1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন

বিচার দেখে মরতে চান জাকিরের মা বাবা

ইমরান হোসেন সুজন
  • আপডেট : শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০
  • ১০৩৮ বার দেখা হয়েছে

“ওরে বাবা তুই কই গেলি। আমারে তর কাছে নিয়া যা। তরে ছাড়া আমার দম বন্ধ অইয়া যাইতাছে। কোতায় গেলে তোরে পামু রে বাবা।” এভাবেই বিলোপ করছেন আর কান্না করে বুক ভাসাচ্ছেন ঢাকার নবাবগঞ্জে নিহত মোটর চালক জাকিরের বৃদ্ধ বাবা ও মা। গত ৩০ শে সেপ্টেম্বর ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নে চর শৈল্যা গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জেরে জাকিরকে হত্যার উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে নেশা জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য খাওয়ানো হয় বলে অভিযোগ জাকিরের পরিবারের। পরের দিন ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন জাকির হোসেন। জাকিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

এঘটনায় ৯দিন পর ১০ অক্টোবর জাকিরের স্ত্রী বাদি হয়ে পুরান তুইতালের মো. শফিক ও আফজালনগরের মো. জাকির সহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনের নামে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেন। তবে ঘটনার ২৩ দিন ও মামলার পরবর্তী আরো ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোন আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এখনো পাওয়া যায়নি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। পুলিশের দাবি আসামীরা পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। এদিকে নিহত জাকিরের পরিবারের দাবি, একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

সরেজমিনে মোটর সাইকেল চালক জাকিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুত্র হারানোর শোকে বৃদ্ধ বাবা মার চোখের পানি যেন থামছেই না। পুত্র শোকে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে তারাও। প্রতিদিনই নিয়ম করে সন্তানের কবর দেখতে ছুটে যান কবরস্থানে। ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার করেন পুত্রের কবরের সামনে। নিহত জাকিরের পিতা আবুল কালাম বলেন, বাবার আগে ছেলের বিদায় বড়ই কষ্টের। পৃথিবীতে এর চাইতে বড় শোক আর নেই। আমরা এখন জীবিত থাকতেও মৃত। আমার ছেলে খুবই ভালো ছিল। যেদিন আমার ছেলের জানাযা হয় সেদিন হাজারো মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। সবাই আফসোস করেছে। রাত বিরাতে সবার বিপদে ছুটে যেতো মোটর সাইকেল নিয়ে।

আবুল কালাম অভিযোগ করে বলেন, আসামী শফিক ও জাকির আমার পুত্রকে বাসায় ডেকে নিয়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য সামগ্রী খাইয়ে মারধর করে শফিকের বসত বাড়িতে ফেলে রাখে। ওরাই আমার পুত্রকে হত্যার করেছে। কিন্ত এখনো আসামী ধরা পড়েনি। আসামী জাকিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। হত্যা করেও ওরা প্রকাশে ব্যবসা করছে। আমরা গরিব বলে কি বিচার পাব না।” সন্তার হত্যার বিচার দেখে যেতে চান নিহেতর বৃদ্ধা মা সামসুর নাহারও।

নিহত জাকিরের স্ত্রী মুকসেদা বেগম বলেন, আমি বিধবা হলাম, এতিম হলো আমার সন্তানরা। কিন্ত এখনো কোন আসামী ধরতে পারেনি পুলিশ। আমার স্বামী কেমন ছিল আপনারাই খোঁজ নিয়ে দেখেন। আমরা গরিব বলে কি হত্যা বিচার পাব না। আমার স্বামীকে শফিক ও জাকির ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। অথচ জাকিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা। ওর সাথে ওর পরিবারের অবশ্যই যোগাযোগ আছে। পুলিশ কি এসব দেখে না? আমি আমার স্বামীর হত্যা বিচার চাই সরকারের কাছে।

মামলার অন্যতম আসামী মো. জাকিরের পরিবারের দাবি, জাকির এলাকাই আছে। ব্যবসা করছে। মোটর সাইকেল চালক জাকির হত্যার সাথে জাকির জড়িত না সুতরাং সে পলাতক থাকবে কেন? কিছুক্ষণ আগেও জাকির বাসায় ছিল বলে জানান জাকিরের বোন।

মামলার এজাহারভুক্ত আরেক আসামী শফিকের বোন শিল্পী বেগম বলেন, সেদিন কি ঘটেছিল আমি জানি না। আমার ভাইয়ের ঘরের সামনে জাকির অজ্ঞান অবস্থায় পরে ছিল। তবে তার ভাই সেখানে ছিল না। আসামী জাকির ¯ একটি সাদা কাগজে নিহত জাকিরে বাবার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

মামলা সূত্রে জানা যায়, পুরান তুইতালের মো. রহিমের পুত্র শফিক (৪০) ও আফজাল নগরের মৃত শফি উদ্দিনের ছেলে মো. জাকির (৪২) সহ অজ্ঞাতনামা ০৪/০৫ জনকে আসামী করে নিহতের স্ত্রী মোকসেদা বেগম বাদি হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, গত ৩০ সেপ্টম্বর দুপুরে মামলার এক নম্বর আসামী শফিক মোবাইল ফোনে জাকিরকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর আসামীরা জাকিরতে হত্যার উদ্দেশ্যে নেশা জাতীয় বিষাক্ত দ্রব্য পান করিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় বসত ঘরের সামনে ফেলে রাখে। বিকেলে আসামী শফিকের প্রতিবেশী সজীব তালুকদার নিহতের বাড়ীতে এসে নিহতের পিতা আবুল কালামকে শফিকের বাড়ীতে ডেকে নেন। এসময় আবুল কালাম সন্তানকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য উপস্থিত জুয়েল মাষ্টার ও মামলার আসামী জাকিরকে ধরার জন্য অনেক অনুরোধ করেন। কিন্ত তারা সাহায্য না করে উল্টো আসামী জাকির নিহতের পিতাকে হুমকি ধামকি তার কাছ থেকে একটি কাগজে স্বাক্ষর রাখেন। ১লা অক্টোবর ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ( মিটফোর্ড) চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাকির মারা যায়।

এব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নবাবগঞ্জ থানার এসআই মৃত্যুঞ্জয় কুমার কির্তুনীয় বলেন, আসামীরা পলাতক রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য। দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার করতে পারব আশা করি। এখনো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসেনি বলে জানান এ কর্মকর্তা।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ