করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে দ্বিতীয় দফার ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের চলছে। লকডাউন বাস্তবায়নে সারা দেশের মতো দোহার ও নবাবগঞ্জেও কঠোর অবস্থানে প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত কাজ করছেন। অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলেই করা হচ্ছে জরিমানা।
তবে কঠোর লকডাউনে বিপাকে পড়েছেন দুই উপজেলার দিনমজুর ও নিন্ম আয়ের মানুষ। বিগত বছর লকডাউনে সরকারি সহায়তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও ব্যাক্তি উদ্যোগে অসহায় মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। করোনা প্রতিরোধক সামগ্রী মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন। কিন্তু এবার কারো তৎপরতা নেই খুব একটা। এমনকি মানুষকে সচেতন করতেও নেই কোনো বেসরকারি উদ্যোগ। লকডাউন বাস্তবায়নে শুধু উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তৎপর। অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে পরিস্থিতি সামাল দিতে। তবে এবার দোহার ও নবাবগঞ্জে এখন পর্যন্ত একমাত্র স্বেচ্ছাসেবকলীগের পক্ষ থেকে কর্মহীনদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ। করোনা প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবকলীগের পক্ষ থেকে সুরক্ষা বুথ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান স্বাস্থ্য উপকরণ বিতরণ করছেন। পাশাপাশি দুই একটি সামাজিক সংগঠন ছাড়া এবার অসহায়দের পাশে নেই কেউ। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হচ্ছেন নিম্ম আয়ের মানুষেরা।
নি¤œ আয়ের এসব মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, টানা দুই সপ্তাহের এ লকডাউনে বিপাকে পড়েছেন তারা। অনেকের ঘরে নেই তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে বেশির ভাগ পরিবার। ফলে বাধ্য হয়েই বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে যেতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও বাধ্য হয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সাটার নামিয়ে ব্যবসা করছেন।
গত বছরের লকডাউনে দুই উপজেলার ইউপি নির্বাচনের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদপ্রার্থীরা খাদ্য সামগ্রী নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তালিকা করে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। মানুষকে সহায়তা দিয়েছেন। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও খাদ্য ও করোনা প্রতিষেধক সামগ্রী নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এবছর কারও তৎপরতা নেই। যা আছে তাও নামমাত্র। সরকারি ত্রাণও সে রকম দেয়া হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে বিধি নিষেধ অমান্য করে মানুষজন সড়কে বের হচ্ছে।
গালিমপুর এলাকার রাসেল বলেন, “এই করোনার মধ্যে আমরা ঘর থেকে বাইর না হইলে খামু কি? না খাইয়া মরতে হইবে। আমরা দিন মজুরের কাজ করি। যা ছিল তাই দিয়ে এক সপ্তাহ পরিবার নিয়ে কোন রকমের ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে ছিলাম। এখন তো ঘরে চালও নেই। সামনে কিভাবে চলবো। এবার কেউ তো সহযোগিতা করলো না। তার মধ্যে আবার ঈদ এসে পড়েছে।
শিকারীপাড়ার ইজিবাইজ চালক হাবিব বলেন, বাধ্য হয়ে আজ ৮দিন পর ইজিবাইক নিয়ে বাইরে আইছি। ঘরে খাবার নাই। শুনলাম নির্বাচন বন্ধ, তাই এখন আর কেউ সহায়তা নিয়ে বাড়ি আহে না। গত বছর অনেকে চাল, ডাল দিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, সরকারকে ঘোষণা দিতে বলেন ২ মাস পর নির্বাচন। দেখবেন কোন অসহায় পরিবার আর না খেয়ে থাকবে না। প্রার্থীরা খাদ্য নিয়ে রাইত্তের বেলা আইসা পরবো। সবই লোক দেখানো জনসেবা।
বান্দুরা এলাকার চা বিক্রেতা মামুন বলেন, ছোট্ট একটা চায়ের দোকান দিয়ে অভাবে মধ্যদিয়েই সংসার চালাই। দোকানটা এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ। ঘরের খাবার নেই আবার প্রশাসনের ভয়ে দোকানও খুলতে পারছি না। এবার তো কেউ সাহায্য নিয়ে পাশে দাঁড়ালো না। জানি না সামনের দিনগুলো কিভাবে পার করবো।
সুশীল সমাজের একাধিক প্রতিনিধিরা বলেন, লকডাউনে সাধারন মানুষকে কি শুধু সরকারই সহযোগীতা করবে আর কারো কোন দায়িত্ব নেই? অনেক বিত্তবানরা নির্বাচনের জন্য লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেন কিন্তু দেশের এই মহামারীর মধ্যে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হাতে গোনা কয়েকজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়, সরকারের পাশাপাশি যদি সবাই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলে আমাদের দেশে লকডাউন কোন মানুষকে না খেয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হবে না। আর ঘরে খাবার থাকলে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিশ্চয়ই বাহিরে বের হবে না। তাই আগে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে প্রকৃত পক্ষে লকডাউনের শতভাগ সুফল পাওয়া যাবে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.