কেরানীগঞ্জের করের গাও এলাকায় গাজী মোঃ শহিদুল্লাহ নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা ও ৬ জনকে গুরুত্বর আহত করা হয়েছে। সোমবার রাত ১১ টায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। গুরুত্বর অবস্থ্য়া আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদিকে এঘটনার সাথে জড়িত মূল আসামীকে গ্রেফতার করেছে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনরা জানায়, বেশ কয়েক দিন আগে করের গাও এলাকার ভাই ভাই ইন্টারনেটের মালিক মমিন ও শামীম বকেয়া বিল আদায়ের জন্য নিহতের নাতী মোঃ নাদিম হোসেনের (২২) বাড়ি যায়। নাদিম বকেয়া বিল এখন দিতে পারবে না বলে তাদের দুই দিন পর আসতে বলে। আর এতেই বিরোধ বাধে ইন্টারনেটের মালিক মোমিন ও শামিমের। তখন তারা (ইন্টারনেটের মালিক) নাদিমসহ তার পুরো পরিবারকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ ও হুমকি দেয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় নাদিম তার এক স্বজনকে রক্ত দিতে কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার একটি হাসপাতালে গেলে নাদিম ও শামীমসহ অজ্ঞাত ১৫/২০ জন দুর্বৃত্তরা সেখানে নাদিমকে হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। তখন ভয়ে নাদিম তার নানা বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মোঃ শহিদুল্লাকে ফোন করে। নাতিকে রক্ষার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কয়েক জনকে সাথে নিয়ে সেখানে গেলে মোমিন ও শামিম বাহিনী দাঁড়ালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতারি কোপানো শুরু করে। এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মোঃ শহিদুল্লাহর পেটের বাম পাশে ছুরির আঘাত লাগে। এছাড়াও আরো ৬ জন তখন মোমিন ও শামিম বাহিনীর ছুরির আঘাতে গুরুত্বর আহত হয়। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল্লাহ, আবিদ, সাইফুর রহমান, মাসুম, আসাদুর, আব্দুর নূর সহ বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল্লাহর মৃত্যু হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। এঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল্লাহর স্ত্রী মাজেদা বেগম বাদী হয়ে শনিবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন।
শহিদুল্লাহর ভাতিজা গাজী আমান উল্লাহ জানান, তার চাচা স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু ছুরিকাঘাত ও প্রচন্ড মারধরের কারনে বাড়িতে আসার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সোমবার রাতে তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। পরে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। খবর পেয়ে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়।
নিহতের মেয়ের ফাতেমা জাহান বলেন, আমার বাবা দেশ ও রাষ্ট্র রক্ষার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় আর আজ আমাদের পরিবারের উপর হামলা করে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ মুঠো ফোনে জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল্লাহ সহ কয়েকজনকে মারধর ও ছুরিকাঘাতে আহত করার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় প্রধান আসামীকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা হওয়ার পর যেহেতু বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে, তাই মামলাটিতে অন্যান্য ধারার সঙ্গে খুনের ধারাও যুক্ত হবে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.