ঢাকার নবাবগঞ্জের হাসনাবাদ ও নয়ানগর পাশাপাশি গ্রাম। কিন্ত গ্রাম দুটোকে বিভক্ত করেছে ইছামতি নদী। নদীর উত্তরে নয়ানগর আর দক্ষিণে হাসনাবাদ। কিন্তু সেখানে নেই পারাপারের কোনো স্থায়ী সেতু। একটি মাত্র সেতুর অভাবে স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষকে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। পা পিছলে যেকোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা এমন আশংকায় জরাজীর্ণ সেতুটি দিয়ে পার হতে হয় স্থানীয়দের। সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণাও দিয়েছেন একাধিকবার। তবে আশ্বাস মিললেও মেলেনি সেতু। তাই প্রতিবছরই দু’পারের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। অথচ হাসনাবাদ নয়ানগরে একটি সেতুই পারে কয়েক হাজার মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে।
জানা যায়, নয়ানগর ও ইমাননগরের জনসাধারণকে নিত্যপ্রয়োজনে যেতে হয় বাণিজ্যিক এলাকা হাসনাবাদ ও পুরাতন বান্দুরা বাজারে। তাছাড়া উপজেলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট ইউফ্রেজিস গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বান্দুরা হলিক্রশ স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ব্যাংক, হাসপাতাল ও হাসনাবাদ গীর্জায় যেতে হলে ইছামতি নদী পার হতে হয় স্থানীয়দের। এছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে এলাকাটি। বিকল্প রাস্তা হিসেবে নতুন বান্দুরা সেতু পার হয়ে পুরাতন বান্দুরা বাজার বা স্কুল ও কলেজে যেতে হলে তাদেরকে দ্বিগুণ সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয় ।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ না নেয়ায় যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘবে এলাকার মানুষ নিতান্ত বাধ্য হয়েই তৈরি করেছে একটি বাঁশের সাঁকো। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসনাবাদ নয়ানগর ইছামতি নদীর উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি ‘ত্রিখ-িত’- দুই পাড়ে দুই বাঁশের সাঁকো আর মাঝে রয়েছে একটি ডিঙ্গি নৌকা। এই জোড়াতালি মার্কা সাঁকো দুর্ভোগ কমানোর পরিবর্তে বরং বাড়িয়েই দিয়েছে বলা যায়। বাঁশের সাঁকো দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হচ্ছিল স্থানীয় বাসিন্দারা।
নয়ানগর গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পার হতে খুব ভয় লাগে, কখন যে সাঁকো ভেঙ্গে নদীকে পড়ে যাই। এখানে একটি সেতু হওয়া খুবই দরকার।
একই এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, আমি পুরাতন বান্দুরা বাজারে ব্যবসা করি। প্রতিদিনই এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময় হাসনাবাদ নয়ানগরে একটি সেতু করার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রবাসী সুকুমার পাল জানালেন তার দুঃখের কথা। তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে কোনো রকম চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে নৌকার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু নৌকাও মাঝে মধ্যে ডুবে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন আক্ষেপের স্বরে বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের একটি স্বপ্ন ছিল নয়ানগর ইছামতি নদীতে একটি সেতু হবে। নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিরা শত আশ্বাস দিলেও নির্বাচনের পর তা কথার মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকে। আমাদের স্বপ্ন যেন স্বপ্নই থাকে, বাস্তবায়ন আর হয় না। আর কবে হবে সেতু?
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী তরুণ কুমার বৈদ্য বলেন, সাঁকোটির ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছি। সেখানে একটি সেতু নিমাণের প্রস্তাবনা আছে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.