PRIYOBANGLANEWS24
৮ জুলাই ২০২১, ১২:৩৭ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

১৫ বছর ঝুপড়িতে বাস, তবুও মেলেনি ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর’

কখনো কারো বাড়িতে, কখনোবা বাজারের কোনো দোকানে ছুটে চলা হারুনের। দিনভর তাঁর এই ছুটোছুটি সামান্য টাকা বা একটু খাবারের আশায়। কিছুটা মানসিক সমস্যা থাকায় এলাকায় তাকে সবাই চেনে ‘হারুন পাগলা’ নামে। ১৫ বছর ধরে স্ত্রী ও কিশোরী মেয়েকে নিয়ে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ইছামতি নদীপারের নির্জন ঝোপে ভাঙাচোরা একটি ঝুপড়িতে বাস।

হারুনের দাবি, একটি ঘরের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ঘুরেছেন অনেকের কাছে তবুও মেলেনি কাঙ্খিত একটি ঘর। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের জমিসহ ঘরের জন্য বলেও সেখানে মেলেনি সুফল।

এলাকাবাসী জানান, হারুন উপজেলার আগলা খাঁনহাটি গ্রামের মৃত কায়েম ও ছালেহা দম্পতির ছোট ছেলে। তার মানসিক সমস্যা থাকায় আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা তাকে ‘পাগলা হারুন’ নামে চেনেন। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর ভিটেমাটি বিক্রি করে টাকা তার বড় ভাই নিয়ে চলে গেছেন। তারপর থেকে হতদরিদ্র হারুন মানুষের কাছে চেয়ে খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাধ্য হয়ে উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের আগলা ব্রীজের পূর্ব পাশের নদীর তীরের ঝোপে একটি ঝুপড়িতে স্ত্রী আছমা আক্তার ও ১২ বছরের কিশোরি মেয়ে সম্পাকে নিয়ে থাকেন হারুন। দিন কোনরকমে কাটলে রাতে কিশোরী মেয়েটিকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে রাত কাটান পরিবারটি। হারুনের স্ত্রী আছমাও কিছুটা মানসিক সমস্যায় ভুগেন।

সরেজমিনে গ্রামটিতে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা মন্টু মিয়া ও ব্যবসায়ী মো. আলাউদ্দিন সহ বেশ কয়েজনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, হারুন অত্যন্ত অসহায় ও নিরীহ মানুষ। লোক হিসেবেও ভালো। আমরা তার খারাপ কিছু কখনও দেখিনি। ভিক্ষাবৃত্তি ও মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে টাকা ও খাবার সংগ্রহ করাই তার কাজ। তার কিছুটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। কথা এলোমেলো বলেন। তার স্ত্রীরও একই অবস্থা। মেয়েটিও দিন দিন বড় হচ্ছে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তাদের মেয়ে পড়ালেখা করতে না পেরে অসুস্থ মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করেন। দীর্ঘ প্রায় পনেরো বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা ওই ঝোপে ভয়ের মধ্যে থেকে খুব দুঃখ কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারা যদি সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগীতা বা নিরাপদ বাসস্থান পায় তাহলে আমরা স্থানীয়রা খুবই খুশি হবো।

হারুন পাগলার সঙ্গে কথা বলতে ওই ঝোপের বাড়িতে ঢুকতেই গা ছমছম করার মতো অবস্থা। ভাঙাচোরা ঝুপড়িতে পাওয়া গেলো হারুনকে। তিনি বলেন, বাবা-মা মইরা যাওয়ার পর আমাগো আগলা খাঁনহাঁটির গ্রামের বাড়ির বাবার জমি আমার বড় ভাই বারেক ও আমি মিলে বেইচা দেই। কিন্তু আমার ভাই প্রতারণা করে জমি বেচার সব টেকা নিয়ে পলাইয়া যায়। পরে আর তারে পাই নাই। তারপর কোমরগঞ্জের একটি সরকারি জায়গায় ব্যানার দিয়া ‘ছাপড়া’ বানাইয়া থাকছি দশবছর। সেইখানে আমার ছোট্ট পুলাটারে শিয়ালে কামড় দেয়। তারপর সে মইরা যায়। ওইখান থেকে চেয়ারম্যান আমাকে উঠায় দিলে আমি আগলা দক্ষিণ চৌকিঘাটা গ্রামের ইসতিয়াক ভাইয়ের লগে কথা কইয়া তাঁর ঝোপের জায়গায় পলিথিন আর বেড়া দিয়ে এই ঘরটায় থাহি।

হারুন বলেন, “আমি একটা ঘর চাইতে বহুবার চেয়ারম্যান-মেম্বরের কাছে গেছি। কেউ দেয় নাই। হুনছি আমাগো প্রধানমন্ত্রী জমির লগে ঘর দিতাছে, হেই ঘরও চাইছি পাই নাই।”

একথা বলেই ঘর থেকে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নিয়ে এসে তা দেখিয়ে হারুন কেঁদে কেঁদে আরও বলেন, আমি এতিম। আমার কেউ নাই। আমার জায়গা নাই, ঘর নাই কিছইু নাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে থাকবার একটা ঘর চাই, আপনে আমারে দয়া করেন।

এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় সিকিম আলী মেম্বারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হারুনকে আমি বহুবার ঘর ও ভাতার জন্য আইডি কার্ড দিয়ে একটা আবেদন করতে বলেছি। এমনকি আবেদন লিখার জন্য একটি দোকানও দেখিয়ে দিয়েছি। তারপর না পারলে বলেছি আমার কাছে আসতে। কিন্তু সে কিছুই করেননি। এছাড়াও হারুনের মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করে দিতে চিয়েছি। তাতেও তিনি রাজি হয়নি। হারুন পাগলা এ রকম করলে আমি কি করবো আপনারাই বলেন।

নবাবগঞ্জের বাহ্রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাফিল উদ্দিন মিয়া বলেন, এর আগে হারুনকে একটি ঘর দেয়া হয়েছিল। তখন এক ব্যক্তি ঘরটি তোলার জন্য তাকে একটি জমি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু জমিটি না দেয়ায় ওই ঘরটি আর দেয়া সম্ভব হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের জমিসহ একটি ঘর হারুনকে দেয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করব।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ভাতা পাওয়ার জন্য হারুন আমাদের কাছে আবেদন করলে তাদের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম সালাউদ্দিন মনজু বলেন, হারুনের বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। আপনার কাছ থেকে জানলাম। পরিবারটি যদি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বা স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের মাধ্যমে বা যে কোনো মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমার কাছে জমা দেয় তাহলে সেগুলো যাচাই বাছাই করার পর ওই পরিবারটি যে সকল সরকারি সাহায্য সহযোগীতার পাওয়ার যোগ্য তার ব্যবস্থা অবশ্যই করা হবে।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে: আমানউল্লাহ আমান

নবাবগঞ্জে বিএনপির একাংশের ত্যাগী নেতাদের মতবিনিময় সভা

৫ শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

ফেসবুকে অপপ্রচারের প্রতিবাদে নুরনগর মীরেরডাঙ্গী এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন

নবাবগঞ্জে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব ব্যবসায়ী হাবিবুর

নবাবগঞ্জে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন

নবাবগঞ্জে কাবাডি প্রতিযোগিতায় বারুয়াখালীকে হারিয়ে চূড়াইন তারিনীবামা চ্যাম্পিয়ন

আ.লীগ নেতার সাথে ছবি ভাইরাল করার অভিযোগে নবাবগঞ্জে প্রবাসীকে কুপিয়ে জখম

দোহার ব্যারিস্টার নজরুল ইসলামের নির্বাচনী উঠান বৈঠক

নবাবগঞ্জে ইয়ুথ ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১০

দোহারে চালু হলো সরকারি অনুমোদিত ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র

১১

নবাবগঞ্জে শরৎকালীন নাড়ু উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

১২

নবাবগঞ্জ উপজেলা এসএসসি ৮৭ কমিটি গঠন: সভাপতি খন্দকার সবুজ, সম্পাদক মিলন

১৩

নবাবগঞ্জে কোরআন অবমাননাকারীর ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

১৪

নবাবগঞ্জে বন্ধুর স্মরণে বন্ধুদের স্মরণ সভা

১৫

নবাবগঞ্জে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা

১৬

নবাবগঞ্জে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত

১৭

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা নুরুল ইসলামের গণসংযোগ

১৮

নবাবগঞ্জে ৪ দফা দাবীতে ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকদের মানববন্ধন

১৯

নবাবগঞ্জে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা

২০