ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় পুলিশ পরিচয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ডাকাতির ঘটনায় সাতদিনের মধ্যে টাকলা সাইফুলসহ দুর্ধর্ষ ১২ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, গত ৩০ এপ্রিল সকালে প্রতিদিনের মতো আগলা বাজারের দিয়া জুয়েলার্সে যাচ্ছিলে ব্যবসায়ী কৃষ্ণ সাহা (৫২)। ঢাকা-নবাবগঞ্জ সড়কের আগলা পোষ্ট অফিসের সামনে এলে একটি সাদা রংয়ের হায়েস গাড়ী তার গতিরোধ করে। তার নামে ওয়ারেন্ট আছে জানিয়ে তাকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে মারধর করে। এসময় ডাকাতরা তার কাছে থাকা প্রায় দুই’শ ভরি স্বর্ণালংকার, ৪’শ ভরি রুপা, নগদ আড়াই লাখ টাকা লুট করে নেয়। পরে ঐ ব্যবসায়ীকে সিংগাইর উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়নের চঙ্গপাড়া এলাকায় ফেলে চলে যায়।
পুলিশ সুপার জানান, সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা জেলা পুলিশ টানা সাতদিন রাজধানী ও এর আশপাশের জেলায় অভিযান চালিয়ে ডাকাত চক্রের গ্যাং লিডার মোক্তারসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। ডাকাত চক্রটি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে ডাকাতি করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৮/১০টি করে মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান আরও জানান, তারা সোর্সদের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে ডাকাতি করে চক্রটি। মোক্তার বিদেশ থেকে ফিরে ডাকাত চক্রে জড়িয়ে পরে প্রতারণাসহ ডাকাতির কাজ করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি। তাদের কাছ থেকে ওয়াকিটকিসহ লুট হওয়া ১৭৭ ভরি স্বর্ণ ও ৩৮৬ভরি রুপা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সুপার (অপরাধ) আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তর (অপরাধ) আব্দুল্লাহিল কাফি, দোহার সার্কেলের এএসপি আশরাফুল আলম, নবাবগঞ্জ থানার (ওসি) সিরাজুল ইসলাম শেখ, ওসি তদন্ত আশফাক রাজিব হাসান প্রমুখ।
ভূক্তভোগী কৃষ্ণ সাহা জানান, বাসা থেকে স্বর্ণালংকার নিয়ে দোকানে যাওয়ার পথে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে স্বর্ণালংকার লুটে নেয় ডাকাত চক্রটি।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নবাবগঞ্জ থানার (ওসি) সিরাজুল ইসলাম শেখ সাংবাদিকদের জানান, গ্রেফতারকৃত ১২ আসামীকে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে ঢাকার আদালতে নেয়া হয়। বিজ্ঞ আদালত ৯ জন আসামীকে ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি ৩ আসামী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ায় তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পাবনার জয়নগর এলাকার খন্দকার নুরুল ইসলামের ছেলে নুরুজ্জামান হোসেন ওরফে মুক্তার হোসেন (৫০), কুমিল্লার লাকসামের শ্রীয়াং গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে সালেহ আহম্মেদ সাইফুল ওরফে টাকলু সাইফুল (৪০) ও নাজির হোসেন (৩৫), মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের রমজান আলীর ছেলে মো. হুমায়ুন কবীর (৫০), মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার মধ্যকামারগাও এলাকার মেছের আলীর ছেলে শাহাদাৎ গাজী (৩৫), টাঙ্গাইলের গোয়ারিয়া উপজেলার মুসলিম মিয়ার ছেলে মো. মান্নান মিয়া (৪১), একই জেলার দেলদুয়ার উপজেলার দড়িপাড়া গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার ছেলে মো. হুমায়ুন মিয়া (৩৬), টুকনিখোলা গ্রামের মো. শাহজাহান খানের ছেলে মো. শাকিল খান (৩৫), মির্জাপুর উপজেলার করোরা গ্রামের আমিনুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর মল্লিক (৪২), নীলজার এলাকার দরবেশ শিকদারের ছেলে আব্দুস সামাদ শিকদার (৪৫), ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা মাঝপাড়া এলাকার মৃত মঙ্গল সরকারের ছেলে শ্যামল সরকার (৩৫), শেরপুর জেলার নকলা থানার বানেশ্বরদী এলাকার আবুল কালামের ছেলে রিপন মিয়া (২৮)।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.