ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় একটি রাসায়নিক কারখানায় আগুনের ঘটনায় দগ্ধ আরও এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচজনে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, মঙ্গলবার দুপুরে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থাড মারা যায় সোহাগ মিয়া (৩২)।
নিহত সোহাগ উপজেলার কালিন্দী ইউনিয়নের গদারবাগ এলাকার হানিফ মিয়ার ছেলে।
অপর নিহতরা হলেন, সোহাগের স্ত্রী মিনা আক্তার (২২) ও দেড় বছর বয়সী মেয়ে তাইয়েবা আক্তার, সোহাগের বড় ভাই সৌদি প্রবাসী মিলন মিয়ার স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৩৫) ও তাঁর মেয়ে তিশা আক্তার (১৫)।
এ ঘটনায় নিহত সোহাগের দগ্ধ আরেক মেয়ে তানহা আক্তার (৪) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গুদাম থেকে প্রায় তিন থেকে চার গজ দূরত্বে চারটি আধা পাকা ঘর। ঘরগুলোর তিনটিতে পরিবারের বসবাস। আর রাসায়নিকের গুদামটি টিনশেডের। বিস্ফোরণে গুদামটি একেবারে দুমড়েমুচড়ে গেছে। ভেতরে রাসায়নিক দ্রব্য ও পদার্থ গলে মেঝেতে পড়ে আছে। সেগুলোর দুর্গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এর পাশে অনেক পোড়া বস্তা পড়ে আছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের বেশির ভাগ মালামাল পুড়ে গেছে ও ঘরের সিলিং ফ্যান পর্যন্ত দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে। বাড়ির কক্ষের বারান্দায় থাকা একটি মোটরসাইকেলের বেশিরভাগ অংশই পুড়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, রাসায়নিক কারখানাটি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা এলাকার রাসায়নিক ব্যবসায়ী টুটুল মিয়ার মালিকানাধীন। পাশের ঘরগুলোও তাঁর। এগুলো ভাড়া দেওয়া। সোহাগ তার দোকানের কর্মচারী। পরিবার পরিজন নিয়ে কারখানার পাশের দুটি ঘরেই বসবাস করতেন সোহাগ।
মঙ্গলবার ভোরের দিকে কারখানায় বিস্ফোরণে পাশের ঘরগুলোতেও আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা প্রথমে কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরের দেয়াল ভেঙে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন।
পরিবারের পাঁচজনকে হারিয়ে নিহত সোহাগের বাবা হানিফ মিয়া (৬০) পাগল প্রায়। তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, আমি অহন কাগো নিয়া বাঁচমু? এমন মর্মান্তিক ঘটনা যেনো আর কারো সঙ্গে না ঘটে।আমার নাতনি তানহাও হাসপাতালে ভর্তি। ওর অবস্থাও ভালো না। আলাহ্ যেনো ওরে অন্তত কেড়ে না নেয়।
কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন ওয়্যারহাউজ পরিদর্শক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, রাসায়নিক গুদামের মালিকের নাম মো. টুটুল মিয়া। তিনি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা এলাকার বাসিন্দা। প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি ওই রাসায়নিক গুদাম পরিচালনার কোনো অনুমোদন ছিল না। অবৈধভাবে টুটুল মিয়া এখানে রাসায়নিক দ্রব্য মজুত করে নিয়ম বহির্ভূত কাজ করেছেন।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সল বিন করিম, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ।
ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও ব্যক্তিদের সহায়তার আশ্বাস দেন। এছাড়াও নিহতদের পরিবারের প্রত্যেককে ২৫ হাজার ও আহতদের ১৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থসহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
সংবাদ পেয়ে বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামীলীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, কোনো অবস্থাতেই আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক, দাহ্য পদার্থ ও প্লাস্টিকের কারখানা ও গুদামঘর গড়ে তোলা যাবে না। এ বিষয়ে হাইকোর্ট ও সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও কিছু অসাধু লোভী ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে আবাসিক এলাকায় কারখানা ও গুদামঘর পরিচালনা করে থাকেন। এটা অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.