PRIYOBANGLANEWS24
১৯ জুলাই ২০২২, ৫:৩৮ পূর্বাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

২০০ বছরের ঐতিহ্য নবাবগঞ্জের ‘খেলারাম দাতার কোঠা’

ঢাকার অদূরেই ১৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে গড়ে ওঠা নবাবগঞ্জ উপজেলা। ভ্রমণ বা পর্যটকদের জন্য অনেক আকর্ষণীয় একটি স্থান এ উপজেলা। বিশেষ করে যারা প্রাচীন স্থাপত্য পছন্দ করেন তাদের জন্য নবাবগঞ্জ ভ্রমণ বেশ ভালো একটা সিদ্ধান্ত হতে পারে।

নবাবগঞ্জ এলাকাটি নামকরণ হয়েছে নবাবী আমলেই। জনশ্রুতি আছে, ইছামতী তীর ঘেঁষা এ অঞ্চলটিতে নবাবী আমলে মুর্শিদাবাদ থেকে ঢাকা নৌপথের যোগাযোগ ছিলো। মাঝে মধ্যেই এখানে নবাব তার কর্মচারীদের নিয়ে বিশ্রাম বিরতি দিতেন। ইছামতীর তীরবর্তী এ অঞ্চলে এক পর্যায়ে নবাবের কর্মচারী খাজনা আদায়ের জন্য এ এলাকায় বসবাস করা শুরু করে। ধীরে ধীরে জনবসতি বাড়তে থাকে এবং গড়ে ওঠে স্থাপনা। এভাবে নবাবী আমল থেকে এলাকাটি নবাবগঞ্জ নামে পরিচিতি পায়।

নবাবগঞ্জ পুরানো দিনের স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত। কয়েকশ বছরের পুরানো নবাবগঞ্জের দালানগুলোর প্রত্মতাত্তি¡ক গুরুত্ব অনেক। এই দালানগুলোর মধ্যে খেলারাম দাতার কোঠা ভীষণভাবে জনপ্রিয়, স্থানীয়ভাবে যা আন্ধার কোঠা নামে পরিচিত। এই দালানটি কখন তৈরি হয় তার সঠিক সময় কারো জানা নেই। স্থানীয়দের কাছে আন্ধার কোঠা নামে পরিচিত হওয়ার কারণ হলো, বাড়িটির ভেতরে ভয়াবহ রকমের অন্ধকার। সূর্যালোকও যেন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে না।

ধারণা করা হয়, ২ তলা বিশিষ্ট দালানটির কিছু অংশ মাটির নিচেও ডেবে আছে। জনশ্রুতি রয়েছে, বাড়ির ভেতরে অনুসন্ধানে গিয়ে কয়েকজন মানুষ আর ফিরে আসেনি। এর পেছনে কার্যকরণ কী তা কেউই জানে না। বর্তমানে দুই তলা দালানটির সবার উপরের তলায় আছে ৫-৬টি মাঝারি ধরনের মঠ এবং একটি বিশাল ও সুউচ্চ মঠ। প্রত্যেকটি মঠেই অসাধারণ কারুকার্য রয়েছে।

আন্ধার কোঠা জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক এক মিথ। ঢাকা জেলার দক্ষিণের এক মহকুমায় জন্মেছিলেন খেলারাম। বণিক পরিবারের এই সন্তানকেই নিয়েই আন্ধার কোঠার সবচেয়ে প্রচলিত মিথ। খেলারাম শৈশবে ছিলেন দারুণ চঞ্চল ও সাহসী। বাড়ির পাশে প্রমত্তা পদ্মার শাখা নদী ইছামতি। কিশোর মন নদীর ঢেউ দেখে চঞ্চল হয়। তার ইচ্ছে হয় নৌকায় চেপে সে যদি নদীর জলে ভেসে বেড়াতে পারতো। পিতৃহীন খেলারামের এই অন্যমনস্কতা মায়ের চোখ এড়িয়ে যায়নি। তিনি পুত্রকে জিজ্ঞেস করলেন, নদীর দিকে তাকিয়ে কি দেখিস এতো? খেলারাম দার্শনিকদের মতো জবাব দেয়, আমার শুধু ভাবনা এই নদীর শেষ কোথায়! নদী, জল, সমুদ্রের প্রতি খেলারামের এই আকুলতা বয়স সাথে সাথেই শেষ হয়নি, বরং আরো বেড়েছে। ইতিমধ্যে সকলেই কিছু না কিছু কাজকর্মের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে। খেলারাম সেসবের দ্বার মাড়ায়নি। সে কেবল শুনে যাচ্ছে নদীর ডাক ৷
এরপর মনের কথা একদিন মাকে বলেই ফেললো খেলারাম। সে ভাবছিলো, মা হয়ত যেতে দেবেন না। একমাত্র সন্তানকে কেউ জলে ভাসার অনুমতি দেয় না। কিন্তু খেলারামের মা অন্য এক বাঁধার কথা শোনালেন। বললেন, আগে অনেকেই পদ্মার বুকে ভেসে বেড়াতো, দূরের বন্দরে বাণিজ্যে যেতো। এখন সেইসব দিন তো নেই। খেলারাম জানতে চাইলো, কেনো নেই? মা বললেন, রাজা শশাঙ্ক ‘গৌড় আইন’ করে মানুষের সমুদ্রে যাওয়া নিষেধ করে দিয়েছিলেন৷ আর কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে তাকে জাতে পতিত করা হতো ৷ কপালে জুটত মেথর কিংবা অন্য কোন ছোট মাপের চাকরি ৷ রাজার এই নিষ্ঠুরতার কারণে বন্ধ হয়ে যায় সব সওদাগরি ব্যবসা ৷

খেলারাম তরুণ, যৌবনের এই সময়ে নিয়মের কথা শুনলে ভাঙতে ইচ্ছা হবেই ৷ সে বললো, রাজা শশাঙ্ক এখন বেঁচে নেই। আমি সমুদ্রযাত্রায় গিয়ে তার করে যাওয়া নিয়ম ভাঙ্গবো। তুমি অনুমতি দাও। খেলারামের মা সত্যি সত্যি অনুমতি দিয়ে দিলেন। মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে খেলারাম বাণিজ্যের সদায় নিয়ে ডিঙ্গায় করে গেলেন মালয় উপদ্বীপে।

খুব ভালো মুনাফা হল তার। অনেকদিন বাদে যখন খেলারাম বাড়ি ফিরেন তখন তার মা বলেন, যা পেয়েছিস তার একভাগ গরীবদের দান কর। খেলারাম মায়ের আদেশ পালন করেন। ফলে চারদিকে তার নাম ছড়িয়ে যায় দাতা হিসেবে। সে হয়ে উঠে খেলারাম দাতা। তার দেখাদেখি আরো অনেকে রাজার নিয়ম ভেঙ্গে বাণিজ্যে নেমে পড়ে। এদিকে দিন দিন বাণিজ্যের টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় খেলারাম সেই অর্থ দিয়ে গড়ে তোলে বিশাল এক প্রাসাদ। কেউ কেউ বলে, এই প্রাসাদের সাথে ইছামতি নদীর পাড় পর্যন্ত সুড়ঙ্গপথ করেছিলেন খেলারাম। নদীপথে ধনসম্পদ এনে এ সুড়ঙ্গ পথেই বাড়িতে নিয়ে আসত খেলারাম দাতা। দোতলা বাড়ির নিচতলায় এখনও সুড়ঙ্গ পথের অস্তিত্ব পাওয়া যায় বলে ধারণা করা হয়।

যাই হোক, এক সকালে খেলারাম ঘুম থেকে উঠছিল না। যদিও তাকে দেখে মনে হয়নি শরীর খারাপ, মা তাকে ডাক দিয়ে বললেন, যা পুকুরে ডুব দিয়ে আয়, আমি তোর জন্যে কত পিঠা বানিয়েছি। খেলারাম বাড়ির পাশের পুকুরে গেল। কিন্তু, অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও তার উঠার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি তাকে দেখাও যাচ্ছে না পুকুরে। অনেক সময় কেটে যাওয়ায় পুকুরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন ঝাপ দেয় পুকুরে। তারা খেলারামকে খুঁজে পায়। কিন্তু, ততক্ষণে সে মারা গিয়েছে।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে: আমানউল্লাহ আমান

নবাবগঞ্জে বিএনপির একাংশের ত্যাগী নেতাদের মতবিনিময় সভা

৫ শিশু শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

ফেসবুকে অপপ্রচারের প্রতিবাদে নুরনগর মীরেরডাঙ্গী এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন

নবাবগঞ্জে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব ব্যবসায়ী হাবিবুর

নবাবগঞ্জে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন

নবাবগঞ্জে কাবাডি প্রতিযোগিতায় বারুয়াখালীকে হারিয়ে চূড়াইন তারিনীবামা চ্যাম্পিয়ন

আ.লীগ নেতার সাথে ছবি ভাইরাল করার অভিযোগে নবাবগঞ্জে প্রবাসীকে কুপিয়ে জখম

দোহার ব্যারিস্টার নজরুল ইসলামের নির্বাচনী উঠান বৈঠক

নবাবগঞ্জে ইয়ুথ ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১০

দোহারে চালু হলো সরকারি অনুমোদিত ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র

১১

নবাবগঞ্জে শরৎকালীন নাড়ু উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

১২

নবাবগঞ্জ উপজেলা এসএসসি ৮৭ কমিটি গঠন: সভাপতি খন্দকার সবুজ, সম্পাদক মিলন

১৩

নবাবগঞ্জে কোরআন অবমাননাকারীর ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

১৪

নবাবগঞ্জে বন্ধুর স্মরণে বন্ধুদের স্মরণ সভা

১৫

নবাবগঞ্জে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা

১৬

নবাবগঞ্জে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত

১৭

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা নুরুল ইসলামের গণসংযোগ

১৮

নবাবগঞ্জে ৪ দফা দাবীতে ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকদের মানববন্ধন

১৯

নবাবগঞ্জে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা

২০