঞ্জে প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার চৌরাস্তায় কায়কোবাদের নামে চত্বর নির্মাণ করা হলেও বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এটি সরিয়ে ফেলা হয়। বিভিন্ন সংগঠন চত্বরটি পুনঃস্থাপনের দাবি জানালেও তার আর বাস্তবায়ন হয়নি।
মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি সংসদের যুগ্ম আহবায়ক এস এম আজাদ রহমান বলেন,‘ কবি কায়কোবাদ নিজ এলাকায় কতটা অবহেলিত তার এলাকায় না আসলে কেউ বুঝতে পারবে না। সারা বাংলাদেশের মানুষ তাকে চিনে অথচ তার নামে একটা সড়কের নামকরণ করা হয়নি। মহা কবি কায়কোবাদের স্মৃতি বলতে কিছুই নেই। আমরা কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। বাড়ি আছে ঠিকই কিন্তু সেখানে কায়কোবাদের উঠানো ঘরও নেই। সবই এখন মানুষের দখলে। জনপ্রতিনিধি বা সরকারি উদ্যোগে মহা কবির স্মৃতি ধরতে রাখতে নিজ এলাকায় পাঠাগার নির্মাণ করার দাবি জানান তিনি।’
মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি সংসদের সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন,‘ মহাকবি নিজ এলাকাই অবহেলিত। তার নিজের বাড়িটিই অন্যের দখলে। আমরা চাই তার বাড়িটি দখলমুক্ত করে তার স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হোক।’
স্থানীয়রা জানান বলেন, মহাকবি কায়কোবাদ নবাবগঞ্জের গর্ব। বাড়ির সামনেরন যে মসজিদের আজান শুনে কবি ‘আযান’ কবিতাটি লিখেছিলেন, সেটি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কবির বাড়িটি দখলমুক্ত করে কবির নামে একটি পাঠাগার ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা জরুরি। এট হলে কবি সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে। দেশের অনেক কবির জন্য বছরে অন্তত দুবার তাঁদের জীবন-দর্শন সম্পর্কে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু কায়কোবাদের বেলায় এ রকম অনুষ্ঠান চোখে পড়ে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, ‘ মহাকবি কায়কোবাদের স্মৃতি সংরক্ষণে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারি কোনো প্রোগ্রাম নেই। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
মহাকবি কায়কোবাদ ১৮৫৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার নবাবগঞ্জের আগলা পূর্বপাড়া গ্রামের কায়কোবাদ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম কাজেম আল কোরায়শী। ঢাকার পোগোজ এবং সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়াশোনা করতেন কায়কোবাদ। এরপর ঢাকা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। কিন্তু তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষা না দিয়ে পোস্টমাস্টারের চাকরি নিয়ে নিজ গ্রাম আগলা পূর্বপাড়ায় ফিরে আসেন। এখানে তিনি অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত কাজ করেন। বাল্যকাল থেকেই কবিতায় তাঁর পারদর্শিতা চোখে পড়ে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.