২০১৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করার পর স্টীল ফার্ণিচারের ব্যবসা শুরু করেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের করপাড়া গ্রামের জামাল হোসেন। ভালোই চলছিল দিনকাল। কিন্তু ২০২০ সালের করোনায় অনেকটা ক্ষতির মুখে পড়েন এই ব্যবসায়ী। বাধ্য হয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দেন। নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা ছেড়ে প্রথমে দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তবে হাল ছেড়ে দেননি। বগুড়ায় ‘এগ্রো ওয়ান’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কৃষির উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে বনে যান কৃষক। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মাত্র এক বছরেই সফলতার হাতছানি পেয়ে এখন বড় কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। ব্যবসায়ী থেকে হয়েছেন সফল কৃষি উদ্যোক্তা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বারুয়াখালী ইউনিয়নের করপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কিছু দূর গেলেই জামাল হোসেনের কৃষি খামার। খামারে থোকায় থোকায় ঝুলছে শসা। শসা ক্ষেত পেরোলেই মরিচ খেত। এর পশ্চিম দিকেই জমি প্রস্তুত করা হচ্ছে পেঁপে গাছ রোপণের জন্য।
বর্তমানে জামাল হোসেন, ২৩ শতাংশ জমিতে শসা, ৩৪ শতাংশে মরিচ ও ৪৫ শতাংশে পেঁপে গাছের চারা রোপণ করেছে। প্রতিদিন তার উৎপাদিত শসা দোহার-নবাবগঞ্জ সহ বিভিন্ন উপজেলার হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে। দিনে গড়ে ৫ মণ শসা বিক্রি হয়। এক সময়ে এই কৃষি খামার থেকে অনেকের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে মনে করেন তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তা।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা জামাল হোসেন বলেন,‘ যদি খালি জমি থাকে তাহলে যে টাকা খরচ করে বিদেশ যাবেন সে টাকা জমিতে বিনিয়োগ করতে পারেন। স্বজন পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে দেশেই ভাল থাকতে পারেন। এতে লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ যেতে হবে না। শিক্ষিত অথচ বেকার রয়েছেন যারা তারা অল্প পুঁজি আর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষিতে সফল হতে পারেন। এতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও আপনি অংশীদার হতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রয়েছে শ্রমিক সমস্যা। স্থানীয়ভাবে শ্রমিক না পাওয়ায় দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে শ্রমিক আনতে হয়। স্থানীয় অনেকেই আছেন যারা লজ্জায় কৃষি কাজ করতে চান না। তারা যদি সংকোচ বাদ দিয়ে এ কাজে লেগে পড়েন তাহলে এ সংকটও কেটে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য এনায়েত মোল্লা বলেন, ‘ সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষিত ছেলেরাও কৃষিতে এগিয়ে আসবে।’
করপাড়া গ্রামের লিট েেহাসেন বলেন, ‘বেকার যুবকরা যদি জামালের মতো কৃষি কাজে আত্মনিয়োগ করে তবেই সমাজ থেকে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।’
একই গ্রামের আজাদ হোসেন স¦াধীন বলেন,‘প্রতিটি গ্রামেই যদি তরুণরা কৃষিকাজের সাথে জড়িত হয়। তবেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসমা জাহান বলেন, ‘আমরা সবসময় কৃষি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। যাতে কৃষিতে বিনিয়োগ করে তারা লাভবান হতে পারেন।’
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.