1. news@priyobanglanews24.com : PRIYOBANGLANEWS24 :
মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন

‘বাবা থাকলে ভ্যান চালাইতাম না’

রিপোর্টার:
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৮১১ বার দেখা হয়েছে

‘ছোট বেলা বাবা মইরা গেছে। এহন মনে অয় বাবা থাকলে আমার ভ্যান চালাইতো অইতো না। স্কুল থ্যাইকা বাড়ি আইহা ভ্যান নিয়া বাইর অই। এরপর কিছু ট্যাকা কামাই করলেই আমাগো সংসার চলে। আমার পড়ালেহার খরচও ভ্যান চালাইয়া যোগাড় করি। সংসারডাই আমার উপরে নির্ভর করে। এহন প্রতিদিন সকাল বিকাল ভ্যান চালাইয়া সাপ্তায় কিস্তির ট্যাকাও যোগাড় করি’ । এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী গ্রামের মৃত পরাণ সরকারের ছোট ছেলে সজিব সরকার (১৮)।

চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট সজিব সরকার। খুব ছোটবেলা বাবা মারা যায়। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। বড় ভাই ধীরেন সরকার বার্নিশের কাজ করে। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা সন্ধ্যা রানী সরকার কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। এরপরও কষ্টের সাথেই বসবাস তার পরিবারের। সংসারের খরচ চালাতে সজিবকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাজ করতে হয়েছে অন্যের দোকানে। অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে বাজারে কুলির কাজও করেছে সজিব। কঠিন বাস্তবতার শিকার এই কিশোর জীবনের সাথে সংগ্রাম করছে প্রতিনিয়ত। সংসারের ঘানি টানতে এখন প্রতিদিন সকাল বিকেল ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছেন দশম শ্রেণির ছাত্র সজিব সরকার। পড়াশোনার বাহিরে একটু সময়ও অবসরে কাটানোর উপায় নেই তার। সকাল থেকেই সংসারের কথা চিন্তা করে ভ্যান নিয়ে ছুটতে হয়। দিনে ৩০০/৪০০ টাকা ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করে সংসার ও পড়ালেখার খরচ যোগাড় করছে কিশোর সজিব। এতো অল্প বয়সে কাউকে কখনো ভ্যান চালাতে দেখেনি সজিব। তবুও নিজেকে ভ্যানচালক পরিচয় দিতে একটুও দ্বিধা নেই তার।

স্কুল ছাত্র সজিবকে ভ্যান চালানোর কথা জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠে, ‘ভ্যান চালান ছাড়া উপায় নাই। এহন সংসার চালানোর জন্য প্রতিদিনই ভ্যান নিয়া বাইর হইতে অয়। বাবা মইরা গেছে ছোটকালে। এক ভাই কোন রহম কামাই করে। আমি পড়ালেহার বাইরে ভ্যান না চালাইলে আর সংসার চলবো না। এহন কি করুম। লজ্জা সরম পাইয়া আর কি অইবো? স্কুলের সবাই জানে আমি ভ্যান চালাই। ছোটকাল থিকাই মাইস্যের কাজ কইরা সংসার চালাই’।

সজিবের মা সন্ধ্যা রানী সরকার বলেন, ‘এতো ছোট ছেলেকে কেউ কখনো কাজে দেয় না। অভাবের সংসারে বাধ্য হয়ে নিজের ছেলেকে এখন ভ্যান চালাতে দিয়েছেন। এই বয়সে খেলাধুলা করে সবাই। ওর বয়সে কেউ ভ্যান চালায় না। আমারও কষ্ট হয়। তবুও বাধ্য হয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি সজিব প্রতিদিন ভ্যান চালায়। ওর কামাই দিয়াই কোন রকমে সংসার চলে’।

প্রতিবেশি চন্দ্রী সরকার বলেন, সজিবের জন্মের পরই বাবা মারা গেছে এরপর থেকেই দেখতেছি সজিব সংসার চালায় রাখছে। দুই বছর হয় পড়ালেখার পাশাপাশি ভ্যান চালায়। ছোটবেলা থেকেই সজিবের কাজের ক্ষেত্রে কোনো লজ্জা সরম নাই। সব ধরনের কাজই করে।

স্থানীয় যুবক শয়ন সরকার বলেন, ‘অল্প বয়স থেকেই সজিব কাজ করে সংসার চালায়। অনেক পরিশ্রম করছে এখনো। প্রতিদিন সংসার চালানোর জন্য ভ্যান নিয়ে ছুটতে হয়। ভ্যান চালিয়ে যে টাকা উপার্জন করে তা দিয়ে ওদের সংসার চলে। এমন ছেলে সচরাচর দেখা যায় না’।

সজিব সম্পর্কে স্থানীয় শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ভ্যান চালিয়ে নিজে লেখাপড়া খরচ ও পরিবারকে সাহায্য করছে। লেখাপড়া শেষ করতে পারলে বড় মানুষ হবে সজিব’।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ