ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা ইউনিয়নের পুরাতন বান্দুরা গ্রামের জাহিদ হাসান (২১)। গত ১২ মার্চ শুক্রবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে জাহিদ ও তার বন্ধুদের উপর অতর্কিত হামলা করেন প্রতিপক্ষ। প্রতিপক্ষের হামলায় জাহিদ, তার বন্ধু নাঈম, সামিন সহ আরো কয়েকজন আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে মারা যায় জাহিদ। তুচ্ছ একটি ঘটনায় একদল বখাটে জাহিদকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পরিবার ও এলাকাবাসীর। এঘটনায় নবাবগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও জাহিদের পরিবার জানান, প্রায় ১ মাস আগে পুরাতন বান্দুরার জুনিয়র দুই গ্রুপের মধ্যে তুচ্ছ একটি ঘটনা নিয়ে বাকবিতন্ড হয়। ঐ সময়ই স্থানীয়রা ব্যাপারটি মিমাংসা করে দেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাহিদ তার বন্ধুদের নিয়ে স্থানীয় একটি ওয়াজে যান। এসময় জাহিদদের সাথে জুনিয়র গ্রুপের কয়েকজন সদস্যও ছিলেন। এসময় পূর্ব শত্রুতার জেরে বান্দুরা হলিক্রশ স্কুল এন্ড কলেজের পিছনের রাস্তায় জাহিদদের উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা করেন একই এলাকার সাব্বির, হৃদয়, রোমান, শাহিন, ফাহাদ, মিলন, ইসান, সাব্বির, নাহিদসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জন। বখাটেদের হামলা জাহিদ, নাঈম ও সামিন সহ আরো কয়েকজন আহত হন। গুরুত্বর আহত জাহিদ ও নাঈমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেলে হস্তান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল ৮টায় মারা যায় জাহিদ। ময়নাতদন্তের শেষে মঙ্গলবার বিকেলে পুরাতন বান্দুরা সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এঘটনার পর অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছেন।
বুধবার জাহিদদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বসে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বিলাপ করছেন মা ঝিলু বেগম। ছেলে হারানোর শোকে ঠিকমত কথাও বলতে পারছেন না। অন্যদিকে আদরের সন্তানকে হারিয়ে অসুস্থ হয়ে ভাঙা ঘরে শয্যাসায়ী বয়স্ক পিতা আফছার উদ্দিন। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে বোন আফরোজা আক্তারও।
জাহিদের বোন আফরোজা আক্তার বলেন, বাবা বয়স্ক, কাজ করতে পারেন না। জাহিদ ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। এখন ইলেকট্রিকের কাজ করেন। আমি একটি কিন্ডারগার্টেনে চাকুরি করে কোন মতে সংসার চালাচ্ছি। আমাদের আদরের জাহিদকে বিনা অপরাধে এভাবে মরতে হবে ভাবতে পারছি না। আমরা আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।
সন্তান হারিয়ে জাহিদের বাবা ও মা কোন কথা বলতে পারছেন না। তারা শুধু সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এঘটনায় জাহিদের বাবা আফছারউদ্দিন বাদি হয়ে সাব্বির, হৃদয়, রোমান, শাহিন, ফাহাদ, মিলন, ইমান, সাব্বির, নাহিদসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানান।
বুধবার সকালে নিহত জাহিদের পরিবারকে দেখতে আসেন বান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিল্লাল মিয়া। এসময় তিনি নিহতের পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং সমবেদনা জানান। সেই সাথে হত্যার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এলাকাবাসী জানান, জাহিদ হত্যার সাথে যারা জড়িত তারা সবাই কিশোর। কিশোররা এভাবে অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া চিন্তিত তারা। দ্রুত এদেরকে আইনের আওত্বায় আনার দাবি জানান তারা।
এব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নবাবগঞ্জ থানার এসআই লিয়াকত হোসেন জানান, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। সেই সাথে আসামীদের ধরার জন্য পুলিশের অভিযান চলছে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.