গরীবের চাল নিয়ে চালবাজি আর অব্যবস্থাপনার চিত্র যখন সারাদেশেই কমবেশি চলছে সে মূহুর্তেই এমন অনিয়ম বন্ধে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নিপা। চাল বিতরনের পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে এসেছেন একটিমাত্র মোবাইল অ্যাপসে। যে প্রক্রিয়ায় উপকারভোগীরা তাদের হাতে পাওয়া কিউআর কোড সম্বলিত কার্ড দিয়ে নিয়মমতো কিনতে পারবেন সরকারের ১০ টাকা কেজির চাল। আর পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করবে কম্পিউটার। যেখানে লোকবলের প্রয়োজন একেবারে নেই বললেই চলে। সদিচ্ছা না থাকলেও ডিলারকে বাধ্য চলে আসতে হবে ওই প্রক্রিয়ার মধ্যে আর বাধ্য হয়েই বন্ধ করতে হবে চাল নিয়ে চালবাজি। উপকারভোগীরা পাবে তাদের প্রাপ্য সরকারি সুবিধা। বিষয়টি ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে সরকারের উর্ধ্বতন মহলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কালিহাতিতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে নির্দিষ্ট বৃত্তে দাঁড়িয়ে আধুনিক এ পদ্ধতিতে উপকারভোগীরা স্বল্প সময়ে চাল বুঝে নিতে পারছেন। কিউআর কোড সম্বলিত ডিজিটাল কার্ড নিয়ে ডিলারের নিকট এলে তা মোবাইলের নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে স্ক্যান করে চাল দেয়া হচ্ছে। এতে একই ব্যক্তি একাধিকবার বা নির্ধারিত পরিমাণের বেশি চাল নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। কারণ অ্যাপস তা সমর্থন করছেন না। অন্যদিকে খুব সহজে স্বল্প সময়ে তালিকাভূক্তদের হাতে চাল পৌঁছে যাচ্ছে। কার্ডধারীরা পনের দিন অন্তর একইভাবে চাল নিতে পারবেন। এতে কারও চালবাজি বা একাধিকবার নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ, যদি কারও কার্ড স্ক্যান না হয় তবে তার জন্য বরাদ্দকৃত চাল থেকে যাবে। অর্থাৎ, যিনি নেননি তার চাল ডিলারের কাছেই সংরক্ষিত থাকবে। আর এই হিসাব প্রতি মূহুর্তে অনলাইনের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষ নজরদারি করতে পারবেন। কারণ, ডিজিটাল পদ্ধতির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছেই এই তালিকা থাকবে। এ পদ্ধতির সুফল ইতিমধ্যেই কালিহাতির অন্তত আড়াই হাজার মানুষ পেতে শুরু করেছেন।
সম্প্রতি কালিহাতি উপজেলার দুটি পৌরসভার ২ হাজার ৪০০ কর্মহীন মানুষদের জন্য ডিজিটাল কার্ডে ওএমএস’র ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান (সোহেল হাজারী) সহ আরো অনেকে।
এ কার্যক্রম শুরুতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নিপার প্রশংসা করেন সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক।
কীভাবে এটি সম্ভব হলো সেখানে? এমন প্রশ্নের উত্তরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নিপা বলেন, “প্রযুক্তি জ্ঞান ছিল বলেই সে পথে সমাধানের চিন্তা করি। শুরুতে ভেবেছি সাদামাটা কোন কার্ড থাকবে। কিন্তু সেই ধরনের কার্ড খুব সহজেই নকল করা সম্ভব। তখন মাথায় এলো কিউআর কোড সম্বলিত ডিজিটাল কার্ড করার। প্রতি কার্ডে খরচ পড়েছে ১০-১২ টাকা। তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি ছাড়াও ফেসবুকে গুগল ফরমের মাধ্যমে ব্যক্তির নাম, ফোন নম্বর, এনআইডি, ঠিকানা প্রভৃতি তথ্য সংগ্রহ করেছি। এভাবে বাছাই করে একটি তালিকা তৈরি করি আমরা। এ কাজে স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিরা ভীষন আন্তরিক ছিলেন।”
শামীম আরা নিপা বলেন, “স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া ছেলে আল আমিন। নিজের আগ্রহ থেকে বাড়িতে বসে ইউটিউব দেখেই অ্যাপ তৈরির কাজ শিখেছেন। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি অ্যাপ তৈরি করে প্রশংসাও পেয়েছে আল আমিন। তাকেই কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিই। চাল বিক্রির সমাধান হিসেবে আলোচনা ও সুবিধাগুলো পর্যালোচনা করে খুব অল্প সময়েই আমরা একটি অ্যাপ তৈরি করে ফেলি। তবে এ কাজে আল আমিনের মতো তরুণরা এগিয়ে এসেছিল বলেই কাজটি করা সহজ হয়।”
এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনে করেন, এটা সরকারের ত্রাণ সংশ্লিষ্ট সকল কর্মসূচিতেই প্রয়োগ সম্ভব। সেটা করা গেলে যেমন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে তেমনি সরকারের নানা ব্যয়ও কমে আসবে। পাশাপাশি সরকারের কাছে একটা ডেটা থাকবে। কর্মসূচি যাচাই করাও সহজ হবে। এতে সঠিকভাবে মানুষ সরকারি সেবা পাবেন। চুরির কোন সুযোগ থাকবে না। প্রতি কেজি চালের সঠিক ডিসট্রিবিউশন ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিশ্চিত করা সম্ভব।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.