ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ও অন্যান্য দলগুলো অংশ না নেয়ায় সকল প্রার্থী আওয়ামীলীগের হওয়ায় এবার আওয়ামীলীগ বনাম আওয়ামীলীগ লড়াই চলছে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ২২৫টি কেন্দ্রে বুধবার সকাল ৮টা থেকে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এ উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৬ লাখ ৪ হাজার ৯২৯ জন।
ইতোমধ্যে ব্যস্ত সময় পার করেছেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া সাত প্রার্থী। এরা সকলেই আওয়ীলীগের।
এরা হলেন- কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে টানা তিনবারের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ আনারস প্রতীক এবং মডেল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত নেতা আলতাফ হোসেন বিপ্লব কাপ-পিরিচ প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাইক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন- দক্ষিণ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও শাক্তা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন লিটন, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের আহ্বায়ক মনির হোসেন তালা প্রতীক এবং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহেদ ইকবাল টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
এছাড়াও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি আসমা আক্তার কলস প্রতীক এবং মডেল থানা যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি শান্তি আক্তার সেলাই মেশিন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চেয়ারম্যান দুই প্রার্থী স্থানীয় আওয়ামীলীগের যেমন পদধারী তেমনি তাদের মাথার প্রচ্ছন্ন ছায়া হয়ে আছেন ঢাকা-২ ও ৩ আসনের এমপি এবং এ এলাকার কেন্দ্রীয় দুই নেতা কামরুল ইসলাম ও নসরুল হামিদ বিপু। তাই এ উপজেলায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ভোটার বলেন, এবারের কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সাত প্রার্থীই আওয়ামীলীগের। এ জন্য প্রার্থীদের মধ্য নির্বাচনের আমেজ থাকলেও সাধরণ ভোটারদের মধ্যে আমেজ নেই। ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যাবেন কিনা এই নিয়েও সন্ধিহান তারা।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মাহমুদুল আলম বলেন, এই কেরানীগঞ্জের যিনি এমপি মাননীয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জননেতা নসরুল হামিদ বিপু কেরানীগঞ্জের তিনজন লোককে বেছে দিয়েছেন। তারা হলেন- কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে টানা তিনবারের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দক্ষিণ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও শাক্তা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন লিটন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের আহবায়িকা। কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানা ও মডেল থানা একটি থানাই ছিল। কেরানীগঞ্জের আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সকল সংগঠনকে কিন্তু বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী একাই সাজিয়েছিল। তাই আমি মনে করি আমাদের সকলের উচিত বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী যাদের বেছে দিয়েছেন তাদের সমর্থন করে নির্বাচিত করা।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ম ই মামুন বলেন, জনসমর্থন আছে বলেই তো কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে টানা তিনবারের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন শাহীন আহমেদ। তিনি কেরানীগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। আশা করি এবারও জনগন তাকে হতাশ করবে না। ভোট দিয়ে তাকে জয়যুক্ত করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সহযোগীতা করবে।
আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন আহমেদ বলেন, ভোটাররা যদি প্রার্থীর যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা বিশ্লেষণ করে তাহলে অবশ্যই ভালো প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে আসবে। আমি মনে করি দল মত নির্বিশেষে যার জনপ্রিয়তা আছে, মানুষের সঙ্গে যার যোগাযোগ আছে, তৃণমূলের সঙ্গে যার যোগাযোগ আছে, প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে যার প্রতিনিয়ত যোগাযোগ আছে কেরানীগঞ্জের মানুষ সেই ধরনের প্রার্থীকেই নির্বাচিত করবে। আমি বিগত ১৫ বছর কেরানীগঞ্জের মানুষকে সেবা দিয়ে আসছি। এই সময়ের মধ্যে কেরানীগঞ্জে এমন কোনো এলাকা নেই যে আমি উন্নয়ন করিনি। এবার আমি নির্বাচিত হলে কেরানীগঞ্জ বাসীকে আমি একটি পরিকল্পিত নগরায়ন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কেরানীগঞ্জ উপহার দেওয়ার জন্য সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করবো। তাই আমি আশাকরি কেরানীগঞ্জের মানুষ এবারও আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করবে।
কাপ-পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলতাফ হোসেন বিপ্লব বলেন, কেরানীগঞ্জের মানুষ পরিবর্তন চায়। তাই তারা পরিবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে। সুষ্ঠু ভোট হলে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
ঢাকা জেলা নির্বাচন ও রির্টানিং কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ২২৫টি কেন্দ্রে বুধবার সকাল ৮টা থেকে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিরতিহীনভাবে এ ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। আমরা কেরানীগঞ্জের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি। এ জন্য সব ধরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখানে অবৈধভাবে সিল মেরে ভোট নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.