প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায় হওয়ায় ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় করোনা ভাইরাস নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে ক্রমেই। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রাতদিন মাঠে কাজ করছেন উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া সব ধরনের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রবিবার (২২ মার্চ) নবাবগঞ্জে ২৫০ জন ও দোহারে ৫৬ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিল। খুব একটা প্রয়োজন ছাড়ায় ছাড়া সারাদিন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে অনেকে যখন বাড়িতে থাকার কথা চিন্তা করছে, ঠিক তখনই ক্ষুদ্রঋণের কিস্তির কথা মনে করে মাথা ঘুরছে দুই উপজেলার দরিদ্র মানুষের।
ইতোমধ্যে দুই উপজেলার হোটেল, রেস্টুরেন্ট, চা দোকান বন্ধ করে দেওয়া বেকার জীবন যাপন করছে সেখানে কর্মরত কর্মচারীরা। কর্মজীবী মানুষ বাইরে বের হলেও তাদের চোখমুখে আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অটোরিকশার চালকরা যাত্রী পাচ্ছেন না। কাজ না পেয়ে বসে বসে সময় কাটছে দিনমজুরদের। বাজারেও জনসমাগম অনেকটা কমে এসেছে।
তবে দুই উপজেলার দরিদ্র মানুষের কাছে করোনার পাশাপাশি আরেক আতঙ্কের নাম এনজিও। করোনা আতঙ্কে মানুষ ঘরবন্দি হলেও তাদের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায় বন্ধ করেনি এনজিওগুলো।
একাধিক ঋণগ্রহীতারা জানান, করোনা আতংকিত হয়ে কাজ না থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে এসব মানুষের। এরপরও এনজিওগুলো আমাদের কোনো সাহায্য সহযোগিতা না করে উল্টো কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। এসব মানুষের মধ্যে আছে দিন মুজুর, রিকশাচালক , অটো চালক, ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী।
নবাবগঞ্জের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাভেদ মিয়া জানান, আমার নিজের কোনো টাকা নেই। একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দোকান করি। ঘরে থাকতে হলে তো দোকান বন্ধ রাখতে হবে। তখন ঋণের কিস্তি শোধ করবো কিভাবে?
হোটেল শ্রমিক আলামিন, রাহুল ও সাব্বির বলেন, কাজ করলে আমাদের পেটে ভাত জোটে আর না করলে পরিবার সহ না খেয়ে থাকতে হয়। হোটেল বন্ধ থাকলে আমরা কিভাবে চলব। এর ওপর কমবেশি কিস্তি আছে সবার। আবার এই আতঙ্কের মধ্যে হোটেলও খোলা রাখা সম্ভব নয়। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ ভাইরাস যতদিন না যায় ততদিন অন্তত আমাদের কিস্তিটা বন্ধ রাখুন। একদিকে করোনার আতঙ্ক তার ওপর কিস্তির চাপে দিশেহারা হয়ে পড়বে মানুষ।
নতুন বান্দুরা বাজারের চা বিক্রেতা মামুন বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন দোকানে ভিড় থাকে। কয়েকদিন ধরে রাস্তায় মানুষ খুব কম। তাই বিক্রিও কমেছিল। এই দোকানের আয় থেকে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। পাশাপাশি দোকান চালানোর জন্য দুটি সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছি। দোকানের আয় থেকেই কিস্তি দুটো চালাতাম। এখন তো চা’র দোকানও বন্ধ। এই সপ্তাহ কিস্তি দিব কিভাবে চিন্তায় আছি।
তবে বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন, দেশের এই সংকটের সময়ে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি উত্তোলন বন্ধ করা হোক। না হয় মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আরও অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে প্রান্তিক জনজীবন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মাঠ পর্যায়ের এনজিও কর্মী জানান, ঋণ বিতরণ করার পর উত্তোলন করার দায়িত্ব তাদের। কেউ কিস্তি না দিলে পকেট থেকে টাকা অফিসকে দিতে হয়। সরকার কিস্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত দিলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। অফিস আমাদের যে নির্দেশনা দিবে আমরা তাই পালন করব।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.