বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কৃষকেরা। শীতের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার মধ্যেই কোদাল আর কাস্তে হাতে মাঠে নেমেছেন তাঁরা। শীত উপেক্ষা করে জমি তৈরি ও চারা রোপণের কাজ চলছে। বোরো চাষে লাভবান হওয়ায় আগ্রহ বেড়েছে উপজেলার ধান চাষিদের মধ্যে। তবে লোকসান ঠেকাতে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এবার বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়েছে ১০ হাজার ৮৯০ হেক্টর। ইতিমধ্যে ৫২২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। ধান চাষে উপজেলার কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে সরকারিভাবে প্রণোদনা, উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান বীজ ও সার সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বোরো আবাদে ধুম পড়েছে। কৃষকেরা তাঁদের জমির আইল ছাঁটা, আগাছা বাছাই, জৈব সার প্রয়োগ ও সেচের ড্রেন নির্মাণ করছেন। আবার অনেকে জমি তৈরি করে সেচ দিয়ে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করা জমিতে চারা রোপণ করছেন। এ ছাড়া ধান রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে চারা।
তবে কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজের জমিতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে বোরো চারা রোপণ করছেন। এ উপজেলায় বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প ও ডিজেল ইঞ্জিল (সেলো মেশিন) চালিত পাম্প রয়েছে। বিদ্যুৎ চালিত সেচ যন্ত্রে চাষিরা বেশ কম খরচে চাষ করতে পারেন।
উপজেলার বড় বাড়িল্যা গ্রামের কৃষক নুরু বেপারী বলেন, ‘আমি দশ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করব। এ জন্য জমি তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
একই গ্রামের রিয়াজ বেপারী বলেন, ‘আমি আমন ধান চাষ করে জমিতে ২০ শতাংশ সবজিসহ অন্যান্য ফসল চাষ করে ছিলাম। এবার বোরো ধানের চারা রোপণের জন্য জমি তৈরি শুরু করেছি। এ ছাড়া কৃষি অফিস থেকে আমাকে প্রণোদনার মাধ্যমে বীজ-সার দেওয়া হয়েছে।’
ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক সিন্টু খাঁন বলেন, ‘জমি প্রস্তুত করে চারা উত্তোলন করছি জমিতে রোপণের জন্য। বোরো ফসলটি ভাল হলে পরিবার পরিজনদের নিয়ে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবো। তাই যত্ন সহকারে জমি তৈরি করে চারা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভাল ফসল পাবো বলে আশা রাখি।’
এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমন সরকার বলেন,‘বীজতলা তৈরিতে আমরা মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি নিয়মিত। কৃষকেরা যেন উন্নত প্রযুক্তিতে সঠিকভাবে চাষাবাদ করেন, সে ব্যাপারে তাঁদের বলা হচ্ছে।’
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা আসমা জাহান বলেন, কৃষকদের সরকারিভাবে প্রণোদনার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ঘন কুয়াশায় বীজতলার যেন কোনো ক্ষতি না হয়, এ জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন