আজ (২৫ ফেব্রুয়ারি) মহাকবি কায়কোবাদের জন্মদিন। ১৮৫৭ সালের এইদিনে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন মহাকবি কায়কোবাদ। কায়কোবাদ কবির সাহিত্যিক নাম হলেও তাঁর প্রকৃত নাম মোহাম্মদ কাজেম আল কোরেশী। তার পিতা শাহামাতুল্লাহ আল কোরাশী ছিলেন ঢাকা জেলা জজ কোর্টের আইনজীবি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৮৭০ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিরহ বিলাপ’ প্রকাশ হলে বাংলা সাহিত্যঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ১৯০৪ সালে তার মহাকাব্য মহাশ্মশান প্রকাশ হলে তিনি মহাকবি উপাধি লাভ করেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন আগলা ডাকঘরে চাকরি করেছেন। ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই পরলোকগমন করেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এই কবি।
কায়কোবাদ ঢাকার পোগোজ স্কুল এবং সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর ঢাকা মাদ্রাসায় এন্ট্রান্স পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন, কিন্তু পরীক্ষার আগেই পোস্ট-মাস্টারের চাকরি নিয়ে তিনি স্বগ্রাম আগলায় চলে আসেন। সমগ্র চাকরি জীবনে তিনি এ পদেই বহাল ছিলেন এবং এখান থেকেই অবসর গ্রহণ করেন।
অতি অল্পবয়সে থেকে কায়কোবাদের সাহিত্য-প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। মাত্র তেরো বছর বয়সে তাঁর প্রথম কাব্য বিরহবিলাপ (১৮৭০) প্রকাশিত হয়। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে: কুসুম কানন (১৮৭৩), অশ্রুমালা (১৮৯৫), মহাশ্মশান (১৯০৪), শিব-মন্দির (১৯২২), অমিয়ধারা (১৯২৩), শ্মশান-ভস্ম (১৯২৪) ও মহরম শরীফ (১৯৩২)। কবির মৃত্যুর বহুদিন পরে প্রেমের ফুল (১৯৭০), প্রেমের বাণী (১৯৭০), প্রেম-পারিজাত (১৯৭০), মন্দাকিনী-ধারা (১৯৭১) ও গাছ পাকের প্রেমের কুঞ্জ (১৯৭৯) প্রকাশিত হয়। সবশেষ বাংলা একাডেমী কায়কোবাদ রচনাবলী (৪ খন্ড, ১৯৯৪-৯৭) প্রকাশ করেছে।
কায়কোবাদ বাংলার অপর দুই মহাকবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবীনচন্দ্র সেনের ধারায় মহাকাব্য রচনা করেন। তবে নবীনচন্দ্রই ছিলেন তাঁর প্রধান আদর্শ। কায়কোবাদের মহাশ্মশান হচ্ছে মহাকাব্য। তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ অবলম্বনে রচিত এ কাব্যে জয়-পরাজয় অপেক্ষা ধ্বংসের ভয়াবহতা প্রকট হওয়ায় এর নাম হয়েছে ‘মহাশ্মশান’। এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা এবং এর দ্বারাই তিনি মহাকবিরূপে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর গীতিকবিতায় প্রেম, প্রকৃতি, স্বদেশ ও আধ্যাত্মিকতা প্রকাশ পেয়েছে।
কায়কোবাদের কাব্যসাধনার মূল উদ্দেশ্য ছিল পশ্চাৎপদ মুসলমান সম্প্রদায়কে তার অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করা এবং তা পুনরুদ্ধারে উদ্বুদ্ধ করা। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী, যার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর বিভিন্ন রচনায়। তিনি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। ১৯৩২ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনের মূল অধিবেশনে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা কাব্যসাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ তাঁকে ‘কাব্যভূষণ’, ‘বিদ্যাভূষণ ও ‘সাহিত্যরতœ’ (১৯২৫) উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.