ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা রাজিব শরীফ ঢাকার দোহার উপজেলার সবার পরিচিত মুখ। নিজের মেধা ও মানবিকতা দিয়ে অনেকেরই মন জয় করেছেন। কথাও বলেন খুব সাবলীলভাবে। বয়সে তরুণ হলেও রাজনীতির বাইরেও অন্য শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে রয়েছে তার সুসর্ম্পক।
রাজনীতির পরিচয়ের পাশাপাশি রাজিব শরীফের কৃষিকাজে রয়েছে দক্ষতা। রাজিব শরীফকে রাজনীতির পরিচয়ে চিনলেও কৃষির সাথে রয়েছে নিবিড় সর্ম্পক সে ব্যাপারে অনেকেরই হয়তো ধারনা নেই। তাই আজ জানানো রাজিব শরীফের কৃষিকাজের সাথে সময় কাটানোর কথা।
উপজেলার কাটাখালীর নিজ বাড়ির পাশেই রয়েছে নিজস্ব ফসলি বাগান। আর এখানেই ফল ফসলের সাথে কাটে দিনের অধিকাংশ সময়। পূর্ব পুরুষের আমল থেকেই এই ফসলি জমিতে উৎপাদিত হয়ে আসছে হরেকরকম সবজি। এই এলাকার মানুষ আগে থেকেই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। কেউ কৃষি কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন আবার কেউ অল্প পরিসরে হলেও নিজেদের জন্য সবজি উৎপাদন করে থাকেন সারাবছর। যে কারনে এই এলাকার মানুষের বাজার থেকে শাকসবজি কিনে খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। সেই ভাবনা থেকে বিষমুক্ত সবজির উৎপাদন করে আসছেন। ভালো ফলন পাওয়ার জন্য প্রযুক্তির সঙ্গে কৃষি কাজ করে লাভবান হচ্ছেন তিনি। নিজের খাওয়ার পাশাপাশি আত্মীয় স্বজনদের দেওয়ার পর যা থাকে তা বিক্রি করে দেন। কখনো দাম ভালো পান, আবার কখনো উৎপাদন খরচও উঠে না। তবে এ নিয়ে তিনি ভাবেন না। নিজের হাতে ফসল উৎপাদন করার আনন্দই অন্যরকম বলে জানান তিনি। বীজ বপন করা থেকে ফসল আসা পর্যন্ত এই যে সময়টা এটা খুবই মধুর। ফসল ফলানোর জন্য জমিতে কষ্ট যে সময় ব্যয় করি গাছে ফলন আর পর সত্যিকার অর্থে মনটা ভরে যায়, যা ভাষায় বুঝানো সম্ভব নয়!
বিষাক্ত সবজিতে যখন বাজার সয়লাব তখন বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করাটা স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খুবই জরুরী। তাই নিজেদের স্বাস্থ্য সচেতনেতা থেকে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন শুরু থেকেই।
অন্যসময়ে রাজনীতি নিয়ে ব্যস্থ সময় পার করায় ইচ্ছা থাকা সত্বেও কৃষিকাজে যথেষ্ট সময় দিতে পারতেন না। করোনা পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক প্রোগামগুলো না হওয়ায় এই সময়টা কৃষিকাজে ব্যয় করছেন। নিজের মেধা খাঁটিয়ে মাটিতে সোনার ফসল ফলাচ্ছেন কৃষি জমিতে। তার দেখাদেখি এলাকায় অন্যরা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। সঠিক বীজ রোপন, ভাল বীজ সংগ্রহ, মাটির গুনাগুন পরীক্ষা, আগাছা পরিস্কার করা, গাছের সঠিক পরিচর্যা, রোগ নির্ণয়, পোকা দমন, সার প্রয়োগ ইত্যাদি কাজগুলো রাজিব শরীফ নিজেই করে থাকেন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ থাকা দরকার তা কৃষি অফিস থেকে গ্রহণ করেছেন, যার কারনে ফসলি গাছের কোন সমস্যা হলে নিজেই তা সমাধান করতে পারেন।
বাণিজ্যিকভাবে যারা চাষাবাদ করেন তারা বাড়তি ফলন পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত মাত্রায় সারায়নিক সার ও পোকা দমনের জন্য কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকেন। যা মানবদেহের জন্য খুবই ঝুকিপূর্ণ। কিন্তু রাসায়নিক সার ও কেমিক্যাল ব্যবহার না করেও জৈবিক পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।
বর্তমানে রাজিব শরীফের সবজি বাগানে উৎপাদিত হচেছ বেগুন , কাঁচামরিচ, ঝিঙে, ধুন্দল, শশা, চিচিংগা, কুমড়া, চালকুমড়া, পেঁপে , ডাটা, ঢেঁড়স, করল্লা, লুববা পুতিনাসহ নানা ধরনের সবজির চাষ হয়েছে। শীতকালে উৎপাদীত হয়ে থাকে শীতকালীন সবজি। ভালো জাতের সবজি হওয়ার ফলন বেশ হয়েছে এবার। আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় এখন মাঁচা ভরা সবজি শোভা পাচ্ছে। এছাড়া বাগানে রয়েছে সুস্বাদু কলা, লেবু, আম,লিচু, ডালিম, ট্যাং ফলসহ নানা প্রজাতির ফলের গাছ। সব গাছেই ঝুলছে কাঁচাপাকা ফল। যা দেখলে জিভে জল এসে যাবে, না খাওয়া পর্যন্ত লোভ সামলানোটা একটি কঠিনই বটে। তাই আপনিও ঘুরে আসতে পারেন রাজিব শরীফের সবজি বাগান থেকে। বাগান ঘুরে দেখলে দেহ মন দুটোই সতেজ হবে।
এ ব্যাপারে রাজিব শরীফ বলেন, বর্তমানে প্রযুক্তির সাথে কৃষিকাজ করতে হবে, তাহলে কৃষক লাভবান হতে পারবে। অন্যথায় এলোমেলো কৃষিতে সারাবছরই ভর্তুকি গুনতে হবে। বিষমুক্ত সবজি ফলমুল খেতে চাইতে সামান্যই পরিশ্রমেই সবকিছুই বাড়িতে উৎপাদন করে খাওয়া সম্ভব।
দোহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মামুন ইয়াকুব বলেন, রাজীব শরীফের মতো কৃষিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের পাশে থাকবে কৃষি অফিস। তাদের যে কোন সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.